মানবতার উৎকর্ষ সাধক কবি হাফেজ শিরাজী ও রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর
ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত
দূর অতীতে প্রাচীন গ্রিস পরিচিত হয়েছিল দর্শনশাস্ত্রের কারণে আর ফ্রান্সের পরিচিতি ছিল সাহিত্যের সুবাদে। একইভাবে রোম পরিচিত ছিল নয়নজুড়ানো স্থাপত্য শিল্পের কারণে, রাশিয়ার খ্যাতি ছিল টলস্টয়, দস্তায়ভস্কি ও চাখুভ প্রমুখ ঔপন্যাসিকদের খ্যাতির সুবাদে। আর প্রাচীন জার্মানির পরিচিতি ছিল তার নিজস্ব দার্শনিক বৈশিষ্ট্যের কল্যাণে। এ ক্ষেত্রে ইরান ভূখণ্ডের পরিচিতি ছিল কবিতা ও সাহিত্যের দেশ হিসেবে। শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার, শেখ সাদী, আবুল কাসেম ফেরদৌসী, মওলানা রূমী ও হাফেয শিরাজীর মতো মহান ব্যক্তিগণ ইরানের জন্য এমনই জাতীয় ঐশ্বর্য বয়ে এনেছেন।
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরও সাহিত্যে এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী হিসেবে নিজের সর্বোতমুখী চেষ্টা নিয়োজিত করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল সে সময়কার ভারতবর্ষকে ঐশ্বর্যশালী করা। তবে যে কথাটি বাস্তব তা হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলাভাষী, তিনি বাংলাভাষী কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কলকাতা ও আজকের বাংলাদেশে জীবন অতিবাহিত করেন, বাংলা ভাষায় কবিতা চর্চা করেন এবং তাঁর কবিতাসমূহ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত কলকাতার পত্রপত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছে। আর তিনি বাংলার সংস্কৃতিকেই লালন করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত কলকাতাতেই দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। এসব কারণে তাঁকে ভারতবর্ষের কবি বলার আগে বৃহত্তর বাংলা (বাংলাদেশ)-র কবি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জাতীয় কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা তাঁর মতো লোকদের জন্য তাঁকে কোন্ দেশের নাগরিক বলা হবে তা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা, কবি, সহিত্যিক, সংস্কারক, মরমিবাদী, দার্শনিক, শিল্পী ও সংগীতজ্ঞদের কাছে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বিভাজনের কোনো অর্থ নেই। মহাকবি হাফেয শিরাজীর কাছেও এ ধরনের ভৌগোলিক সীমারেখার মোটেও গুরুত্ব ছিল না। যেমন তিনি ইরানে বসে কবিতা রচনা করতেন আর এজন্য আনন্দিত ছিলেন যে, তিনি বাংলার জন্য পারসির কান্দ প্রেরণ করেছেন। ঠাকুরও ভারতবর্ষের প্রতি যেমন ভালোবাসা পোষণ করতেন তেমনি ইরান ও এশিয়ার সকল দেশ আর এখানকার জাতিসমূহের প্রতিও ভালোবাসা পোষণ করতেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ^জনীন চিন্তাধারা উপলব্ধি করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, বিশে^র প্রখ্যাত চিন্তাবিদ, যেমন আলবার্ট আইনস্টাইন, রূমান রোলান, এইচ জি ভালজ প্রমুখের সাথে ১৯৩০-এর দশকে ঠাকুরের যেসব সাক্ষাৎ ও আলোচনা হয়েছে, তা বিবেচনায় আনা হবে। এসব আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখলেই উপরিউক্ত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হবে। ঠাকুর তাঁর সময়কার প্রায় সকল জ্ঞানী-মনীষী, বুদ্ধিজীবী ও তারকা শিল্পী, যেমন হ্যানরি ব্রাগসন, জর্জ বার্নাড শ, টমাস ম্যান ও রবার্ট ফ্রস্ট প্রমুখের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। সেই তুলনায় হাফেজ শিরাজি পৃথিবীর সর্বত্র সফর, পর্যটন কিংবা তখনকার দিনের জ্ঞানী-মনীষীদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের পক্ষপাতি ছিলেন না। হাফেজ নিজেই বিষয়টিকে বেশ শৈল্পিক আঙ্গিকে ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন,
نمی دهند اجازت مرا به سیر و سفر
نسیم باد مصلا و آب رکنا باد
নামী দাহান্দ এজা’যত মারা’ বে সাইর ও সাফার
নাসীমে বা’দে মুসাল্লা’ ও আ’বে রোকনা’বা’দ
সফর ও পর্যটনের অনুমতি দেয় না যে আমাকে
ঈদগাহের মলয় সুবাস ও রোকনাবাদের ঝর্নাধারা।
আমাদের আফসোস লাগে, হাফেজ যদি পৃথিবীর সকল দেশকে নিকট থেকে দেখতেন, তাহলে সেসব দেশের সৌন্দর্যগুলোও তাঁর কবিতার ভাষায় মনিমুক্তা খচিত আকারে আরো সুন্দররূপে প্রস্ফুটিত হতো। ঠিক যেভাবে তিনি ইরানের শিরাজ ও শিরাজের রূপের বাহারকে বিশ^জনীনতা দিয়েছেন। আমরা দেখি যে, হাফেজের মতো ঠাকুরের মাঝেও প্রকৃতি ও নিসর্গের প্রতি প্রীতি ও ভালোবাসা প্রবল ছিল।
হাফেজ শিরাজী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগীত চেতনা ও প্রতিভা
হাফেজ ও ঠাকুরের মধ্যে যেসব অভিন্ন সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলো সুর, ছন্দ, সংগীতের দ্যোতনা আর সংগীতের তাল-লয় ও বিভিন্ন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোর প্রতি সচেতনতা ও মনোযোগ। তবে এটুকু তফাৎ যে, হাফেজ তাঁর সুরেলা গজল কাব্যে তাঁর সংগীত প্রিয়তার ছন্দ ও সুরের সর্বোচ্চ প্রকাশ ও প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু ঠাকুর সংগীতের যন্ত্র বাদন ও সংগীতের সূক্ষ্ম তত্ত্ব রচনায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বার্লিনে আইনস্টাইনের সাথে সাক্ষাৎকালে গান ও সংগীত, হস্তলিপি ও চিত্রাঙ্কনে মেলোডির ভূমিকা এবং সৌন্দর্যের আপেক্ষিকতা সম্পর্কে এমন দক্ষতার সাথে কথা বলেন যে, বিশ্ববিখ্যাত এই জার্মান বিজ্ঞানী অবাক হয়ে যান।
কুরআন মজীদ সম্পর্কে হাফেজের দক্ষতা
তবে মহাকবি হাফেজ শিরাজীর অনন্যতার একটি কারণ ছিল কুরআন মজীদের বিষয়ে তাঁর অগাধ পা-িত্য। সামগ্রিক পর্যালোচনায় আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, হাফেজ সম্ভবত যে বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছিলেন তা ছিল, তিনি যে সময়টি ভ্রমণে কাটাতে পারতেন, সে সময়টিকে কুরআন মজীদ অনুধ্যানে বিনিয়োগ করেছেন। এ কারণেই তিনি হাফেজে কুরআন হতে পেরেছেন এবং ‘হাফেজ’ নামেই তাঁর খ্যাতি। তিনি ১৪টি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রীতিতে কুরআন পড়তে সক্ষম ছিলেন। হাফেজ বলেন,
عشقت رسد به فریاد ارخود به سان حافظ
قرآن زبر بخوانی در چارده روایت
এশকাত রসদ বে ফারয়া’দ আর খোদ বে সা’ন হাফেয
কুরআ’ন যে বর বেখা’নী দার চা’রদে রেওয়ায়াত
তোমার প্রেম চিৎকার দিয়ে উঠবে যদি হাফেজের মতো
কুরআন মুখস্ত পড় চৌদ্দ প্রকার রেওয়ায়েত সহকারে।
হাফেজের কবিতায় কুরআনের আয়াত বা আয়াতাংশের উদ্ধৃতি
১. হফেজের কবিতায় ফাঁকে ফাঁকে কুরআন মজীদের কোনো আয়াত বা আয়াতাংশের উদ্ধৃতি এসেছে অতিশয় শৈল্পিক সৌন্দর্য নিয়ে। যেমন-
حضور خلوت انس است و دوستان جمعند
و ان یکاد بخوانید و در فراز کنید
হুযুর খালওয়াতে উন্স আস্ত ওয়া দূস্তা’ন জামআন্দ
ওয়াইন য়াকা’দু বেখা’নীদ ও দার ফারা’য কুনীদ
উপস্থিতি তো সান্নিধ্যের নির্জনতা আর বন্ধুদের সমাগম
ওয়া ইন ইয়াকাদু তেলাওয়াত কর আর খুলে দাও দরজা।
২. হাফেজ কুরআন মজীদের ভাবার্থকেও কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। েেযমন সূরা আহযাবের ৭৩ নং আয়াতের ভাবার্থ ভাস্বর হয়েছে তাঁর এ কবিতায়-
آسمان بار امانت نتوانست کشید
قرعه فال به نام من دیوانه زدند
আ’সেমা’ন বা’রে আমা’নত নাতাওয়ানেস্ত কাশীদ
কুরআয়ে ফা’ল বে না’মে মানে দীওয়ানে যাদান্দ
আসমান পারে নি বহন করতে এই আমানত ভার
অবশেষে আমি পাগলের নামে এল ভাগ্যফল তার।
৩. তিনি কুরআনে বর্র্র্র্ণিত কাহিনীকেও শিল্পিত আঙ্গিকে তুলে এনেছেন তাঁর কবিতায়। যেমন-
یوسف گم گشته باز آید به کنعان غم مخور
کلبه احزان شود روزی گلستان غم مخور
ইউসুফে গুম গাশতে বা’য আ’য়াদ বে কেনআ’ন গাম মাখূর
কুলবেয়ে আহযা’ন শাওয়াদ রূযী গুলেস্তা’ন গাম মাখূর
হারানো ইউসুফ কেনানে আবার আসবে ফিরে চিন্তা নেই
দুঃখের এ কুটির হবে একদিন ভরা ফুলবন চিন্তা নেই।
৪. কখনো গল্পের পিঠে গল্প দিয়ে সাজিয়েছেন তিনি কবিতার পসরা-
ای هدهد صبا به سبا میفرستمت
بنگر که از کجا به کجا می فرستمت
আই হুদহুদে সাবা’ বে সাবা’ মী ফেরেস্তামেত
বিনগার কে আয কোজো’ বে কোজো’ মী ফেরেস্তামেত
ওহে প্রভাতের হুদহুদ তোমায় পাঠাচ্ছি সাবায়
দেখ প্রেরণ করছি কোত্থেকে কোথায় তোমায়?
আল্লাহর বাণী কুরআনের ব্যাপারে এমন পা-িত্যই হাফেজকে কবিতার শিল্পে অনন্যতা দিয়েছে। আমরা আবারো হাফেজ ও ঠাকুর প্রসঙ্গে ফিরে আসছি।
হাফেজ ও ঠাকুরের মনোবৈজ্ঞানিক চেতনা
হাফেজ এমনভাবে মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন এবং তাতে এতখানি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন যে, প্রত্যেক যুগের মানুষ মনে করে যে, হাফেজ আমাদের নিয়েই কবিতা রচনা করেছেন। তিনি কবিতার মাধ্যমে চিকিৎসার কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। মানবতার সকল দুঃখ দরদ নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যেও আমরা তার সাক্ষাৎ পাই। তিনি বিশে^র জ্ঞানী-মনীষীদের সাথে সাক্ষাতে আলাপকালে ভারতবর্ষের জনগণ তথা এশিয়ার গণমানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যা দুনিয়ার যে কোনো স্বাধীনচেতা মানুষকে প্রশংসামুখর করে। রোমান রোলানের সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি ভারতীয়দের কাল্পনিক কুসংস্কার পূজা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে নিয়োজিত করার বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করেন। তাতে রোলান কবির চিন্তাধারার উচ্চতায় অভীভূত হয়ে যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষে মানুষে হানাহানির প্রতি ভীষণভাবে রুষ্ট ছিলেন। তিনি সকল মানুষকে মনে করতেন ঈশ^রের সন্তান। কাজেই ঈশ^রের সন্তানদের হত্যা করা যাবে না, অন্যায়ভাব তাদের রক্তপাত ঘটানো যাবে না; বরং মানুষের ব্যক্তিসত্তাকে মর্যাদা দিতে হবে। মানুষের ব্যক্তিসত্তার বিকাশের প্রতি তিনি অতিশয় গ্ররুত্ব আরোপ করতেন। হাফেজ শিরাজী কিন্তু ঠাকুরের এসব কথাকে একটি মাত্র বাক্যে অত্যন্ত শৈল্পিক দ্যোতনায় উপস্থাপন করে বলেছেনÑ
جانا روا نباشد خونریز را حمایت
জা’না’ রওয়া’ নাবা’শাদ খোনরীয রা’ হেমা’য়েত
প্রিয়তম মোটেও বৈধ নয় রক্তপাতে সমর্থন জ্ঞাপন
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিচার-বিশ্লেষণে হাফেজ ও ঠাকুরের দক্ষতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের জন্য কবিতা লিখতেন, প্রবন্ধ রচনা করতেন, ব্রিটিশ নীতির সমালোচনা করতেন। তাঁর এসব রচনার অধিকাংশই উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তুর কারণে ভারতের জাতীয় রচনাবলিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ জাতীয় রচনার মধ্যে অন্যতম হলো ‘জাতীয় আন্দোলন’ শীর্ষক সংকলন, যা ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
হাফেজ তাঁর রচনায় যুগের প্রদর্শনেচ্ছু প্রতারকদের প্রতি কটাক্ষবান নিক্ষেপ করেছেন। তিনি তথাকথিত শরীয়তের আইন প্রয়োগকারী, সুফি, সংসারত্যাগী, মুফতি, মুহতাসিব প্রভৃতি শ্রেণিকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করেছেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে হাফেজ হলেন সামাজিক বিশ্লেষক, সমালোচক ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। মিথ্যা, প্রতারণা ও ধোঁকাকে তিনি মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন এবং তার থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
চরিত্র নির্মাণে হাফেজ ও ঠাকুর
ব্যক্তি-চরিত্র নির্মাণে হাফেজ ও ঠাকুরের মধ্যে চমৎকার মিল দেখা যায়। যেমন ঠাকুরের কাছে যিনি বাউল, হাফেজের দৃষ্টিতে তিনি রেন্দ। বাউলদের অধিকাংশ হিন্দু; তবে কিছুসংখ্যক মুসলমানও আছে। এরা নিজেদেরকে সব ধরনের বাধা বন্ধন থেকে মুক্ত মনে করে। অন্যকথায় ‘আয রাঙ্গে তাআ‘ল্লুক আ’যা’দেগা’ন’
از رنگ تعلق آزادگان
‘সম্পৃক্ততার রঙ হতে মুক্ত’। এই জগতের কোনো নিয়ম-কানুনের এরা ধার ধারে না এবং কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেও অনুসরণ করে না। কারো আনুগত্য করে না।
হাফেজ ও ঠাকুর দুজনই সংস্কারক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তির পতাকাবাহী। বিশ্বসমাজের জন্য তাঁর দরদ স্বতঃসিদ্ধ ও সর্বজনজ্ঞাত। বিশে^র বিভিন্ন দেশে তাঁর বিভিন্ন সফর ও উদ্দীপনাময় ভাষণসমূহ তাঁর এই উন্নত ও সংস্কারবাদী চিন্তা-চেতনার পরিচায়ক। ঠাকুরের সংস্কার কার্যক্রম ও উচ্চতর দৃষ্টিভঙ্গি তখনকার ভারত ও ভারতীয় সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি গোটা মানবসমাজের শান্তি ও সৌভাগ্যের প্রত্যাশী ছিলেন। এ কথার উত্তম প্রতিপাদ্য ছিল তাঁর রচিত ‘আফ্রিকা কাব্য’। তাতে তিনি যারা আফ্রিকার কালো মানুষকে দাসত্বে শৃঙ্খলিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ জানান। নাজীদের গণহত্যার প্রতিবাদেও তাঁর কবিতা বলিষ্ঠ ভাষায় প্রতিবাদ জানায়। ১৯০৭ সালে ভারতীয় কংগ্রেস যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অধিবেশনে মিলিত হয় তখন তিনি তাঁর রচিত একটি প্রার্থনা পাঠ করে শোনান। সেই প্রার্থনা শুধু ঈশ^রের সামনে তাঁর বিনয়, কাকুতি ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাঁর প্রবল ইচ্ছার সাক্ষ্য বহন করে না; বরং তাতে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং পছন্দনীয় কাজ ও কল্যাণধর্ম কার্য সম্পাদনে মহাপ্রভুর সমীপে দাবি ও আকুতি প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
জাতীয় জীবনের উৎকর্ষে হাফেজ ও ঠাকুরের সাফল্যের মূল্যায়ন
উপসংহারে আমি বলতে চাই যে, হাফেজ ও ঠাকুর শুধু ইরান, ভারত বা বাংলাদেশের জন্য কবিতা রচনা করেন নি; বরং গোটা এশিয়া তথা গোটা বিশে^র মানবতার উৎকর্ষ সাধনে কবিতার শক্তিকে ব্যবহার করেছেন। মানবতার কল্যাণের শাশ^ত চেতনা উভয় কবিকে ইতিহাসের বিস্তর দূরত্ব সত্ত্বেও পরস্পরের একান্ত নিকটে নিয়ে এসেছে।
অনুবাদ : ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
(নিউজলেটার, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৯)
মানবতার উৎকর্ষ সাধক কবি হাফেজ শিরাজী ও রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর | |
দিওয়ানে হাফেজ | |
Template | Organized |