এজেন্সি
পারভিন এতেসামির কাব্যে আধুনিকতা ও বিষয়বৈচিত্র্য

পারভিন এতেসামির কাব্যে আধুনিকতা ও বিষয়বৈচিত্র্য

পারভিন এতেসামির কাব্যে আধুনিকতা ও বিষয়বৈচিত্র্য

-ড. তাহমিনা বেগম
ইরানের সাহিত্য আধুনিকতায় সম্প্রসারিত এবং সমাদৃত হতে দেখা যায় মূলত বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। সাংবিধানিক অধিকার আন্দোলন এই আধুনিক ধারাবাহিকতার একটি নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে। ইরানি তথা ফারসি কাব্য সাহিত্যকে দুটি ধারায় বিন্যাস করে, তা হলো ক্ল্যাসিক ও আধুনিক। এ সময় পাশ্চাত্যের প্রভাবে নতুন নতুন বিষয় ফারসি সাহিত্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। এগুলো হচ্ছে : স্বাধীনতার চেতনা, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্বাস, রাজনৈতিক সমঅধিকার চিন্তা, স্বাধীনতা চেতনার সমস্যা এবং সংবাদপত্র ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, স্বদেশপ্রেম এবং অবৈধ বিদেশিদের অনুপ্রবেশের প্রতি ঘৃণা। এসব বিষয় গদ্য এবং পদ্য উভয় শাখায় ফারসি সাহিত্যকে উজ্জ্বল করেছে। পূর্ববর্তী সাহিত্য সাধারণ মানুষের জীবনবোধ ও রুচিবোধ থেকে যতটা দূরে ছিল ক্রমান্বয়ে সামাজিক প্রয়োজন ও মানুষের সচেতনতায় সেখানে নতুনত্বের নানাবিধ বিষয়ের উপস্থাপনায় ফারসি সাহিত্য আধুনিকতার এক উদাহরণ হয়ে ওঠে। উপযুক্ত শব্দ ও বাক্যের বিন্যাস একে সর্বজনীন করে তোলে। এ সময়ের একজন শক্তিমান কবি যিনি একই সাথে পুরাতন ও আধুনিকতাকে সাথে নিয়ে বিশ্বকে ফারসি সাহিত্যের নতুন দিগন্ত দিয়েছেন তিনি হলেন পারভিন এতেসামি। সাহিত্যে আধুনিকতায় বিষয় ও বৈচিত্র্যের সমন্বয় তাঁর কবিতাকে অনন্য করেছে, মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। হয়ে উঠেছেন তিনি সাধারণ মানুষের কবি।
১৯০৭ সালে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরে পারভিন এতেসামির জন্ম। বংশপরম্পরায় পারভিন মায়ের দিক থেকে আজারবাইজানি এবং বাবার দিক থেকে আশতিয়ানি ছিলেন। তাঁর পিতা ইউসুফ এতেসামি সমকালীন একজন বিখ্যাত জ্ঞানী, অনুবাদক ও লেখক হবার পাশাপাশি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ছিলেন। মূলত বাবার সাহচর্যই পারভিনকে শৈশব থেকে আরম্ভ করে ফারসি পদ্য ও গদ্যবিষয়ক সম্যক জ্ঞানলাভে সহযোগিতা করে। পরবর্তীকালে তিনি আমেরিকান গার্লস কলেজ থেকে ইংরেজি ও আধুনিক শিক্ষালাভ করেন। কলেজের বিদায় বেলায় প্রকাশিত স্মারকে পারভিনের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়- যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ কবিতার প্রথম দুটি লাইন ছিল ,
ای نهال آرزو خوش زی که بار آورده ای
غنچه بی باد صبا گل بی بهار آورده ای
‘ফল বয়ে আনা এ আশার চারা গাছ সুখে থেক
হিমেল হাওয়া ছাড়াই কুঁড়িতে বিনা বসন্তেই এনেছ ফুল।’
আধুনিকতাকে বুকে ধারণ করা পারভিন ছিলেন স্বাধীনচেতা একজন কবি। ছাত্রজীবন হতেই পারভিনের ঝোঁক ছিল কবিতার প্রতি। ফলে যৌবনকাল কবিকে এক অনাড়ম্বর জীবন উপহার দেয়। সাহিত্য আসরে স্বরচিত কবিতাপাঠ, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ তাঁকে নতুন বলয়ের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তারুণ্যের উদ্দীপনায় সাহিত্য জীবন শুরু হলেও মাত্র ৩৫ বছরেই এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছিল এই কবিকে। স্বল্প বয়সেই এই কবি পাঁচ হাজার ছয়শ বেইত সম্বলিত দিওয়ান রচনা করে সাহিত্যে জায়গা করে নিয়েছেন।
শিল্পকে ধারণ করা কবি-জীবনের সাথে মিলেনি তাঁর চলার পথের সঙ্গীর মননশীলতা। ২৮ বছর সয়সে ১৯৩৪ সালে পেশায় সৈনিক আপন চাচাত ভাইয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েও সংসারের শিল্পকলায় নিজেকে বাঁধতে পারেননি পারভিন। মাত্র তিন মাসেই বিচ্ছেদের মাধ্যমে একাকীত্বের পথ ধরেন এই কবি। ভালোবাসাময় যে সস্পর্ক বিয়ে তা কবিকে যন্ত্রণা, বঞ্চনা এবং বন্দিত্ব ব্যতীত কিছুই দিতে পারেনি। যা তাঁর কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রাণবন্তভাবে। কবি বলেন,
جز سرزنش و بد سری خار چه ديدی؟ ای گل! تو ز جمعيت گلزار چه ديدی؟
جز مشتری سفله به بازار چه ديدی؟ ای لعل دل افروز!تو با اين همه پرتو
غير از قفس،ای مرغ گرفتارچه ، چه ديدی؟ رفتی به چمن ، ليک قفس گشت نصيبت
হে পুষ্প, তুমি ফুলের আসরে কী দেখেছ?
কাঁটার রুক্ষতা আর ভর্ৎসনা ছাড়া কী দেখেছ?
বাগানে গমন করেছিলে কিন্তু ভাগ্যে জুটেছে খাঁচা
ওহে বন্দিনী পাখি! ফুলবনে ঢুকে কী দেখেছ?
পারভিনের দিওয়ানে কাসিদা, মসনবি ও কেতআসহ বিভিন্ন ধরনের কবিতা স্থান পেয়েছে। সমাজ ও সমাজের মানুষের বিভিন্ন চিত্র, যেমন : নারী, শিশু, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের দাবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। একই সাথে নৈতিক শিক্ষার বিষয় ও সৎকর্মের অনুপ্রেরণাও তাঁর কবিতাকে অলংকৃত করেছে। আধুনিক বিষয়ের সাথে ইত্যকার বিষয়াবলি মানুষের মনের খোরাক জুগিয়েছে।
ইরানের সমস্যাসঙ্কুল গোলযোগপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার ভেতরেই বেড়ে ওঠা একজন কবি পারভিন। সমকালীন অন্যান্য কবির মতো তাঁর কবিতাতেও শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক নানা অসঙ্গতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় সহজেই। পারভিন এতেসামি আত্মিক সৌন্দর্য এবং চিন্তার দৃঢ়তার মাধ্যমে এসব ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
পারভিনের কবিতার বিষয়বস্তু এবং কাব্যভাবনা যদিও আধুনিক ভাবধারায় রচিত তবুও তাঁর কাব্যসাহিত্যে চিরায়ত ধারার অনুসরণই দৃশ্যমান। তাঁর কবিতায় অনেক নামকরা কবিদের অনুকরণ দেখতে পাওয়া যায় যার মধ্যে নাসের খসরু, শেখ সাদি অন্যতম। অপরদিকে তাঁর কবিতায় অন্তর্নিহিত অর্থের দিক থেকে আরেফ ও সাধকগণের চিন্তারও সমন্বয় খুঁজে পাওয়া যায়। যা কবির আধুনিক কবিতায় একটি স্বতন্ত্র ভাব এনে দিয়েছে।
পারভিন যেমন নিপীড়ন, বঞ্চনা, দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার তেমনি নির্দয় অর্থশালী, বিত্তবান অভিজাত শ্রেণির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ। স্বৈরাচারী অত্যাচারী রাজার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এবং মানবতার পক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থান। তাই পারভিনের চোখ নিপীড়িত মানুষের রক্তে গড়া রাজার রাজমুকুট ও সিংহাসনে মূলত বঞ্চিত মানুষের ঘামই চিকচিক করে জ্বলতে দেখে,

فرياد شوق ز هر کوی و بام خاست روزی گذشت پادشهی از گذرگهی
کاين تابناک چيست که بر تاج پادشاست؟ پرسيد زان ميانه يکی کودک يتيم:
پيداست آن قدر که متاعی گرانبهاست آن يک جواب داد:چه دانيم ماکه چيست؟
اين اشک ديدۀ من و خون دل شماست نزديک رفت پير زنی کوژ پشت و گفت
اين گرگ سال هاست که با گله آشناس ما را به رخت و چوب شبانی فريفته است
একদা রাস্তা দিয়ে রাজা চলে যায়,
প্রতিটি অলি-গলি ও ছাদ থেকে ভেসে আসে ফরিয়াদ।
একটি অনাথ শিশু বলে ওঠে,
‘রাজার মাথায় অমন মুক্তোর মতো কী সে চমকায়?’
