গোলাপজল উৎসব
গোলাপজল উৎসব সাধারণত ‘গোলাব-গিরি’ নামে পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে ঘিরে মধ্য ইরানে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব সিস্তান-বেলুচেস্তান প্রদেশের জাবোল কাউন্টির নাহুর গ্রামে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার জাবোলের পর্যটন প্রধান সাদেক মিরহোসেইনি এই তথ্য জানান। খবর সিএইচটিএন এর।
বিশ্বে গোলাপজল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। এর মন মাতানো সৌরভ শুধু দেশেই নয় সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী। প্রতিবছর মে এর শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইরানে গোলাপ ফুল থেকে গোলাপ পানি প্রস্তুতিকরণের কার্যক্রম শুরু হয়।মিরহোসেইনি বলেন, উৎসবের অংশ হিসেবে ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত পরিাবেশনা, পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসির মহাকাব্য শাহনামার কবিতা আবৃত্তি এবং সিস্তানের তলোয়ার নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানি এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই ধরনের ঋতু উৎসবের আয়োজন পর্যটনকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং অঞ্চলে আরও দেশ-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।গোলাব বা গোলাপজল একটি বিশেষ ধরনের গোলাপ থেকে পাওয়া যায়, যা ইরানে মোহাম্মাদি গোলাপ নামে পরিচিত। ফুল সংগ্রহকে এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হয়। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত খুব সাবধানে ফুল বাছাই করতে হয়। পাপড়িগুলোকে তামার পাত্রে রেখে সিদ্ধ করা হয় এবং তারপরে তোলা জল ভর্তি বিশেষ বোতলে রাখা হয়। পাতন যত দীর্ঘ হবে গোলাপজলের গুণমান তত ভালো হয়।
গোলাব দেশব্যাপী বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বা ধর্মীয় সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। পবিত্র রমজান মাসে পণ্যটি সর্বাধিক বিক্রিত হয়।
ইরানে ফুল ও ভেষজ নিষ্কাষণের গভীর ইতিহাস রয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, ঐতিহ্যগতভাবে পাতিত গোলাপজল কারখানায় উৎপাদিত গোলাপজলের চেয়ে উচ্চ মানের হয়। কারণ ফসল কাটা এবং পাতন প্রক্রিয়ার মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধান থাকে। কৌশলগত ট্রানজিট অবস্থানে থাকার কারণে সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে চাবাহার ইরানের একমাত্র সমুদ্র বন্দর এবং মধ্য এশীয় দেশগুলোর মুক্ত জলসীমায় সবচেয়ে ভালো এবং সহজ প্রবেশ পথ। বিশাল প্রদেশটি বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং প্রাকৃতিক আকর্ষণের আবাসস্থল। এরমধ্যে দুটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে- শাহর-ই-সুখতেহ (বার্ন সিটি) এবং লুত মরুভূমি।গোলাপজল উৎসবের এই সময়টায় আকাশ-বাতাশে ছড়িয়ে থাকা গোলাপের সুবাস মানুষের মন জুড়িয়ে দেয়। ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে, সুমিষ্ট ঘ্রাণ নিতে আশপাশের লোকজন তো ছুটে আসেই। দৃষ্টিনন্দন উৎসবের আকর্ষণে ছুটে আসেন লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক। ফুল বাগানের সৌন্দর্যে আর সুমিষ্ট ঘ্রাণে ব্যাকুল হন দর্শনার্থীরা।
বাসা-বাড়িতে কিংবা বাগানে কিভাবে গোলাপের কুড়ি থেকে গোলাপজল বানানো হয় তা দেখতেই ছুটে আসেন উৎসুক মানুষজন। আর এ থেকেই ইরানি অনেক অঞ্চল পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়েছে। অঞ্চলগুলোর প্রতিটি কোনায় যেন রঙের নৃত্য ছড়িয়ে আছে। বাতাসে ভেসে থাকা গোলাপের সুবাস মন মাতিয়ে তোলে।ইরানের ইসফাহান, কেরামান শাহ, ফারস এবং পূর্ব আজারবাইজানের বিস্তীর্ণ বাগানে শুধুই চাষ হয় গোলাপ। শুধু সৌন্দর্য্ বর্ধনে নয়, বাণিজ্যিক কারণেই এই লাল ও গোলাপি গোলাপের চাষ। উন্নতমানের এই গোলাপ থেকে হয় বিশ্বমানের গোলাপজল। সাগরপৃষ্ঠ থেকে ২ থেকে ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় ঠাণ্ডা পরিবেশে লাল গোলাপ সবচেয়ে ভালো জন্মায় বলে জানান উৎপাদনকারীরা। সূত্র: তেহরান টাইমস।
গোলাপজল উৎসব | |