এজেন্সি
আবু মুহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি)

আবু মুহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি)

আবু মুহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি)

শেখ সাদি নামে পরিচিত আবু মুহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজি ফারসি কাব্যের অমর কবি। মানুষের মর্যাদা ও মানব-জাতির একক সত্তা সম্পর্কে তিনি যেসব বক্তব্য রেখে গেছেন আজ পর্যন্ত কোনও সাহিত্যিক তেমন করে বলতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। শেখ সাদির এমন অনেক গল্প আছে যা মহত্তর মানবিক ও নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত। সেকারণেই এখনও বিশ্বের সর্বত্র শেখ সাদির কদর আছে শিক্ষিত মানুষের কাছে। আছে তার প্রাসঙ্গিকতা।

সাদির বিখ্যাত রচনা বনি আদমের প্রথম দুটি চরণ,

‘আদমসন্তান পরস্পর একই দেহের অঙ্গ

সৃষ্টির উৎসে তাদের উপাদান যে অভিন্ন।’

বিশ্বের সমস্ত মানব সম্প্রদায়কে এভাবে একই দেহের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি আধুনিককালের মানবাধিকারের অতিউৎসাহী প্রবক্তাদের কারও রচনায়ও দেখি না।

শেখ সাদির পুরো নাম শেখ আবু আবদুল্লাহ মুশাররফ উদ্দীন ইবনে মুসলেহ সাদী। জন্মেছিলেন ইরানের তখনকার রাজধানী সিরাজ নগরে, ১২১০ মতান্তরে ১২১২ খ্রিস্টাব্দে। বাবা আবদুল্লাহ ছিলেন সিরাজের বাদশাহর সচিব। তিনি অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন এবং তার কাছেই সাদির শৈশবের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। পরে তিনি তখনকার বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাগদাদের নিযামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি ধর্মতত্ত্ব (যেমন কুরআন, হাদীস, তাফসির, ফিকাহ, উসুল, ফরায়েজ, হিকমা), দর্শন, সাহিত্য (যেমন ভাষাবিজ্ঞান, ধ্বনিতত্ত্ব, অলঙ্কারশাস্ত্র), নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ভাষা শিক্ষার ওপর আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং আরবি, ফারসি, হিব্রু, গ্রিক, তুর্কি, ল্যাটিন, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত, আফগানি ইত্যাদি ২৪টির মতো ভাষা শিখে ফেলেন। অনেকগুলো ভাষা তিনি নিজের মাতৃভাষা ফারসির মতোই স্বচ্ছন্দে বলতে এবং লিখতে পারতেন।

তাঁর সময়ে শেখ সাদির মতো জ্ঞানী ব্যক্তি মুসলিম বিশ্বে দ্বিতীয় কেউ ছিল না। ১২৫৮ সালে তার রচিত গ্রন্থ ‘গুলিস্তাঁ’ প্রকাশিত হয়। এটিকে বলা হয় প্রাচীন পারস্যের কবিদের রচিত চারটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের একটি। অন্য তিনটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো ফেরদৌসির ‘শাহনামা’, রুমির ‘মসনবি’ এবং হাফিজের ‘দিওয়ান’। অনেক ইংরেজ লেখক পণ্ডিত সাদিকেই প্রাচ্যের শেক্সপিয়র বলে আখ্যা দেন।

শেখ সাদির ২২টির মতো গ্রন্থের নাম জানা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুলিস্তাঁ, বূস্তাঁ, করিমা, সাহাবিয়া, কাসায়েদে ফারসি, কাসায়েদে আরাবিয়া, গযলিয়াত, কুল্লিয়াত ইত্যাদি।

সাদির গুলিস্তাঁ বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সেরা সম্পদ হিসাবে স্বীকৃত। এটি পৃথিবীর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তবে বূস্তাঁও সমমর্যাদার দাবিদার। ‘গুলিস্তাঁ’ হচ্ছে উপদেশমূলক গদ্যের ফাঁকে ফাঁকে কাব্যে রচিত একটি গ্রন্থ। আর ‘বূস্তাঁ’ পুরোটাই কাব্য। ‘গুলিস্তাঁ’ মানে ফুলের বাগান আর ‘বূস্তাঁ’ মানে সুবাসিত স্থান। বর্ণনাশৈলির চমৎকারিত্ব, ভাষার লালিত্য ও মাধুর্য এবং মানবীয় গুণাবলির ঔৎকর্ষসাধনে তাঁর অবদান বিশ্ব সভ্যতায় অবিস্মরণীয়।

মানবতাবাদী এই মহান কবি ১২৯২ সালে নিজ জন্মস্থান সিরাজ শহরেই মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পাঠকের চিত্তে তিনি চির অমর।

মুজতাহিদ ফারুকী

আবু মুহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজি (শেখ সাদি)
শেখ সাদি
গুলিস্তাঁ, বূস্তাঁ, করিমা, সাহাবিয়া, কাসায়েদে ফারসি, কাসায়েদে আরাবিয়া, গযলিয়াত, কুল্লিয়াত

ইসলামিক কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশন অর্গানাইজেশন হল ইরানি সংস্থাগুলির মধ্যে একটি যেটি সংস্কৃতি ও ইসলামিক গাইডেন্স মন্ত্রণালয়ের সাথে অধিভুক্ত; এবং 1995 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[আরও]

:

:

:

: