ফরিদ উদ্দিন আত্তার : ফারসি সাহিত্যে অধ্যাত্মচিন্তার আত্মা
ড. আবদুস সবুর খান
ফারসি সাহিত্যে আধ্যাত্মিক চিন্তার উন্মেষ ঘটে একাদশ শতকের গোড়ার দিকে,সালজুকি রাজবংশের (শাসনকাল ১০৩৭-১১৫৭ খ্রি.) শাসনামলে। ইতঃপূর্বে ফারসি সাহিত্যে যা ছিল অনুপস্থিত। পারস্যে সালজুকদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক, সামরিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যে তদানীন্তন মুসলিমবিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। মূলত তাঁরা ইসলামের চারশ বছরের সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ উত্তরসূরির ভূমিকা পালন করেন। সালজুকি সম্রাটদের প্রায় সবাই, বিশেষ করে মালিক শাহ্ এবং সানজার নিজেদের পৃষ্ঠপোষকতা দ্বারা ফারসি সাহিত্যের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বলা যায়, একাদশ শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালে ইসলামি সভ্যতা এক নতুন যুগে পদার্পণ করে। কারণ, সালজুকি সম্রাটগণের সহযোগিতায় এক দিকে যেমন এই যুগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় অপর দিকে এই যুগে মুসলিমবিশ্বে সুফিবাদ বা অধ্যাত্মবাদের মতো বেশ কিছু চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটে। বিশেষ করে ফারসি কাব্যসাহিত্যে সুফি বা আধ্যাত্মিক ধারার প্রবর্তন ঘটে; সালজুকি যুগের পূর্বে, অর্থাৎ সামানি (শাসনকাল ৮৭৪-১০০৪ খ্রি.) এবং গাজনাভি (শাসনকাল ৯৭৫-১১৮৭ খ্রি.) যুগে ফারসি কাব্যে যে ধারা ছিল সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সামানি ও গাজনাভি শাসনামলের কবিগণ ছিলেন সম্রাট-শাহজাদা, উজির-আমির-পারিষদের স্তুতি এবং প্রকৃতি বন্দনায় নিমগ্ন। তাঁদের প্রেমাস্পদ প্রকৃত প্রেমাস্পদ ছিল না, ছিল পার্থিব প্রেমাস্পদ। কিন্তু সালজুকি যুগে ফারসিকাব্যে সুফিবাদী ধারার আবির্ভাব ঘটে, যার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রকৃত পেমাস্পদ একক স্রষ্টার প্রেম ও করুণা উপলব্ধি এবং তাঁরই বন্দনা করা। তাই এই যুগের সুফি কবিগণ সামানি ও গাজনভি যুগের কবিদের মতো বাদশা-শাহজাদা, উজির-ওমারা এবং দরবারিদের ন্যায় পার্থিব প্রেমাস্পদের বন্দনা না করে আত্মোন্মোচন, আত্মশুদ্ধি ও আত্ম-অধ্যয়নের মতো সঠিক পন্থার মাধ্যমে কাশ্ফ এবং শুহুদে পৌঁছতে সচেষ্ট হন। এই সাধনার মাধ্যমে তাঁরা স্বীয় আত্মাকে নশ্বর এই পৃথিবীর পঙ্কিলতা মুক্ত করে অপার্থিব স্রষ্টার একত্বের সান্নিধ্যে পৌঁছে স্বীয় সত্তা ও কালব-আয়নাকে এতটাই পরিষ্কার করে তুলেন যে, তাতে স্রষ্টার প্রতিবিম্ব প্রত্যক্ষ করতে পারা যায় এবং মারেফাতের সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁদের চিন্তা, কথা এবং আচরণ হয়ে ওঠে প্রকৃত সত্য ও সত্তার প্রকাশস্থল। আর তাঁদের এই আলোকোজ্জ্বল দৃষ্টিতে মানবজগৎও প্রকৃত একক প্রেমাস্পদকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। বাবা তাহের হামেদানি (১০০০-১০৮৫), আবু সাইদ আবিল খায়ের (৯৬৭-১০৪৮),খাজা আব্দুল্লাহ্ আনসারি (১০০৬-১০৮৮), সানায়ি (১০৭৯-১১৫১),ফরিদ উদ্দিন আত্তার (১১৪৩-১২৩০) প্রমুখ ছিলেন এই যুগের বিখ্যাত সুফি কবি, যাঁরা অধ্যাত্মবাদের এই চিন্তা-দর্শনকে কবিতার শ্রেষ্ঠতর সৌন্দর্যের আভরণে সাজিয়ে সরল ও সাবলীল বক্তব্যে সাধারণের জন্য সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন।
যদিও বাবা তাহের হামেদানি এবং আবু সাইদ আবিল খায়েরের মাধ্যমেই ফারসি কাব্যে আধ্যাত্মিক দর্শনের আগমন ঘটে তবে ফারসি সাহিত্যে অধ্যাত্মচিন্তার আত্মা খ্যাত ফরিদ উদ্দিন আত্তারের মাধ্যমেই এই দর্শন পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়। ফরিদ উদ্দিন আবু হামেদ মোহাম্মদ আত্তার নিশাপুরি ইরানিদের কাছে শেখ আত্তার নিশাপুরি নামেই সমধিক খ্যাত। ভারতবর্ষে তিনি শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তার নামে পরিচিত। আত্তারের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে সবিস্তার তথ্যাবলি তেমন পাওয়া যায় না। তাঁর জীবন-ইতিহাস সম্পর্কেও এই যুগের অধিকাংশ সুফি কবি এবং সাধকদের জীবনের ন্যায় নানা কিংবদন্তি ও কাহিনী প্রচলিত। এমনকি তাঁর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়েও জীবনীকারদের মধ্যে যথেষ্ঠ মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইরানের বিখ্যাত পণ্ডিত মরহুম ফোরুযানফারের গবেষণায় তিনি উল্লেখ করেছেন, আত্তার ১১৫২ খ্রিস্টাব্দে নিশাপুরের কাদকান শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২৮২ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল সৈনিকের হাতে নিহত হন। অপর দিকে ইরানের খ্যাতিমান সাহিত্য-ইতিহাসবিদ সাইদ নাফিসির বর্ণনা মতে, তিনি ৫৩৭ হিজরি মোতাবেক ১১৪৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
আত্তারের শৈশব কাটে ইরানে তাতারদের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের সময়ে। তাতারদের হত্যাযজ্ঞে যখন সমগ্র পারস্য এক বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে সে সময়ে আত্তারের বয়স মাত্র ৬ কিংবা ৭ বছর। এই হত্যাযজ্ঞ এতটাই নৃশংস এবং ভীতিকর ছিল যে, আত্তারের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই দুঃসহ স্মৃতির প্রভাব লক্ষ করা যায়। শৈশবে আত্তার তাঁর চারপাশে যে নির্যাতন, আগ্রাসন, ধ্বংস, মৃত্যু এবং নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন তাই-ই তাঁকে পরবর্তীতে মৃত্যুচিন্তা এবং যন্ত্রণা-ভাবনায় বেদনাকাতর করে তোলে। এই নৃশংসতা কিছুটা স্তিমিত হওয়ার ক’বছর পর আত্তার স্থানীয় মক্তবে লেখাপড়ায় নিমগ্ন হন। এ সময় তিনি আব্বাস তুসি, মোজাফ্ফার এবাদি, রুকনুদ্দিন আকাফ, মোহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া প্রমুখ ওলি ও সাধকের জীবনের নানা ঘটনাবলি সম্পর্কে অবহিত হন, যেগুলো তাঁকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। তাঁদের এসব ঘটনা পরবর্তীতে আত্তার তাঁর তাযকেরাতুল আওলিয়া গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
আত্তারের দিওয়ানের ভাষ্যমতে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ছিল মাহমুদ। প্রাচীনতম চরিতগ্রন্থগুলোতে আত্তারের পিতার নাম উল্লেখ হয়েছে ইবরাহিম বিন ইসহাক। কোনো কোনো গ্রন্থে তাঁর পিতার নাম ইউসুফ বলেও উল্লেখ পাওয়া যায়। কাদকানে ‘পিরে জিরানভান্দ’ নামে একটি মাজার রয়েছে, যে মাজারকে স্থানীয় জনসাধারণ অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন। এরা বিশ্বাস করেন এটি আত্তারের পিতা ‘শেখ ইবরাহিম’-এর মাজার।
আত্তার শৈশব এবং তারুণ্যেই পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিক্হ, তাফসির, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রভৃতি বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন এবং পৈত্রিক পেশা হিসেবে ‘আত্তারি’ অর্থাৎ ভেষজ চিকিৎসা এবং সুগন্ধি বিক্রয়ের পেশাকেই স্বীয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সে কারণেই তিনি স্বীয় নামের চেয়ে তাঁর পেশাগত উপাধি ‘আত্তার’ (ভেষজ চিকিৎসক বা সুগন্ধি বিক্রেতা) নামেই সমধিক পরিচিত। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর জীবনের প্রথম অংশ নিশাপুরের প্রাচীন শহরেই কাটে এবং মৃত্যুর আগের বাকি জীবন তিনি নিশাপুরের নতুন শহর ‘শাদইয়াখ’-এ অতিহাবিত করেন। এখানেই তিনি পৈত্রিক পেশা ভেষজ চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেন। এ পেশায় তিনি এতটাই সুনাম অর্জন করেন যে, বহু দূর দূরান্ত থেকে তার বাড়ি তথা চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীরা এসে ভিড় করত। যে সম্পর্কে আত্তার স্বীয় গ্রন্থ আসরার নামে এবং মসিবাত নামেতে উল্লেখ করেছেন, প্রতিদিন অন্তত পাঁচশ রোগী তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসত :
بداروخانه پانصد شخص بودند
که در هر روز نبضم می نمودند
[চিকিৎসালয়ে ছিল পাঁচশ লোক
যারা প্রতিদিন আমার চিকিৎসা নিতে আসত]
আত্তার তাঁর পিতার কাছ থেকেই ভেষজ ঔষধ প্রস্তুতকরণ এবং ভেষজ চিকিৎসার যাবতীয় জ্ঞান আয়ত্ত করেছিলেন। তবে আধ্যাত্মিক সাধনার ক্ষেত্রে তিনি কার কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তা সুস্পষ্ট করে না জানা গেলেও একথা জানা যায় যে, স্বীয় চিকিৎসাকেন্দ্রেই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত আধ্যাত্মিক দর্শন সম্বলিত কাব্যচর্চায়ও করতেন। মাদ্রাসা-খানকার প্রতি তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না এবং রাজ-রাজাদের স্তুতি করেও তিনি কোনো কাব্য রচনা করতেন না। এই অবস্থায়ই তাঁর জীবনে বড় ধরনের এক পরিবর্তন ঘটে। নিয়মিত রোগীর সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া পরিত্যাগ করে আত্তার সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর এই পরিবর্তন বিষয়েও নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। এগুলোর মধ্যে আব্দুর রহমান জামীর বর্ণনাই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। জামী তাঁর নাফাহাতুল উন্স গ্রন্থে বর্ণনা করেন : আত্তার প্রতিদিনের মতো স্বীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগী দেখায় ব্যস্ত ছিলেন এমন সময় সেখান দিয়ে এক আগুন্তক দরবেশ যাচ্ছিল। দরবেশ বেশ ক’বার ‘শাইউল্লাহ’ ‘শাইউল্লাহ’ বলে আত্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেও আত্তার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই করছিলেন না। তখন দরবেশ বললেন, ‘হে খাজা, তুমি কীভাবে মৃত্যু কামনা কর?’ জবাবে আত্তার বললেন, ‘যেভাবে তুমি মৃত্যু কামনা কর।’ দরবেশ বললেন, ‘তুমিও আমার মতো করে মৃত্যু কামনা কর?’ আত্তার বললেন, ‘হ্যাঁ।’ একথা শুনেই দরবেশ তাঁর সাথে থাকা কাঠের পাত্রটি স্বীয় মাথার নিচে দিয়ে দোকানের সামনে সটান শুয়ে পড়ে বললেন, ‘আল্লাহ।’ এবং সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। এই দৃশ্য অবলোকন করে আত্তারের মনের অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে যায়। তৎক্ষণাৎ তিনি স্বীয় চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে এবং জগৎসংসারের সাথে সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োগ করেন।
অবশ্য ফারসি সাহিত্যের অনেক গবেষকই জামীর এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কারণ, আত্তারের তাজকেরাতুল আওলিয়া গ্রন্থের তথ্য মতে দেখা যায়, শৈশবকাল থেকেই আত্তার আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তাই পার্থিব জীবন তথা সংসার জীবনের প্রতি তাঁর তেমন মায়া ছিল না। তিনি ছিলেন স্বীয় পিতার শিষ্য কুতুব উদ্দিন হায়দারের শিষ্য। বাল্যকালেই আত্তার কুতুব উদ্দিনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সুফি সাধনায় দীক্ষা লাভ করেন। তবে ইসলামে বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই বিধায় তিনি চিকৎসা পেশা এবং আধ্যাত্মিক সাধনা সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর আসরার নামে এবং এলাহি নামে গ্রন্থ দুটিও তিনি চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত অবস্থায়ই রচনা করেন। কালক্রমে একপর্যায়ে যখন তিনি সংসার জীবন তথা পার্থিব জীবনের মায়ামুক্ত হয়ে পার্থিব সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন, সম্ভবত এই সময়েই জামীর গ্রন্থে বর্ণিত পূর্বোক্ত দরবেশের ঘটনাটি চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও অধিকাংশ গবেষকের মতে আত্তার দির্নিষ্ট কোনো মুর্শিদের কাছ থেকে সুফিতত্ত্বে দীক্ষা লাভ করেন নি, তবে কোনো কোনো গবেষক এই মতের সাথে একমত নন। আত্তারের সবচেয়ে প্রাচীনতম জীবনীকার কবি ও সুফি নূরুদ্দিন আব্দুর রহমান জামী আত্তারকে শেখ নাজমুদ্দিন কোবরার শিষ্য শেখ মাজদুদ্দিন বাগদাদীর শিষ্য বলে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য আত্তার তাঁর তাজকেরাতুল আওলিয়া গ্রন্থের শুরুর দিকে মাজদুদ্দিন বাগদাদীর সাথে স্বীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন, তবে তিনি যে মাজদুদ্দিনের শিষ্য ছিলেন সে বিষয়ে এখানে তিনি বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেন নি। সারকথা হচ্ছে, আত্তার জীবনের একটি বৃহৎ অংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান আরেফ তথা সুফি সাধকদের সান্নিধ্যে কাটান এবং এসব সাধকের সান্নিধ্যের উদ্দেশ্যে তিনি পবিত্র ভূমি মক্কা থেকে মাওয়ারাউন্নাহার পর্যন্ত নানা দেশ ভ্রমণ করেন। এমনি এক সফরের এক পর্যায়ে মাজদুদ্দিন বাগদাদির খেদমতে উপস্থিত হন। বলা হয়ে থাকে ভূবনবিখ্যাত সুফি কবি মাওলানা জালাল উদ্দিনের পিতা বাহাউদ্দিন মোহাম্মদ, রুমির বয়স যখন পাঁচ বছর তখন সপরিবারে কুনিয়ার উদ্দেশে বাল্খ ত্যাগ করেন। বাহাউদ্দিন পথে ওয়াখশ এবং সমরকান্দে কিছুদিন কাটিয়ে নিশাপুরে আসেন। এখানে কবি ও আধ্যাত্মিক সাধক শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তারের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। আত্তার বালক রুমির জন্য বিশেষ দোয়া করেন এবং তাঁকে তাঁর রচিত আসরার নামে গ্রন্থের একটি কপি উপহার দেন। ভবিষ্যতে রুমি একজন কামিল ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধক হবেন বলে তিনি ভবিষ্যদ্বাণীও করেন।
সুফিদর্শন মতে, আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে ইসলামি শরিয়াতের এমন স্তর যার মাধ্যমে বান্দা পার্থিব বিষয়াদি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিতান্তই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের আশায় ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকে। জ্ঞানের মাধ্যমে সঠিক পথ উপলব্ধি করে একজন সুফি-সাধক সাধনার সাতটি স্তর পার হয়ে আল্লাহ্র সান্নিধ্যে তথা ‘বাকা’র স্তরে উপনীত হয়। নিরন্তর এই সাধনার নামই অধ্যাত্মবাদ। এশ্ক বা প্রেম হচ্ছে সৃষ্টির গূঢ় রহস্য এবং জীবনের স্ফুরক আর তাসাওউফ বা অধ্যাত্মবাদের উৎসের কাঁচামাল, জগতের