সানাই গজনভি
সানাই: হাকিম আবুল মাজদ মাজদুদ ইবনে আদম সানাই গজনভি ছিলেন বর্তমান আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্ত গজনির একজন ফারসি ভাষার কবি, যিনি সানাই নামে সমধিক পরিচিত। তিনি ১০৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১৩১ থেকে ১১৪১ সালের মধ্যে মারা যান। তখন গজনি শাসন করতেন গজনভি সাম্রাজ্যের শাসকগণ।
সানাই গজনভি শাসক বাহরাম শাহের দরবারের কবি ছিলেন যিনি ১১১৭ থেকে ১১৫৭ সাল পর্যন্ত গজনি শাসন করেছিলেন। বাহরাম শাহ যখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সানাইকে তাঁর সাথে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ডেকে পাঠান তখন সানাই বাহরামের প্রশংসায় বেশি কিছু পঙ্ক্তি রচনা করে দরবারের দিকে রওয়ানা দেন। সানাই একটি বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি একজন মাতালের কথা শুনতে পান যে নিজে নিজেই কথা বলছিল। মাতাল ব্যক্তিটি উচ্চৈঃস্বরে বাহরাম শাহের অকারণে ভারত জয়ের বাসনা ও অনেক প্রাণহানির সম্ভাবনার কারণে সমালোচনা করছিল। আর লোকটি সানাইয়ের জীবন নিয়েও বিলাপ করছিল। সে সানাইকে একজন প্রতিভাবান কবি হিসেবে উল্লেখ করে বলছিল যে, তিনি একজন অহংকারী ও বিবেকহীন রাজার প্রশংসায় তাঁর প্রতিভাকে নষ্ট করছেন। সানাই লোকটির কথায় তাৎক্ষণিকভাবে সত্যকে উপলব্ধি করতে পেরে রাজদরবার থেকে ইস্তফা দেন। এরপর তিনি একজন সুফিসাধকের শিষ্য হয়ে যান।
সানাই অসংখ্য অতীন্দ্রবাদী শ্লোক রচনা করেছিলেন। তাঁর প্রধান সাহিত্যকর্ম ছিল ‘হাদীকাতুল হাকীকা’ এবং এটি সুফিবাদের উপর ফারসি ভাষায় লিখিত প্রথম অতীন্দ্রবাদী মহাকাব্য। বাহরাম শাহকে উৎসর্গ করা এই সাহিত্যকর্মটি আল্লাহ সম্পর্কে এবং প্রেম,দর্শন ও যুক্তি-বুদ্ধি সম্পর্কে এই কবির ধারণাকে প্রকাশ করে।
প্রায় ৯০০ বছর ধরে ‘হাদীকাতুল হাকীকা’ একটি ক্লাসিক সাহিত্য হিসাবে পঠিত হয়েছে এবং সুফি পাঠ্যপুস্তক হিসাবেও পরিগণিত হয়েছে। সানাই শিখিয়েছেন যে, লালসা,লোভ ও মানসিক উত্তেজনা মানুষ এবং ঐশী জ্ঞানের মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, অথচ এই ঐশী জ্ঞানই একমাত্র সত্য (হক)।
ফারসি সাহিত্যে সানাইয়ের কবিতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কাসিদা,গজল ও মসনভি (ছন্দযুক্ত যুগল) ব্যবহার করে সুফিবাদের দার্শনিক,অতীন্দ্রিয় ও নীতিগত ধারণা প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম কবি হিসাবে বিবেচিত হন।
মাওলানা রুমি কবি সানাই ও ফরিদউদ্দিন আত্তারকে তাঁর দুই মহান অনুপ্রেরণাদাতা হিসেবে স্বীকার করে বলেন,‘আত্তার হলেন আত্মা এবং এর দুই চোখ হলেন সানাই; আমি সানাই ও আত্তারের পরে এসেছি।’
সানাই গজনভি | |
রচনা: হাদীকাতুল হাকীকা |