অন্যজন স্বর তোলে, ‘বলতে পারি না-
তবে জানি মূল্যবান বস্তু এক, তাই জ্বলে কি না!’
বৃদ্ধা এক ছুটে এসে বলে,
‘ওটাতো আমার অশ্রু, তোমাদের রক্তের কণিকা
সমস্ত জমাট হয়ে রাজার পাগড়ি মাঝে জ্বলে।’
যেমন ভেড়ার দলে বাঘ এসে ভেড়া শেষ করে।
নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয় আধুনিক কবি পারভিনকে। যিনি সমাজে নারীর অবস্থা এবং মর্যাদা সম্পর্কে দৃঢ়তার সাথে কলম ধরেছেন। ফেরেশতায়ে উনস বা মায়ের ফেরেশতা নামের কবিতায় কবি মাকে একজন ফেরেশতার সাথে তুলনা করেছেন। অক্সিজেনবিহীন মানুষ যেমন নিষ্প্রাণ তেমনি নারীবিহীন একটি পরিবার। দৈহিক দিক থেকে নারীরা পুরুষদের অপেক্ষা দুর্বল এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। এরপরও পারিবারিক জীবনে মায়ের ভূমিকা মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন,
در آن وجود که دل مرد مرده است روان در آن سرای که زن نيست ، انس و شفقت نيست
برای مرد کمال و برای زن نقصان به هيچ مبحث و ديباچه ای، قضا ننوشت
যে ঘরে নারী নেই, সেখানে প্রেম-মায়ার চিহ্ন নেই
যে দেহে মনের মৃত্যু হয়েছে, সেতো নিসাড় নিষ্প্রাণ।
কোথাও, কোন ভূমিকায় ভাগ্যলিপি এমন কথা লিখেনি
পুরুষের জন্য পূর্ণতা আর নারীর ভাগ্যে ত্রুটি-অপূর্ণতা।
শিক্ষা একটি জাতিকে উন্নত করে তোলে। এরপরও সমাজব্যবস্থায় এর অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় প্রবলভাবে। নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শিক্ষা অপরিহার্য তবুও পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের শিক্ষা থেকে পিছিয়ে থাকার দৃশ্য খুব সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। যেখানে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে নারী সেখানে নারীদের এহেন দুরবস্থা সত্যিই ভাবার মতো। সমাজে বসবাসরত প্রতিটি মানুষের উচিত স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। একজন নারী যতদিন পর্যন্ত শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকবে ততদিন পর্যন্ত সমাজের উন্নতি কোনভাবেই সম্ভব নয়। পারভিন এতেসামি নারীদের শিক্ষা থেকে দূরে থাকার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে, একটি জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন পুরুষের পাশাপাশি নারীও শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হবে। তিনি নারীদেরকে যার যার অবস্থানে থেকে শিক্ষা বা জ্ঞান আহরণের প্রতি উৎসাহিত করেন। শিক্ষার আলো ব্যতীত মানুষের জীবন অন্ধ। কবির ভাষায় উচ্চারিত হয়,
پستی نسوان ايران جمله از بی دانشی است
مرديازن برتری و رتبت از دانستن است
به که هر دختر بداند قدر علم آموختن
تا نگويد کس پسر هشيار و دختر کودن است.
ইরানের নারীদের হীনমন্যতা, সম্পূর্ণ জ্ঞানহীনতার কারণ
পুরুষ অথবা নারীর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা জ্ঞানেরই অবদান
যদি প্রতিটি মেয়ে জ্ঞান শিক্ষার মর্যাদা জানত
তবে কেউ বলত না যে, পুরুষ বুদ্ধিমান ও নারী বোকা।
‘শিশু’ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম। শিশুরা কোমলমতি স্বভাবের। ছোট্ট মনের পৃথিবীতে তাদের রয়েছে আলাদা এক ভূবন, যেটা খুব সহজ-সরল, হৃদ্যতা আর কল্পনা, কৌতুহল আর অনুভূতিতে ভরা। সকল শিশুই ভালবাসাপ্রিয়, তারা একদিকে যেমন বাবা-মার ভালবাসার প্রত্যাশী, অন্যদিকে তাদের আকাক্সক্ষা যেন মাঠে-ঘাটে, স্কুলে সকলেই তাদের স্নেহ করে। কিন্তু পিতৃহীন এক শিশুর রোনাজারি তার মায়ের মনকে বেদনায় নীল করে দেয়। বাবা না থাকাটা যেন এক অপরাধ। কবির ব্যথিত মন এই শিশুর কষ্টে প্রশ্ন রাখে, পৃথিবীর বুকে শিশুর অপরাধ কোথায়? কেন সে অন্য বাচ্চাদের মতো নয়? এমনি এক অশ্রুভরা শিশুর কাহিনী কবি পারভিন এভাবেই বর্ণনা করেন,
کز کودکان کوی به من کس نظر نداشت دی، کودکی به دامن مادر گريست
آن تير طعنه، زخم کم از نيشتر نداشت طفلی مرا ز پهلوی خود بيگانه راند
کودک مگر نبود، کسی کاو پدر نداشت اطفال را به صحبت من، از چه ميل نيست
مانا که رنج و سعی فقيران، ثمر نداشت امروز، اوستاد به درسم نگه نکرد
آن شاه شد که جامهء خلقان به بر نداشت ديروز، در ميانهء بازی، ز کودکان
اين اشک و آرزو، ز چه هر گز اثر نداشت؟ من در خيال موزه، بسی اشک ريختم
کو موزه ای به پا و کلاهی به سر نداشت جز من، ميان اين گل و باران کسی نبود
آيين کودکی، ره و رسم دگر نداشت؟ آخر تفاوت من و طفلان شهر چيست؟
وين شمع، روشنايی ازاين بيشتر نداشت هرگز درون مطبخ ما هيزمی نسوخت
کس جز من و تو، قوت ز خون جگر نداشت همسايگان ما بره و مرغ می خورند
دينار و درهمی، پدر من مگر نداشت؟ بر وصله های پيرهنم خنده می کنند
গতরাতে এক ছেলে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে
কেঁদে কেঁদে নালিশ করল, ‘মা!
পাড়ার ছেলেরা আমার দিকে তাকায়নি কেউ
আমাকে করেনি তাদের খেলার সাথি।
সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একটি ছেলে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে
তার পাশে থেকে। তার ভর্ৎসনা
তীর-বর্শার চেয়েও তীক্ষ্ণ বিষাক্ত ছিল।
ছেলেরা আমার সাথে কথা বলতে চায় না কেন মা?
তাহলে কি যার বাবা বেঁচে নেই, ছেলে হিসেবে
গণ্য হওয়ার অধিকার তার নেই?
আজ ওস্তাদজি ক্লাসে আমার পড়া দেখেননি।
গরীব হওয়াতে পরিশ্রমের যেন কোন মূল্য নেই।
গতকালের খেলায় ছেলেদের মাঝে সেই ‘রাজা’ হলো
যার পরনে পুরনো কাপড় ছিল না।
আমি জুতার চিন্তায় অনেক অশ্রু ঝরালাম,
এই অশ্রু ও আকাক্সক্ষা কখনো কি প্রভাব ফেলবে না?
কাদা ও বৃষ্টির দিনে আমি ছাড়া এমন কেউ ছিল না,
যার পায়ে জুতা আর মাথায় টুপি ছিল না।
অবশেষে শহরের ছেলেদের সাথে আমার পার্থক্য কোথায়?
ছোট ছেলেদের নিয়মনীতির কি কোন বালাই নাই?
পাশের বাড়ির লোকেরা মুরগি-ভেড়া প্রতিদিন খায়
কলিজার রক্ত চুষে বাঁচি আমি আর তুমি ছাড়া এমন তো কেউ নেই।
আমার জামার সেলাই দেখে তারা হাসাহাসি করে
দিনার-দিরহাম বলতে আমার বাবার কি কিছুই ছিল না?’
