এজেন্সি
খাজা শামস-উদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ-ই-সিরাজী

খাজা শামস-উদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ-ই-সিরাজী

খাজা শামস-উদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ-ই-সিরাজী

শামস-উদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ

‘প্রাণ যদি মোর ফিরে দেয় সেই

তুর্কী চাওয়ার মনচোরা

একটি কালো তিলের লাগি

বিলিয়ে দেব সমরকন্দ ও বোখারা!

(কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদ)।

এই চারটিমাত্র চরণের জন্য গোটা বিশ্ববাসী যে ইরানি কবিকে একবাক্যে চেনে তিনি হাফিজ। পুরো নাম খাজা শামস-উদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ-ই-সিরাজি। একজন সুফি কবি।

কবি হাফিজ ইরানের প্রাচীন সিরাজ শহরে সিরাজী মোসাল্লা নামক স্থানে ৭১৫ থেকে ৭৩০ হিজরির (চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে) কোনো এক সময় জন্মগ্রহণ করেন। এই ইরানি কবিকে বুলবুল-ই-সিরাজ বলা হতো। ইরানিরা হাফিজকে শুধু কবি বলেই ভালোবাসে না; তারা তাঁকে ‘লিসান-উল-গায়েব’ (অজ্ঞাতের বাণী), ‘তর্জমান-উল-আসরার’ (রহস্যের মর্মসন্ধানী) বলে আরো বেশি শ্রদ্ধা করেন।

হাফিজের মৃত্যুর ১০০ বছরের মধ্যে তার কোন জীবনী রচিত হয়নি। তাই তার জীবনের বেশিরভাগ ঘটনা থেকে গেছে অজ্ঞাত। তার জন্ম-মৃত্যুর দিন নিয়ে ইরানেও তাই নানা মতভেদ আছে। তবে তার মৃত্যুর সম্ভাব্য সাল ধরা হয় ৭৯১ হিজরি বা ১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ।

হাফিজ সর্বশ্রেষ্ঠ ফারসি গীতিকাব্য রচয়িতা এবং ইরানের জনগণের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি যার কবিত্ব ও মহত্ত্বের প্রভাব ফেরদৌসি, মাওলানা রুমি ও সাদির মতো ফারসি ভাষাভাষীদের হৃদয়ে এবং ইরানি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চির অম্লান হয়ে আছেন।  হাফিজের ব্যবসায়ী পিতা বাহাউদ্দিনের আকস্মিক মৃত্যুতে যে শিশু হাফিজ ও তার মা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েন। পিতৃহারা হাফিজকে সংসারের দায় এই শিশুকালেই বহন করতে হয়। মায়ের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে তিনি স্থানীয় একটি রুটির দোকানে আটা ছানার কাজ নেন আর এখান থেকে লব্ধ অর্থ দিয়েই দিন যাপন করতেন।

তাঁর গজল খোদার প্রশংসা ও প্রেমে ভরপুর। বলা হয়, তাঁর গজলের অধিকাংশ ভাষ্য আসমানি কিতাব কুরআনের ব্যাখ্যা স্বরূপ। তাঁর প্রতিটি গজলের মধ্যেই সামঞ্জস্য রয়েছে। তাঁর রচনার সাহিত্যিক সৌন্দর্যের স্বাতন্ত্র্য, ব্যাখ্যার চমৎকারিত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থাপনা অতি উঁচু মানের ও সাবলীল। যাঁরা সঠিকভাবে হাফিজকে অনুধাবন করতে পেরেছেন তাঁরা তাঁর সাহিত্যকর্ম থেকে সত্যিকার আনন্দ ও তৃপ্তি লাভে বঞ্চিত হন না।

হাফিজ বেঁচে থাকতে নিজের কবিতার সংকলন তৈরি করেননি। তার বন্ধু গুল-আন্দাম ৮১৩ হিজরি বা ১৪১০ সালে ‘দিওয়ান’ নামে হাফিজের কাব্য সংকলন তৈরি করেন। হাফিজের যে পাঁচশ’র বেশি কবিতা আমরা পেয়েছি, সেগুলো ছাড়াও তাঁর অনেক কবিতা হারিয়ে গেছে বা সংকলক সংগ্রহ করতে পারেননি।

তাঁর বিপুল সংখ্যক কবিতার মধ্য থেকে প্রায় চারশ কবিতা ও গীতি কবিতা এ পর্যন্ত হাজার হাজার বার লিখিত ও মুদ্রিত হয়েছে এবং অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। হাফিজের গজল ও অন্যান্য কবিতার বিষয়বস্তুর মধ্যে শামিল রয়েছে খোদাপ্রেম,মানুষের ভাগ্য ও অদৃষ্ট, সৃষ্টি ও অস্তিত্ব এবং জগতের অপার সৌন্দর্য, যেগুলো আলোকবর্তিকাস্বরূপ। হাফিজ তাঁর কবিতায় যে নতুন ভাষা সৃষ্টি করেছেন তা অত্যন্ত বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ, সাবলীল নির্ভুল, চমৎকার ও গভীরতর অর্থবোধক।

কবি হাফিজ সম্বন্ধে তাঁর প্রায় সমসাময়িক বিখ্যাত কবি জামী অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, মাধুর্য, সূক্ষ্মতা, গভীরতা, সাবলীলতা ও সহজ সারল্য গুণে হাফিজের কবিতা অলৌকিকতার দাবিদার। তাঁর কাব্যকর্ম শুধু পারস্যেরই নয় সারা মানবজাতির গৌরবের ধন।

লেখক: মুজতাহিদ ফারুকী

খাজা শামস-উদ্দিন মোহাম্মদ হাফিজ-ই-সিরাজী
হাফিজ
দিওয়ান

:

:

:

: