জালালে আলে আহমাদ
জালালে আলে আহমাদ (১৯২২-১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ) চল্লিশের দশকের ইরানি লেখকদের মধ্যে উজ্জ্বলতর নাম। মূলত তিনি ছিলেন গদ্য লেখক। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী সবই লিখেছেন। অনুবাদও করেছেন তিনি। তবে ছোটগল্প এবং উপন্যাস রচনায়ই ছিলেন সবচেয়ে পারঙ্গম। যে কয়জন ইরানি গল্পকার ফারসি ছোটগল্পকে সমৃদ্ধতর করেছেন আলে আহমাদ তাঁদের অন্যতম।
আলে আহমাদের মূল নাম জালাল উদ্দিন সাদাত আলে আহমাদ। তবে লেখালেখির অঙ্গনে তিনি জালালে আলে আহমাদ নামেই পরিচিত। জন্ম ১৩০২ ফারসি সালে (১৯২২ খ্রিস্টাব্দে) পুরানো তেহরানের সাইয়্যেদ নাসিরুদ্দীন মহল্লায়। বাবার নাম সাইয়্যেদ আহমাদ হোসাইন তালেকানি। বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত আলেম।
আলে আহমাদ ইরানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে ফারসি সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ফারসি সাহিত্যে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য গবেষণাও করছিলেন। কিন্তু তাঁর গবেষণার শেষ দিকে এসে তিনি আর তাঁর কাজ শেষ করেননি।
১৩২৪ ফারসি সালে (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে) ‘সোখান’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘জিয়ারাত’ গল্পের মাধ্যমে আলে আহমাদের লেখালেখির জগতে প্রবেশ। এ বছরই জিয়ারাতসহ আরও ১২ টি গল্পের সমন্বয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দিদ ভা বাযদিদ (দেখা-সাক্ষাৎ)। এ গ্রন্থের অন্য গল্পগুলো হচ্ছে: দিদ ভা বাযদিদ, গাঞ্জ (গুপ্তধন), এফতারে বি মোওগে’ (অসময়ে এফতার), গোলদানে চিনী (চিনামাটির ফুলদানি), তা’বূৎ (শবাধার), শামে গ্বাদ্দী (দীর্ঘ বাতি), তাজহিযে মেল্লাত (জাতির সমরসজ্জা), পোস্তচি (ডাক পিওন), মা’রাকে (বানরের খেলা), এই লামেছে সাবা এবং দো র্মোদে (দুই মোর্দা)।
১৩২৬ ফারসি সালে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশিত হয় আলে আহমাদের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘আয রানজিকে মিবারিম’ (বয়ে বেড়ানো যন্ত্রণা থেকে)। এই গ্রন্থটি আলে আহমাদ খলীল মুলকীর নামে উৎসর্গ করেন। আলে আহমাদের এই গ্রন্থভুক্ত গল্পের সংখ্যা সাত। সেগুলো হচ্ছে: দাররে খাযান যাদে (শরতপুত্রের উপত্যকা), যিরাবীহা (জলের নিচের বাসিন্দারা), দার রাহে সালুস (সালুসের পথে), মুহিতে তাঙ্গ (ক্ষুদ্র পরিধি), এ’তেরাফ (স্বীকারোক্তি), আবরুয়ি আয দাস্ত রাফতে (যে মর্যাদা হারিয়ে গেছে) এবং রোজহায়ে খোশ (আনন্দের দিনগুলো)। পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় আলে আহমাদের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ সেতার। সেতারে গল্প সংখ্যা তেরটি। এগুলো হচ্ছে: সেতার, বাচ্চে মারদোম (পরপুত্র), ভাসভাস (সংশয়), লাকেসূরাতী (গোলাপি পেয়ালা), ভেদা (বিদায়), যেন্দেগী কে গারিখতে (পালিয়ে যাওয়া জীবনটা), আফতাবে লাবে বাম (কার্নিশের সূর্য), গুনাহ, নাযদিকে মারযুনাবাদ (মারযুনাবাদের নিকটে), দাহানে কাজী (ভেংচি), আরেযুয়ে গ্বোদরাত (শক্তির প্রত্যাশা), এখতেলাফে হেসাব (গড়মিল) এবং আল গামারোক ওয়াল মাকুস।
১৩২৯ ফারসি সালে (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে) তিনি যায়েদ, কামু, সারতার, দস্তয়ভস্কি প্রমুখের সাহিত্য অনুবাদে আত্মনিয়োগ করেন। ১৩৩১ ফারসি সালে (১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশিত হয় তাঁর চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘যানে যিয়াদি’ (অবাঞ্ছিতা)। এ গ্রন্থে আলে আহমাদের নয়টি গল্প স্থান পেয়েছে। এগুলো হচ্ছে: সামানু পাযান, খানোম নযহাতুদ্দৌলা, দফতরচেয়ে বিমে (বীমার কর্মচারী), আক্কাস বা মারেফাত (অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফার), খোদাদাদ খান, দোয্দোয্দে, জা প’ (পায়ের ছাপ), মাসলূল (যক্ষা রোগী) এবং যানে যিয়াদি (অবাঞ্ছিতা)।
১৩৩৩ থেকে ১৩৩৪ ফারসি সাল পর্যন্ত (১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) সময়কালে আলে আহমাদের যেসব সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত হয় সেগুলো হচ্ছে: ওরাযান, তাত নাশিনহায়ে বলোকে যাহরা, হাফ্ত মাগ্বা’লে (সাতটি প্রবন্ধ), এবং অনুবাদ সাহিত্য মায়েদেহায়ে যামিনী (মাটির দস্তরখানাগুলো)।
১৩৩৭ ফারসি সালে (১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশিত হয় আলে আহমাদের আলোচিত উপন্যাস মুদিরে মাদরেসে (হেডমাস্টার) এবং সারগোযাস্তে কান্দূহা (মৌচাকের গল্প)। দু’বছর পর অর্থাৎ ১৩৩৯ ফারসি সালে (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশিত হয় যাজিরেয়ে খারেক দার ইয়াতিমে খালিজ (এতিম উপসাগরে খারেক দ্বীপ)। এর পর ১৩৪০ থেকে ১৩৪৩ ফারসি সাল পর্যন্ত (১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালে প্রকাশিত হয় আলে আহমাদের আরও একটি উপন্যাস ‘নুন ওয়াল কালাম’, প্রবন্ধগ্রন্থ সে মাগ্বালে দিগার (আরও তিনটি প্রবন্ধ), আত্মজীবনী কারনামে সেসালী (তিন বছরের আমলনামা), প্রবন্ধগ্রন্থ গারবযাদেগী (পাশ্চাত্যগ্রস্ততা), ভ্রমণ কাহিনী সাফারে রুশ (রাশিয়া ভ্রমণ), সাঙ্গী বার গূরী (সমাধির একটা পাথর) প্রভৃতি গ্রন্থ।
১৩৪৫ ফারসি সালে (১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে) তাঁর খাসি দার মিগ্বাত (মিকাতের টুকরা) গ্রন্থের অলংকৃত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এ বছরই তিনি ইউনেস্কোর নোংরামির সমালোচনা করে রচনা করেন নাটক কারগাদান (গণ্ডার)। তাঁর শেষ জীবনের সাহিত্যকর্মসমূহ হচ্ছে: দার খেদমাত ভা খিয়ানাতে রাওশান ফেগ্বরান (বুদ্ধিজীবীদের খেদমত এবং খিয়ানাত), উপন্যাস নাফরিনে যামিন (মাটির অভিশাপ) এবং অনুবাদকর্ম ওবূর আয খাত্ব (রেখা অতিক্রম)।
আলে আহমাদ মৃত্যুর পর ১৩৫০ ফারসি সালে (১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে) পাঞ্জ দাস্তান (পাঁচটি গল্প) শিরোনামে গ্রন্থভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের গল্পগুলো হচ্ছে: গোলদাস্তেহা ভা ফালাক (ফুলদানিগুলো এবং অদৃষ্ট), জাশনে ফারখোন্দে (আনন্দ উৎসব), খ’হারাম ভা আনকাবুত’ (আপা ও মাকড়সা), শোওহারে আমরেকায়ী (আমেরিকান স্বামী) এবং খূনা’বেয়ে আনার (ডালিমের রক্তাশ্রু)।
আলে আহমাদ ১৩৪৮ ফারসি সালের (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে) শাহরিয়ার মাসের ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৬ বছর।
জালালে আলে আহমাদ | |
উল্লেখযোগ্য রচনা: জিয়ারাত, দিদ ভা বাযদিদ, সেতার, দার রাহে সালুস ইত্যাদি |