সমাজে ধনী-গরীবের বৈষম্য যত বেশি হয় সামাজিক অস্থিরতাও তত বেড়ে যায়। একদিকে ধনীদের বিত্ত-বৈভব ও বিলাসিতাপূর্ণ জীবন অন্যদিকে হত-দরিদ্রদের ছিন্নবস্ত্র-অনাহারক্লিষ্ট জীবন। একদিকে ধনীদের প্রাসাদ-অট্টালিকা, অন্যদিকে গরীবদের কুঁড়ে ঘর অথবা গাছের নিচে কিংবা পথে প্রান্তরে ঠিকানাবিহীন জীবন। একদিকে বহু মূল্য সুদৃশ্য বেশভূষার চমক এবং রকমারি খাদ্যের বাহারি আয়োজন অপরদিকে অন্নহীন, বস্ত্রহীন, ক্ষুধিত মানুষের অশ্রুসজল মলিনমুখ। একদিকে জীবনকে সুন্দর করার স্বপ্ন এবং অন্যদিকে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনাহারী মানুষদের এক মুঠো অন্নের সন্ধানে আমৃত্যু সংগ্রাম। পারভিন এতেসামি মানুষকে পুঁজিবাদী মনোবৃত্তি পরিহার করে সমাজের এতিম, অন্নহীন, বস্ত্রহীন, ক্ষুধিত মানুষদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকানোর জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। কবির ভাষায়,
صورت و سينه به ناخن می خست به سر خاک پدر، دخترکی
کاش روحم به پدر می پيوست که نه پيوند و نه مادر دارم
مرد و از رنج تهيدستی رست گريه ام بهر پدر نيست که او
دام بر هر طرف انداخت گسست زان کنم گريه که اندر يم بخت
هيچ ماهيش نيافتاد به شست شصت سال آفت اين دريا ديد
و اندرين کوی، سه داروگر هست پدرم مرد ز بی دارويی
که طبيبیش به بالين ننشست دل مسکينم از اين غم بگداخت
تا مرا ديد، در خانه ببست سوی همسايه پی نان رفتم
ليک روزی نگرفتندش دست همه ديدند که افتاده ز پای
ديشب از ديدهء من آتش جست آب دادم به پدر چون نان خواست
دل من بود که ايام شکست هم قبا داشت ثريا هم کفش
من چه می خواستم از گيتی پست؟ اين همه بخل چرا کرد، مگر
آه از اين آدمی ديو پرست! سيم و زر بود، خدايی گر بود
পিতার কবরের পাশে এক ছোট্ট বালিকা
নখের আঁচড়ে বুক আর মুখ বিক্ষত করছিল।
‘নেই কোনো আত্মীয়, নেই আমার মা
হায় আমার প্রাণ যদি বাবার কাছে উড়ে যেত।
আমার কান্না বাবার জন্য নয়। কারণ, তিনি তো
মরে বেঁচে গেছেন অভাবের যন্ত্রণা হতে।
কাঁদছি- কারণ, ভাগ্যের বিশাল সাগরে
যতদিন জাল ফেলেছি ছিঁড়ে গেছে বারে বাবে।
তিনি (পিতা) ষাট বছর এ (ভাগ্যের) সাগরের দুর্বিপাক দেখেছেন,
এর (সাগরের) কোনো মাছই ধরা পড়েনি বড়শিতে।
বাবা আমার মারা গেছেন বিনা ঔষধে, বিনা চিকিৎসায়
অথচ তিনজন চিকিৎসক আমাদের পাড়ায় ছিল বিদ্যমান
জানেন কি? আমার হতভাগা হৃদয় কাঁদছে কেন?
অসুস্থ বাবার শিয়রে আসেনি ডাক্তার কোনো
পড়শির কাছে গিয়েছিলাম আমি রুটির খোঁজে
আমাকে দেখে দুয়ার আটকে দিল অবজ্ঞা করে,
সবাই দেখেছে, তিনি পড়ে আছেন, অসহায় নিরুপায়
আসেনি কেউ দু’হাত বাড়িয়ে, হয়নি তাঁর সহায়।
রুটি চেয়েছিলেন বাবা, আমি দিয়েছিলাম পানি
গত রাত ভর জ্বলেছে সেই দুঃখের অগ্নি।
সুরাইয়ার তো জামাও ছিল তার পায়ে জুতাও ছিল
এই জগতে বঞ্চিত কেবল আমিই, আমার কপাল মন্দ ছিল।
এই সকল কার্পণ্য কেন করল? তবে
আমি হীন ধরণির কাছে কি চেয়েছি?
খোদার কর্ম যদি করত স্বর্ণ-রৌপ্যের তো কমতি নেই
হায়! (যদি) এ দৈত্য স্বভাবের মানুষ হতে রেহাই পেতাম।’

আধুনিকায়ন বিশ্বসাহিত্যে মানুষের হৃদয়কে বিশেষভাবে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। এমনকি মানুষের যাপিত জীবনকে খুব কাছ থেকে মূল্যায়নের সুযোগ করে দেয়। পারভিন ছিলেন পাশ্চাত্য দর্শনের সাথে সমধিক পরিচিত। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রভাবে বেড়ে ওঠা এই কবির কবিতায় তৎকালীন বিশ্বব্যাপী সাহিত্যিক বিপ্লবের ধারার নিদর্শন দেখা যায়। এ জাতীয় কবিতার মাধ্যমে তিনি মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন,
بزرگ بوده پرستار خردی ايشان اگر فلاطن و سقراط، بوده اند بزرگ
سپس به مکتب حکمت، حکيم شد لقمان به گهوارهء مادر، به کودکی بس خفت
يکی ست کشتی و آن ديگری کشتيبان وظيفهء زن و مرد، ای حکيم دانی چيست
دگر چه باک ز امواج و رطبه و طوفان چو نا خداست خردمند و کشتی اش محکم

প্লেটো-সক্রেটিস যদি মহান ছিলেন, শৈশবে তাঁদের
লালন পালন করেছে যে সেই তো মহান নির্দ্বিধায়
মায়ের দোলনায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটি শিশু
জ্ঞান-মনীষার পাঠশালায় পড়ে হয়েছেন লোকমান হাকিম।
ওহে জ্ঞানী, জান কি নারী ও পুরুষের দায়িত্ব কী?
একজন হলো জাহাজ আর একজন কাপ্তান।
কাপ্তান যদি বিজ্ঞ হয় আর জাহাজ মজবুত
তুফান, তরঙ্গের শঙ্কা কিসের? তুমি নির্ভয়।
পারভিনের কাব্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেহ ও আত্মা। তাঁর দৃষ্টিতে, মানুষের আত্মাই হচ্ছে মৌলিক বস্তু। মানুষের রূহ বা আত্মাকে মুখ্য বিষয় এবং দেহকে আনুষাঙ্গিক বিষয় হিসেবে অভিহিত করেন। হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ-লালসা প্রভৃতি অসৎ গুণাবলি মানুষের হৃদয়কে কলুষিত করে। কেননা, সুখ ও দুঃখ সবই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসে, তাই সবই একমাত্র তাঁরই উপর নির্ভরশীল। দেহ ও প্রাণের আবেদনের সমন্বয়ে তিনি উপমা ও রূপকের মাধ্যমে কবিতাতে সংযোজন করেন।
পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় মানুষকে অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। পারভিনের দৃষ্টিতে, পার্থিব জীবন হচ্ছে ব্যবসার মতো লাভ-ক্ষতি নিয়েই একটি জীবন। দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হয় আবার কেউ লাভ নিয়ে এগিয়ে থাকে। বস্তুবাদী এ পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস পরিত্যাগ ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখার উপদেশ দিয়েছেন তিনি। কুরআনে কারিমের বিভিন্ন কাহিনী কাব্যাকারে উপস্থাপনের মাধ্যমেও কিছু শিক্ষণীয় বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। এমনকি তাঁর দিওয়ানে হজরত মূসা (আ.) ও ফেরআউনের কাহিনীও অতি চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে এর কিয়দংশ তুলে ধরা হলো :
در فکند، از گفتهء رب جليل مادر موسی، چو موسی را به نيل
گفت کای فرزند خرد بی گناه! خودزساحل کرد با حسرت نگاه
چون رهی زين کشتی بی نا خدای؟ گر فراموشت کند لطف خدای
آب ، خاکت را دهد ناگه به باد گر نيارد ايزد پاکت به ياد
رهرو ما اينک اندر منزل است وحی آمد کاين چه فکر باطل است؟
تا ببينی سود کردی يا زيان پردهء شک را بر انداز از ميان
دست حق را ديدی و نشناختی ما گرفتيم آنچه را انداختی
شيوهء ما، عدل و بنده پر و ری ست در تو،تنها عشق و مهر مادری ست
آنچه برديم از تو، باز آريم باز نيست بازی، کار حق، خودرا مباز
মূসার মা যখন আল্লাহর হুকুমে
মূসাকে ফেলে দিলেন নীল নদে।
নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ভীষণ মর্মপীড়ায়
বলল: ‘হে আমার নিষ্পাপ শিশু!