মহান কর্মসমূহের উৎসস্থলের গোপন ভেদ এবং সাধক পুরুষের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার চূড়ান্ত অবস্থার মূল ভিত্তি। সুফিতত্ত্বের ভাষায় ‘মোহাব্বত’ বা ভালোবাসা যখন পূর্ণতায় পৌঁছে তখন তাকে বলা হয় ‘এশ্ক’ বা প্রেম এবং প্রেম যখন পূর্ণতায় পৌঁছে তখন ‘আশেক’ বা প্রেমিক ‘মাশুক’ বা প্রেমাস্পদের সত্তায় ‘ফানা’ বা বিলীন হয়ে যায়। পরম প্রেমাস্পদের প্রেমে প্রেমিকের বিলীন হওয়াই এশ্ক বা প্রেমের চূড়ান্ত পরিণতি। প্রেম আধ্যাত্মিক সাধনার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই মাক্বাম বা পর্যায় কেবল ইনসানে কামেল বা একজন পরিপূর্ণ মানুষই, যে উন্নতি এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির সবগুলো স্তর অতিক্রম করেছে, উপলব্ধি করতে পারেন।
আত্তার নিজে অধ্যাত্মবাদের এই মহান সাধনায় আত্মনিয়োগের পাশাপাশি সুফি দর্শনের এই জটিল তত্ত্বকে সর্বসাধারণের বোধগম্য করে তোলার লক্ষ্যে সাবলীল ও সরল ভাষায় গদ্যে-পদ্যে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। আত্তারের রচিত গ্রন্থাবলির সংখ্যা নিয়েও ফারসি সাহিত্যের গবেষক-সমালোকদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। রেজাকুলি খান হেদায়াতের মতে, আত্তারের সম্পৃক্ত গ্রন্থাবলির সংখ্যা ১৯০টি। কাজি নূরুল্লাহ শোশতারির মতে এ সংখ্যা ১১৪টি এবং দৌলতশাহর মতানুসারে ৪০টি। আত্তারের রচনাবলি সম্পর্কে দৌলতশাহ্ বলেন : আত্তারের মানসাভি কাব্য ছাড়াও তাঁর দিওয়ানে চল্লিশ হাজার বেইত বা শ্লোক রয়েছে। এছাড়া তিনি বার হাজার রুবায়ি রচনা করেছেন এবং সুফি সাধকদের জীবনীভিত্তিক তাযকিরাতুল আওলিয়া গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : আসরার নামে, এলাহি নামে, মসিবাত নামে, জাওয়াহেরুজ্জাত, ওসিয়াত নামে, মানতেকুত তেইর, বুলবুল নামে, হায়দার নামে, শুতুর নামে, মুখতার নামে, শাহনামে প্রভৃতি। এর বাইরে তিনি আরও কিছু কাব্য রচনা করেছিলেন, যেগুলো কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে। কাসিদা, গজল, মোকাত্তায়াত, রুবায়ি এবং মাসনাভি মিলে এখনো আত্তার রচিত একলক্ষ বেইত বা শ্লোকের অধিক রচনা বিদ্যমান।
অবশ্য ইরানের খ্যাতিমান ফারসি সাহিত্য সমালোচক ও গবেষক সাইদ নাফিসি বলেন, যে ৬৬টি গ্রন্থ ফরিদ উদ্দিন আত্তার রচিত বলে প্রচলিত মত বিদ্যমান তন্মধ্যে মাত্র ১২টি গ্রন্থ তিনি নিজে রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে সর্বজনস্বীকৃত গ্রন্থ হচ্ছে নয়টি। যথা : মানতেকুত তেইর, আসরার নামে, এলাহি নামে, পান্দ নামে, খসরু নামে, মুখতার নামে, মসিবাত নামে, তাযকিরাতুল আওলিয়া এবং দিওয়ানে আত্তার।
দিওয়ানে আত্তার মূলত তাঁর কাসিদা এবং রুবায়ির সংকলন। এর বেইত সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। আত্তারের দিওয়ান তাঁর আবেগময় আধ্যাত্মিক কবিতাসমূহের ধারক। যেগুলোতে আত্তার স্বীয় প্রেমাস্পদ পরম স্রষ্টার রহস্যাবলি কাব্যের ভাষায় ব্যক্ত করেছেন। আত্তারের গজল আবেগ ও উদ্দীপনাপূর্ণ। তাঁর কাসিদার বেশিরভাগই উপদেশ ও নসিহতে পূর্ণ। এসব কাব্যে আত্তার শ্রোতা এবং পাঠকদের পার্থিব জগতের মোহ ত্যাগ করে পরকাল তথা আখেরাতের প্রতি আগ্রহী হওয়ার আহ্বান করেছেন এবং পার্থিব জীবনের অসারতা ও নশ্বরতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। আত্তারের গজলের বেইতগুলো পরস্পর সন্নিবেশিত। সাধারণত এগুলোর সমন্বয়ে একটি সম্পূর্ণ চিন্তা-দর্শনের পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর ভাষা সহজ-সহল ও সাবলীল। তবে বিশুদ্ধ শব্দসম্ভার ও অলঙ্কারপূর্ণ কাব্যবিন্যাস তাঁর কাব্যমানকে উন্নত শৈলীতে পৌঁছে দিয়েছে।
আত্তারের মাসনাভিগুলো নানা কাহিনী ও হেকায়াতে পূর্ণ। আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে স্বীয় বক্তব্য উপস্থানের উদ্দেশ্যেই মূলত আত্তার এসব কাহিনীর অবতারণা করেছেন। এসব কাহিনীর চরিত্রগুলোও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের। যার ফলে এসব চরিত্রের মাধ্যমে তদানীন্তন সমাজের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কেও অবহিত হওয়া যায়।
গল্প বলার ক্ষমতা ছিল আত্তারের সত্তাগত প্রতিভা। তাঁর এই প্রতিভা প্রথমবার পরিলক্ষিত হয় তাঁর খসরু নামে মাসনাভিতে, যেটি তিনি যৌবন বয়সেই রচনা করেছিলেন। যদিও এই কাহিনীকাব্যে তুর্কি স¤্রাটের পুত্র খসরু এবং খুজিস্তানের রাজকুমারী গুলরোখের ভালোবাসা এবং রোমাঞ্চের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তবে আত্তার এতে এতসব রূপকথা ও কাহিনীর সমাবেশ ঘটিয়েছেন যার ফলে এ কাহিনীকাব্যকে লোকসংস্কৃতি ও তুলনামূলক ইতিহাসের আধার হিসেবে অবিহিত করা যায়। গল্প বলার ক্ষেত্রে আত্তার ছিলেন সানায়ির চেয়েও সিদ্ধহস্ত।
আমরা যদি আত্তারের কবি-জীবনের প্রথম দিকের রচনা খসরু নামে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাঁর অন্যসব সাহিত্যকর্মের দিকে দৃষ্টি ফেলি তাহলে তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকর্মকে তিনটি যুগে বিভক্ত করতে পারি। প্রথম যুগের রচনাগুলোতে অধ্যাত্মবাদ ও গল্পবলার শৈলী, এ দুইয়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ভারসাম্য লক্ষ করা যায়, যেগুলোতে শৈলীগত সব ধারাই অনুসরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় যুগের রচনাগুলোতে দেখি সৃষ্টি-কাঠামো ও সাহিত্য-শৈলীর চেয়ে আবেগ, উদ্দীপনা ও স্রষ্টার একত্বের প্রতিই আত্তারের অধিক মনোযোগ। তৃতীয় যুগের রচনাগুলোতে কবি বয়োবৃদ্ধ। এসব রচনায় তাঁকে হজরত আলী (রা.)-এর আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব বর্ণনার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় আকৃষ্ট দেখা যায়, তাঁর চৈন্তিক শৃঙ্খলা এবং বর্ণন-দক্ষতা তেমন একটা চোখে পড়ে না।
সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তিন শ্রেণির মধ্যে শুধু প্রথম শ্রেণির রচনাগুলোকে (অর্থাৎ মানতেকুত তেইর, এলাহি নামে, মসিবাত নামে এই শ্রেণির অন্যান্য রচনা) দ্বিধাহীনভাবে আত্তারের রচনা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মনে করা হয়, তৃতীয় যুগের রচনাগুলোতে হয় বিকৃতি ঘটেছে অথবা এগুলো সুস্পষ্টভাবেই অন্য কারো রচনা। যেমন : মাজহারুল আজায়েব, খাইয়াত নামে, প্রভৃতি। সর্বশেষ গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, তৃতীয় যুগের রচনাগুলো নিশ্চয় ভিন্ন এক আত্তার কর্তৃক রচিত।
আত্তারের মাসনাভিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসনাভি হচ্ছে এলাহি নামে। প্রকৃতপক্ষে এই কাহিনীকাব্য এমন কিছু ছোট ছোট গল্প ও কাহিনীর সমাহার, যেগুলো মূলত পিতা-পুত্রের কথোপকথনকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পুত্র বেশকিছু অমূলক বিষয় সম্পর্কে পিতার কাছে জানতে চাচ্ছে। পিতা সেসব বিষয়ের বাস্তবতা পুত্রের কাছে সুস্পষ্ট করছেন। আত্তার এসব কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকে আধ্যাত্মিক, চারিত্রিক ও সামাজিক অনেক বিষয়ই বর্ণনা করছেন।
তাঁর আর একটি উল্লেখযোগ্য কাহিনীকাব্য হচ্ছে মসিবাত নামে। যেটিতে আত্তার আধ্যাত্মিক সাধকের নানা আত্মিক সমস্যা ও দুর্যোগ বর্ণনার পাশাপাশি বহু কাহিনীর সমাবেশ ঘটিয়েছেন। মূলত এটি আত্মার পরিক্রমণের গল্প, যাতে সাধক অদৃশ্য জগৎ থেকে স্বীয় ভ্রমণ-পথ অনুধ্যান করে এবং মুর্শিদের পথনির্দেশনায় পথের নানা স্তর অতিক্রম করে।
সুফিদের নিকট আধ্যাত্মিক সাধনার সাতটি স্তর বিদ্যমান। আত্তার তাঁর আধ্যাত্মিক বক্তব্য সম্বলিত বিভিন্ন রচনাবলিতে এই সাতটি স্তরকে প্রেমের শহর তথা অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার পথ-পরিক্রমার সাতটি উপত্যকার সাথে তুলনা করেছেন। প্রথম উপত্যকা বা স্তর হচ্ছে ‘তালব’ বা অনুসন্ধান। যার মাধ্যমে সাধক বা বান্দা তার অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার পথ অনুসন্ধান করবে। দ্বিতীয় উপত্যকা বা স্তর হচ্ছে ‘এশক’ বা প্রেম। যে এশকের তাড়নায় সাধক তার গন্তব্যে পৌঁছতে দ্রুত পদক্ষেপ ফেলবে। তৃতীয় স্তর ‘মারেফাত’ বা অন্তর্দৃষ্টি, যার মাধ্যমে সাধক তার সাধ্যানুযায়ী স্বীয় গন্তব্যে পৌঁছার পথ খুঁজে পাবে। চতুর্থ স্তর হচ্ছে ‘এস্তেগনা’ বা স্বয়ম্ভরতা। সাধক বান্দা তার সাধনার এই স্তরে পৌঁছে স্বীয় প্রেমাস্পদ মহান আল্লাহ্র প্রতি এতটাই আস্থাশীল হয়ে উঠবে যে, জাগতিক কোনো কিছুর প্রতিই সে আর কোনো পিছুটান বা মুখাপেক্ষিতা অনুভব করবে না। এই সাধনার পঞ্চম স্তর হচ্ছে ‘তাওহিদ’ বা একত্ববাদ। আধ্যাত্মিক সাধক তার সাধনার এই স্তরে পৌঁছে যে দিকেই দৃষ্টি দেবে সর্বত্রই মহিমাময় স্রষ্টার একত্বের অস্তিত্বই প্রত্যক্ষ করবে। ষষ্ঠ স্তর হচ্ছে ‘হায়রাত’ বা বিস্ময়, বিহ্বলতা। বান্দা এই স্তরে পৌঁছে মহান স্রষ্টার প্রেম-ভালোবাসা ও ক্ষমতার অসীমতার বিপরীতে স্বীয় জ্ঞান ও ক্ষমতার সসীমতা, অপ্রতুলতা এবং সীমাবদ্ধতা অনুধাবন করে বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে পড়বে। এই সাধনার সপ্তম বা সর্বশেষ স্তর হচ্ছে ‘ফানা’ বা বিলয়, বিলুপ্তি, নিশ্চিহ্নতা, অনস্তিত্ব। এই স্তরে পৌঁছে বান্দা বা সাধকের যাবতীয় মানবীয় কামনা-বাসনা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সে আত্মপরিচয় ও আত্মসত্তাকে বিলীন করে দিয়ে প্রকৃত প্রেমাস্পদ মহান স্রষ্টার সত্তায় একাকার হয়ে মিলিয়ে যায়। বস্তুতপক্ষে সে ‘ফানা’ বা অনস্তিত্ব পার হয়ে ‘বাকা’ বা অস্তিত্বে পৌঁছে। নদী যেমন মোহনায় নিজেকে বিলুপ্ত করে সাগরে গিয়ে পৌঁছে।
সুফিতত্ত্বের এই জটিল দর্শনকে রূপক গল্পের মাধ্যমে আত্তার তাঁর মাসনাভি বা দ্বিপদী কাব্য মানতেকুত তেইর-এ অত্যন্ত সরল ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন। এটি আত্তারের আধ্যাত্মিক মাসনাভিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, যেটিকে আত্তারের শ্রেষ্ঠকর্ম হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। শুধু তাই নয়, এটি বিশ্বসাহিত্যেরও এক অমূল্য সম্পদ। আত্তার পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আন-নামলের ১৬ নং আয়াত থেকে এ গ্রন্থের নামকরণ করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে :
“وورث سلیمن داود وقال یایها الناس علمنا منطق الطیر”
[সোলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হলেন এবং তিনি বললেন, হে লোকসকল, আমাকে ‘মানতেকুত তেইর’ বা পাখির ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে]
৪২০০-এর অধিক বেইত সম্বলিত এই মাসনাভিটি মূলত একটি রূপক কাহিনীকাব্য। ‘সিমোরগ’ নামের এক কিংবদন্তি পাখিকে কেন্দ্র করে পাখিদের আলোচনা বা সমাবেশ এ গ্রন্থের বিষয়বস্তু। এসব পাখি দ্বারা আত্তার সত্যপথের সাধক পথিক এবং ‘সিমোরগ’ দ্বারা মহান স্রষ্টার অস্তিত্বকেই বোঝাতে চেয়েছেন। আত্তার তাঁর এ গ্রন্থে অধ্যাত্মবাদের সূক্ষ্ম বিষয়গুলোকে মনোরম-মধুর গল্প-সূত্রে বর্ণনা করেছেন। গল্পের মূল পরিকল্পনা এরকম :
বলে উঠল : আমি সেই বাদশাহ্র নাম জানি। তাঁর নাম ‘সিমোরগ’। ‘সিমোরগের’ পাখিদের বাদশাহ্ হওয়ার উপযুক্ততাও বর্ণনা করল সে এবং এও বলল যে, ‘সিমোরগ’-এর আবাস সাত উপত্যকার ওপারে। তার সান্নিধ্যে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের এই সাত উপত্যকা পাড়ি দিয়েই যেতে হবে। উল্লেখ্য, আত্তার এখানে পাখিদের দ্বারা সত্যপথের অনুসন্ধানী সাধকদের, হুদহুদ বা কাঠঠোকরা পাখি দ্বারা সেই পথের পথনির্দেশক মুর্শিদকে এবং ‘সিমোরগ’ দ্বারা চিরসত্য মহান ¯্রষ্টাকে বুঝিয়েছেন। আর সাত উপত্যকা দ্বারা উপরোল্লিখিত আধ্যাত্মিক সাধনার পথপরিক্রমার সাতটি স্তরকে বুঝিয়েছেন।-পখিদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাবাহক-একদিন পক্ষিকুল তাদের বাদশাহ্ বা শাসক নির্বাচন ও অনুসন্ধানের জন্য একত্রিত হলো। তাদের সবার বক্তব্য হচ্ছে, এমন কোনো শহর নেই যে শহরের কোনো শাসক নেই। আমাদেরও আমাদের শাসক কে, তা অনুসন্ধান করা উচিত। সমবেত পাখিদের মধ্য থেকে হুদহুদ (কাঠঠোকরা)
হুদহুদের কথা মতো নানা উজর-আপত্তি (পার্থিব জগতের প্রতি মানুষের ব্যাপক আসক্তি ও আগ্রহ, যেগুলোর প্রত্যেকটি স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের অভিযাত্রার সাধনার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়) সত্ত্বেও পাখিরা ‘সিমোরগ’র সান্নিধ্য লাভের যাত্রায় যুক্ত হয়। এই অভিযাত্রার প্রাক্কালে আত্তার এ পথের বিপদসঙ্কুলতা এবং দৃষ্টান্ত হিসেবে শেখ সানায়ানের কাহিনীরও অবতারণা করেছেন। হুদহুদ পথের বিপদাপদ সম্পর্কে পাখিদের অবহিত করে এবং তাদেরকে এই প্রতিশ্রুতিও দেয় যে, ‘সিমোরগ’র আবাস পর্যন্ত সে তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে তাদের পরিক্রমণ-আগ্রহ থাকতে হবে এবং দূর-পথ পরিক্রমণে যে নানা রকম কষ্টক্লেশ আসবে তাও সহ্য করতে হবে। কিন্তু পথিমধ্যে অধিকাংশ পাখিই নানা উজর-আপত্তি ও বাহানা উপস্থাপন করে এই কষ্টযাত্রা থেকে পালিয়ে যায়। যেমন : ফুলপ্রেমিক বুলবুল এই বলে অজুহাত পেশ করে :
درسرمازعشقگل،سودابساست
زانکهمطلوبم،گلرعنابساست
طاقتسيمرغ،ناردبلبلي
بلبليرابسبود،عشقگلي
[আমার মাথায় ফুলের প্রেম, এই লেনদেনই যথেষ্ট
আমার উদ্দিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ফুল এইতো যথেষ্ট
‘সিমোরগ’-এর সান্নিধ্য-ক্ষমতা বুলবুলের নেই
বুলবুলের জন্য ফুলের ভালোবাসাই ছিল যথেষ্ট]
এর জবাবে হুদহুদ তাকে বলে :
گل اگرچه هست بس صاحب جمال
حسن او در هفته اي گيرد زوال
عشق چيزي کان زوال آرد پديد
کاملا را زان ملال آرد پديد
خنده گل گرچه در کارت فکند
روز و شب، در ناله زارت فکند
در گذار از گل، که گل هر نوبهار
بر تو مي خندد، نه در تو، شرم دار
[যদিও ফুল যথেষ্ট সৌন্দর্যের অধিকারী
তবে তার সৌন্দর্য এক সপ্তাহেই হয় বিলীন
ভালোবাসা এমন বস্তু যা সৃষ্টি করে অবক্ষয়
সেই অবসাদ থেকেই সৃষ্টি করে পূর্ণতাকে
ফুলের হাসি যদিও তোমার কাজে নিক্ষিপ্ত
দিবানিশি, তোমার ক্রন্দনরোলে নিক্ষিপ্ত
ছাড় ফুলের কথা, ফুলতো প্রতি নববসন্তে
তোমার ওপর হাসে, তোমার ভেতরে নয়, লজ্জা কর (এমন অজুহাতে)]
ময়ূর এই বলে অজুহাত দেখায় :
کي بود سيمرغ را، پرواي من
بس بود فردوس اعلي، جاي من
من ندارم در جهان کاري دگر
تا بهشتم ره دهد، باري دگر
[কিসের পরোয়া ছিল আমার ‘সিমোরগ’-অন্বিষ্ট
সুউচ্চ ফেরদৌসই আমার স্থান, এইতো ছিল যথেষ্ট
জগতে আমার আরতো নেই কোনো কারবার
যেন আমায় বেহেশতে স্থান দেয় পুনর্বার]
হুদহুদ তাকে উপদেশ দিয়ে বলে :
چون به دريا مي تواني راه يافت
سوي يک شبنم، چرا بايد شتافت
…
گر تو هستي مرد کلي، کل ببين
کل طلب، کل باش، کل شو، کل ببين
[যখন তুমি সমুদ্র-মুখে পথ পেতে পার
কেন তবে শিশির বিন্দু-মুখে ছোটাছুটি কর
যেহেতু তুমি পূর্ণতার অস্তিত্ব, তাই পূর্ণতাকেই দেখ
পূর্ণ অনুসন্ধান কর, পূর্ণ থাক, পূর্ণ হও, পূর্ণতাকেই দেখ]
কিন্তু যেসব পাখি নানা অজুহাত উপস্থাপন করছিল তাদের কেউই হুদহুদের জবাব এবং উপদেশে সন্তুষ্ট হতে পারে না। এক এক করে তারা সবাই এই অভিযাত্রা থেকে সরে পড়ে। অবশিষ্ট পাখিদের মধ্য থেকে মাত্র ত্রিশটি পাখি (সি মোরগ) বিপদসঙ্কুল সাতটি উপত্যকা পার হয়ে ‘সিমোরগ’র আবাসে গিয়ে পৌঁছে এবং সেখানে তারা নিজেদের অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে বিস্মিত-বিহ্বল হয়ে পড়ে। মহাশক্তিধর ‘সিমোরগ’-এর কাছে নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন (ফানা) করে দেয়। এভাবে বেশ ক’বছর কেটে যায়। তারপর তারা ফানা থেকে ‘বাকা’ বা অবিনশ্বরতার আভরণ পরে তাদের বাদশাহ্র দরবারে গৃহীত হয়। এখানে তাদের কাছে মনে হয় তারা যেন স্বচ্ছ পানিবেষ্টিত একটি উপত্যকা অথবা একটি আয়নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে। যখন তারা ‘সিমোরগ’কে চাক্ষুস করতে চায় তখন তারা যে সি মোরগ বা ত্রিশ পাখি ছিল তাদেরকেই দেখতে পায়। যে দৃশ্যের বর্ণনা আত্তার তাঁর মানতেকুত তেইরে এভাবে দিয়েছেন :
چون نگه کردند آن سي مرغ زود
بي شک آن سيمرغ آن سي مرغ بود
در تحير جمله سرگردان شدند
مي ندانستند اين يا آن شدند
خويش را ديدند سيمرغ تمام
بود خود سي مرغ، سيمرغ مدام
[যখন সহসাই ওই ত্রিশ পাখি (সি মোরগ) তাকাল
(দেখে) সন্দেহাতীত ওই ‘সিমোরগ’ সেই ত্রিশ পাখিই (সি মোরগ) ছিল
বিহ্বলতায় সবাই বিস্ময়-বিমূঢ় হলো
তারা জানত যে, এ-ই অথবা সে-ই হয়েছে
নিজেদের দেখল তারা পূর্ণ ‘সিমোরগ’
ছিল স্বয়ং ত্রিশ পাখি (সি মোরগ) অবিনশ্বর ‘সিমোরগ’]
বস্তুতপক্ষে তারা এটা উপলব্ধি করতে পারল যে, এই ‘সিমোরগ’ আসলে ওই ত্রিশ পাখিই। অর্থাৎ তারা অজ্ঞাতসারে বাইরের জগতে যে সত্তাকে অনুসন্ধান করছিল সেই সত্তাকে তারা স্বীয় অন্তরেই খুঁজে পেয়েছে।
এই গ্রন্থের চমৎকারিত্ব হচ্ছে, পাখিদের বাদশাহ্ কিংবদন্তি পাখি ‘সিমোরগ’ এবং অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছা ত্রিশ পাখি, ফারসিতে ‘সি মোরগ’, এই দুইয়ের চমৎকার অনুপ্রাস। যার দৃষ্টান্ত শুধু ফারসি সাহিত্যেই নয়, বিশ্বসাহিত্যেও বিরল। এই বিরল কাহিনীকাব্য, যা কবির উন্নত সৃজনদক্ষতা ও কবিকল্পনার ধারক এবং অধ্যাত্মবাদের নিগূঢ় রহস্যাবলির সহজ-সরল ও সাবলীল বর্ণনা এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার আধার, ফারসি সাহিত্যের কালজয়ী শ্রেষ্ঠকর্মগুলোর অন্যতম। আত্তারের মানতেকুত তেইর-এর মূল শিক্ষা হিসেবে আমরা দেখি, শুধু আধ্যাত্মিক সাধনার ক্ষেত্রেই নয়; বরং পার্থিব জীবনের নানারূপ সাফল্যে পৌঁছার ক্ষেত্রেও ব্যক্তির কঠিন সাধনা বাঞ্ছনীয়। আর সেই সাফল্যে পৌঁছার আগে লক্ষ্য স্থির করা অবশ্যম্ভাবী। আর লক্ষ স্থির করার পূর্বেই আসে ইপ্সিত লক্ষ্যের শুভাশুভ অনুসন্ধান। অধ্যাত্মবাদের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘তালব’। সুতরাং একথা দৃঢ়চিত্তেই বলা যায় যে, আত্তারের মানতেকুত তেইর শুধু আধ্যাত্মিক সাধনার পথের অভিযাত্রীদের জন্যই নয়; বরং জগতের সকল সাফল্যকামী মানুষের জন্যই অবশ্যপাঠ্য এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আর সেকারণেই হয়তো পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় মানতেকুত তেইর অনূদিত হয়ে পঠিত এবং সমাদৃত হচ্ছে।
নিঃসন্দেহে ফারসি সাহিত্যের ইতিহাসে সুফিকবিদের মধ্যে আত্তারের নাম উজ্জ্বলতর। তাঁর ভালোবাসা ও আকুলতাপূর্ণ চিত্তাকর্ষক সরল বক্তব্য, একই সাথে যেগুলো চিরন্তন সত্য মহান প্রভুর সান্নিধ্যান্বেষী অভিযাত্রীদের জন্য পথনির্দেশক, অভীষ্ট গন্তব্যের পথ দেখিয়ে দেয়। তিনি অধ্যাত্মবাদের অমিয় বাণীগুলো সাধারণ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরাভরণ গতিশীল, সাবলীল ভাষাকেই নির্বাচন করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ পারঙ্গমতার দৃষ্টান্ত অন্যান্য কবির মধ্যে বিরল। আত্তারই প্রথম সহজ-সরল ভাষা এবং প্রচলিত কেচ্ছা-কাহিনীর মাধ্যমে অধ্যাত্মবাদের জটিল তত্ত্বকে সর্বসাধারণ্যে সহজবোধ্য করে তোলেন। সম্ভবত এ কারণেই আত্তারের অনুজ কবি ও তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত-অনুরক্ত, অধ্যাত্মবাদের স¤্রাট মওলানা জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন :
عطار روح بود سنائي دوچشم او
ما از پي سنائي و عطار آمديم
[আত্তার ছিলেন (অধ্যাত্মবাদের) আত্মা আর সানায়ি তাঁর দুচোখ
আমরা সানায়ি আর আত্তারের অনুগমন করেছি]
আত্তারের মৃত্যুতারিখ নিয়েও জীবনীকার ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে তাঁর মৃত্যুসাল ১২৩০ খ্রিস্টাব্দ বলেই সর্বাধিক মত পাওয়া যায়। ইবনুল ফাওতির বর্ণনা মতে, আত্তারের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনি, তিনি মোঙ্গল সৈনিকের হাতে শাহাদাত বরণ করেন এবং তাঁকে নিশাপুরেই সমাহিত করা হয়। ঐতিহাসিক ইবনুল আসিরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, সে সময়ে মোঙ্গলদের অত্যাচারে নিশাপুর এমন ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছিলো যে, সেখানে বসবাসের উপযোগী দুটি বাড়িও অবশিষ্ট ছিলো না। এ সময় আত্তার নিশাপুরেই অবস্থান করছিলেন। নিশাপুর ধ্বংসযজ্ঞের কালে একজন মোঙ্গল সৈনিক আত্তারকে হত্যা করতে চাইলে অপর একজন মোঙ্গল সৈনিক তাঁকে এক হাজার মুদ্রায় ক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করে। আত্তার তাকে লক্ষ্য করে বলেন, তাঁর মূল্য এর চেয়ে অধিক। কিছুক্ষণ পর অপর এক মোঙ্গল সৈনিক এসে তাঁকে একভার ঘাসের বিনিময়ে ক্রয় করতে চাইলো। এ কথা শুনে আত্তার বললেন, আমার মূল্য এরে চেয়ে কম। এর নিকটই আমাকে বিক্রি কর। এ কথা শুনে যে মোঙ্গল সৈনিক আত্তারকে বন্দি করেছিল সে ভাবল, আত্তার তার সাথে পরিহাস করছেন। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ সে তলোয়ারের আঘাতে আত্তারকে হত্যা করে ফেলল। কিন্তু পরবর্তীতে যখন সে জানতে পারল যে, সে মূলত সমকালের শ্রেষ্ঠ সুফি সাধককে হত্যা করেছে, তখন তার ভেতর অনুশোচনাবোধ তৈরি হয় এবং সে দরবেশী পন্থা গ্রহণ করে আত্তারের মাজারের খেদমতে আত্মনিয়োগ করে। বাকি জীবন সে এখানেই অতিবাহিত করে।
ইরানের খোরাসান প্রদেশের রাজধানী মাশহাদ শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে, নিশাপুরে ওমর খৈয়্যামের সমাধির কাছাকাছি আত্তারের মাজার অবস্থিত। দৌলতশাহ্র বর্ণনা মতে, কাজী ইয়াহইয়া বিন সাইদ সর্বপ্রথম আত্তারের কবরের ওপর সৌধের ভিত্তি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে নিজাম উদ্দিন আমীর আলী শের এর উপরিস্থ স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। যেটি হযরত সাইয়্যেদ আরেফ কাসেম আনোয়ার এবং শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তারের রওজা হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। দৌলতশাহর বর্ণনা মতে, কাজী ইয়াহইয়া বিন সাইদ আত্তারের মৃত্যুর পর ১২৩০ খ্রিস্টাব্দে সৌধটি নির্মাণ করলেও কালক্রমে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে আমির আলী শের ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে এটি পুনঃনির্মাণ করেন। কাচার স¤্রাট মোহাম্মদ আলী শাহ্র শাসনামলের শেষ দিকে নিরুদ্দৌলা খোরাসানের প্রাদেশিক গভর্নর নিযুক্ত হলে আত্তারের কবরের ওপর একটি জাঁকজমকপূর্ণ সৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি তেহরানে চলে আসায় এ কাজটি অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
বর্তমানে আত্তারের কবরের ওপর যে সৌকর্যমণ্ডিত স্থাপনাটি লক্ষ করা যায় তা নির্মিত হয় আন্জুমানে আসারে মিল্লিয়ে ইরান-এর উদ্যোগে। ১৯৫৩ এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে পরপর দু’বার পূর্বের আকৃতি ও নকশাকে ঠিক রেখে এই সমাধিসৌধটি দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে সুসজ্জিত করা হয়। প্রতিবছর ইরানি বর্ষপঞ্জিকার প্রথম মাস ফারভারদিনের ২৫ তারিখ (১৪ এপ্রিল) জাতীয়ভাবে আত্তার দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে নিশাপুরে তাঁর মাজার প্রাঙ্গণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফারসি সাহিত্যের অধ্যাত্মচিন্তার আত্মা শেখ ফরিদ উদ্দিন আত্তারের পবিত্র মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে নিশাপুরে আগমন করে।
ফরিদ উদ্দিন আত্তার : ফারসি সাহিত্যে অধ্যাত্মচিন্তার আত্মা | |
আসরার নামে, এলাহি নামে, মসিবাত নামে, জাওয়াহেরুজ্জাত, ওসিয়াত নামে, মানতেকুত তেইর, বুলবুল নামে, হায়দার নামে, শুতুর নামে, মুখতার নামে, শাহনামে | |
Template | Organized |