গোলামহোসেন দারভিশ খান
দারভিশ খান নামে পরিচিত গোলামহোসেন ইরানের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘দারুল ফুনুন’-এর সাথে সম্পৃক্ত নেজাম স্কুলের সংগীত বিভাগে ভর্তি হন, যেখানে তিনি গানের নোট এবং ট্রাম্পেট ও ছোট ড্রাম বাজানো শিখেন। বছরের পর বছর অনুশীলনের পর তিনি ‘তার’ এবং বিশেষ করে ‘সেতার’ এর মতো তারের যন্ত্র বাজানোর ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং ইরানি শাস্ত্রীয় সংগীতে পরম উৎকর্ষ লাভ করে মাস্টার্সের সেরা ছাত্র হয়ে ওঠেন।
দারভিশ খান ইরানি সংগীতকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করেন এবং দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত লোকদেরকে সাহায্য করার লক্ষ্যে সংগীতে আগ্রহীদের জন্য ক্লাসের আয়োজন করতেন, তার ও সেতার বাজাতেন এবং তাঁর নিজস্ব নির্দেশনায় পাবলিক মিউজিক কনসার্টের আয়োজন করতেন।
তাঁর কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রাশিয়ায় দুর্ভিক্ষে পতিতদের কল্যাণে তহবিল সংগ্রহের জন্য কনসার্ট, স্কুল অফ কালচার প্রতিষ্ঠার জন্য কনসার্ট, আমোলের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণের জন্য কনসার্ট, আগুনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি বাজারের সংস্কারের জন্য কনসার্ট, দস্যুদের দ্বারা লুটপাটের শিকার হওয়া উরুমিয়ার লোকদের জন্য কনসার্টের আয়োজন।
দারভিশ খান ছিলেন বিশেষ প্রতিভার অধিকারী এবং তাঁর এই প্রতিভার কারণেই তিনি ইরানি ঐতিহ্যবাহী সংগীতের কিছু নতুন রূপ উদ্ভাবন এবং ইরানের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র ‘তার’-এ ষষ্ঠ তার যোগ করতে সক্ষম হন।
তিনি ঐতিহ্যবাহী ইরানি সংগীতের মডেল সিস্টেমকে ৭টি অংশে বিভক্ত করেন এবং অনেক গান রচনা করেন, যার মধ্যে কেবল ২২টি গানই (সাতটি ভূমিকা, ছয়টি গীতিনাট্য এবং নয়টি রাগ- ইরানি সংগীতের একটি বিশেষ রূপ) অবশিষ্ট রয়েছে এবং যা তাঁর দক্ষতা ও সক্ষমতার স্তরকে প্রতিফলিত করে।
তিনি নিয়মিত সংগীত ক্লাস নিতেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে যারা সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করত তাদেরকে তিনি ‘তাবার-জিন’ (একটি বিশেষ ধরনের কুঠার) পুরস্কার দিতেন, যা তামা ও রুপা দিয়ে তৈরি; আর উচ্চ স্তর সম্পন্ন করা ছাত্রদের দিতেন স্বর্ণের তৈরি তাবার-জিন।
দারভিশ খান ১৯২৬ সালের ২২ নভেম্বর এক গাড়ি দুর্ঘটনায় (ইরানে গাড়ি দুর্ঘটনার প্রথম শিকার) নিহত হন এবং তাঁর সমাধি তেহরানে অবস্থিত।
গোলামহোসেন দারভিশ খান | |
দারভিশ খান |