আল্লাহর দয়া যদি ভুলে যায় তোমার কথা
মাঝি-মাল্লাহীন এ ডিঙি থেকে কীভাবে রক্ষা পাবে?
মহান রব যদি তোমাকে রহমতের ছায়া না দেন
পানি তোমার সর্বনাশ ঘটাবে, অস্তিত্ব করবে বিপন্ন।’
অহি আসল, ‘এ কেমন বাজে কল্পনা তোমার
আমার পথিক তো এখন পৌঁছেছে তার গন্তব্য।
সংশয়ের পর্দা তুলে নাও সম্মুখ হতে এবার
তাহলেই দেখতে পাবে মুনাফা করেছ না লোকসান।
তুমি ফেলেছ যা, আমি তা তুলে নিয়েছি
আল্লাহর হাত দেখেছ কিন্তু চেননি তা।
তোমার মাঝে রয়েছে শুধু মায়ের স্নেহ ও মমতা
আমার নীতি ইনসাফ ও বান্দার প্রতিপালন।
আল্লাহর কাজ খেল তামাশা নয়, প্রতারিত হয়ো না নিজে
তোমার কাছ থেকে যা নিয়েছি, ফিরিয়ে দেব তোমার কাছে।’
নৈতিক অধঃপতন একটি সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী এই পার্থিব জগৎ হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ-লালসায় পরিপূর্ণ। একমাত্র সঠিক জ্ঞানই পারে ভুল হতে দূরে সরিয়ে আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহের দিকে ধাবিত করতে। মানবজীবন পুনর্গঠনে নৈতিক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের অবতারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পারভিন এতেসামি তাঁর কবিতায় সুখী ও সুন্দর সমাজ গঠনের শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরে বলেন,
نخستين فرض بوده ست اغنيارا مشو خود بين، که نيکی با فقيران
چراغ دولت و گنج غنا را زمحتاجان خبر گير، ای که داری
نبايد داشت در دل جز خدارا به وقت بخشش و انفاق، پروين
আত্মঅহংকারী হয়ো না, দরিদ্রদের প্রতি কল্যাণকামী হও
ধনীদের এটাই প্রধান করণীয় তাদের প্রতি।
অভাবীদের খবর নাও, হে সম্পদশালী!
ধনীর ধনভাণ্ডার এতে নিয়োজিত কর।
বদান্যতা ও দানের ক্ষেত্রে হে পারভিন!
আল্লাহর ভয় ছাড়া কোনো কিছু স্থান দিও না হৃদয়ে।
মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির চাহিদার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। যে যত পায় সে তত বেশি পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রাপ্তির পাহাড়ও মানুষকে সুখ-শান্তি দিতে সক্ষম নয়। প্রকৃত সুখ নির্ভর করে অল্পে তুষ্টির উপর। এমনকি পার্থিব বিষয়ে মানুষ যদি অপেক্ষাকৃত কম বিত্তবানদের প্রতি মনোনিবেশ করে এবং নিজের প্রাপ্ত সম্পদের ব্যাপারে সস্তুষ্ট থাকে সেই প্রকৃত ধনী, সেই সুখী। আধুনিক এই কবি পারভিন এ জাতীয় লোভ থেকে দূরে থেকে সন্তুষ্টচিত্তে জীবন অতিবাহিত করার শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর লেখনীতে। তিনি বলেন,
کار مده نفس تبه کار را در صف گل جا مده اين خار را
جرخ و زمين بندهء تدبير توست بنده مشو درهم و دينار را
همسر پرهيز نگردد طمع باهنر انباز مکن عار را
বিনাশী প্রবৃত্তির উপর দায়িত্ব অর্পণ করো না
পুষ্পের সারিতে এ কাঁটাকে স্থান দিও না।
পৃথিবী ও গতিশীল জীবন সবই তোমার অধীনে
তুমি দিরহাম ও দিনারের গোলামে পরিণত হয়ো না।
পরহেজগারের স্ত্রী কখনো লোভী হয় না
শিল্পের সাহচর্য লাভে সঙ্কোচ করো না।
ফারসি কাব্যচর্চায় সমকালীন এই মহিলা কবি মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে ১৯৪১ সালে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আধুনিকতার সমন্বয়ে বৈচিত্র্যময় অনুভূতি খুবই হৃদয়গ্রাহীভাবে তিনি সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। পিতার কবরের পাশে কোম শহরে তাঁকে সমহিত করা হয়। তাঁর কবরের ওপর খোদাই করে লিপিবদ্ধ রয়েছে-
اختر چرخ ادب، پروين است اين که خاک سيهش بالين است
هر چه خواهی، سخنش شيرين است گر چه جز تلخی از ايام نديد
سائل فاتحه و ياسين است صاحب آن همه گفتار، امروز
دل بی دوست، دلی غمگين است دوستان به که ز وی ياد کنند
سنگ بر سينه، بسی سنگين است خاک در ديده، بسی جانفرساست
هر که را چشم حقيقت بين است بيند اين بستر و عبرت گيرد
آخرين منزل هستی اين است هر که باشی و ز هر جا برسی
چون بدين نقطه رسد، مسکين است آدمی هر چه توانگر باشد
چاره، تسليم و ادب، تمکين است اندر آنجا که قضا حمله کند
دهررا رسد و ره ديرين است زادن و کشتن و پنهان کردن
خاطری را سبب تسکين است خرم آن کس که دراين محنت گاه
কালো মৃত্তিকা আজ যার শিয়রের ঠিকানা
সাহিত্যাকাশের নক্ষত্র সে সপ্তর্ষি।
জীবনকালে যদিও জোটেনি তিক্ততা ছাড়া কিছু
যতই চাইবে তার কথায় পাবে মধু অপার।
এতসব কথার শিল্পী যিনি, তিনি তো আজ
সূরা ফাতেহা ও ইয়াসিনের কাঙ্গাল।
বন্ধুদের জন্য উত্তম হবে, যদি তাকে স্মরণ করেন কবরে
বন্ধুহীন অন্তর সে তো চিন্তাক্লিষ্ট হৃদয়।
চোখের ওপরে চাপা মাটি বড় হৃদয়বিদারক
বুকের ওপর চাপা এ পাষাণ অসহনীয় সংহারক।
দেখুক এ বিছানা, উপদেশ নিয়ে যাক
সত্যকে দেখার চোখ যার আছে, উপলব্ধি করুক।
যে-ই হও, আর যেখানেই যাও বা আস
জীবন-জগতের শেষ মনযিল এইতো ঠিকানা।
মানুষ যতই সম্পদশালী আর হোক ধনী
এখানে যখন আসে সে তো দরিদ্র ও মিসকীন।
নিয়তির বিধান হামলা করে সেখানে যখন
একমাত্র উপায় বিনয়, আনুগত্য, আল্লাহতে সমর্পণ।
জন্মদান, গুম করা আর প্রাণ হরণ
জগতের এ যে চিরায়ত নিয়ম, বিধির বাঁধন।
কষ্ট-ক্লেশের এই নিবাসে আনন্দিত শুধু সেই লোক
যার আছে প্রশান্তচিত্ত, হৃদয়ে আলোক।
কবিরা মানুষের হৃদয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশে দক্ষ শিল্পী। শিল্প বলতে মূলত কল্পনা ও রহস্যের সমন্বয়ে সৌন্দর্যতত্ত্বের আকৃতিতে সুশৃঙ্খল বর্ণনাকে বুঝায়। কবিতায় শিল্প হচ্ছে কল্পনা, রহস্য এবং ভাষার সমন্বয় সাধন। শিল্পের অভ্যন্তরীণ সেই নির্দিষ্ট ভাষা ঐ শিল্পীর বিশেষ ভাষা হিসেবে পরিগণিত। পারভিনের কাব্যের মধ্যেও দেখা যায় কল্পনা, রহস্য এবং ভাষার সমন্বয়ে মূল বক্তব্য বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে গভীর থেকে গভীরতার দিকে ধাবিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাঁর কাব্যের সাবলীল ভাষা ও গতিশীলতা হৃদয়ে অনাবিল আনন্দ ও ঝংকার সৃষ্টি করে পাঠককুলে। মানবতাবাদী এই মহান কবি সর্বান্তকরণে মানুষের তরে সাহিত্যচর্চা করেছেন যেখানে আধুনিকতায় বৈচিত্র্যময় আবেগ-অনুভূতি ও কল্পনার গাঁথুনী তাঁর কাব্যমানকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর কবিতা শুধু ইরানেই নয়; বর্তমান বিশ্বের নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণে যুগান্তকারী ভূমিকায় অবতীর্ণ। পারভিন এতেসামি স্বীয় রচনার মাধ্যমে পাঠককুলের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।

লেখক : অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পারভিন এতেসামির কাব্যে আধুনিকতা ও বিষয়বৈচিত্র্য
দিভান
TemplateOrganized

:

:

:

: