এজেন্সি
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সুসংহতকরণ এবং আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় ইমাম খোমেইনির উদ্যোগ

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সুসংহতকরণ এবং আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় ইমাম খোমেইনির উদ্যোগ

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সুসংহতকরণ এবং আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় ইমাম খোমেইনির উদ্যোগ

ফিলিস্তিনকে ঘিরে কয়েক দশকের পুরনো সঙ্কট শুধু ফিলিস্তিনের ভৌগোলিক ভূখণ্ড এবং পশ্চিম এশীয় অঞ্চলেই এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি বরং সমগ্র ইসলামি বিশ্ব এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও খারাপভাবে প্রভাবিত করেছে।

আধিপত্যবাদী শক্তির উপর তার প্রভাব ব্যবহার করে, ইহুদিবাদ বিশ্ব জনমতের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা করছে যে উল্লেখিত সংকটটি অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেইনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, যায়নবাদী ইসরাইলি জান্তা কর্তৃক এ ধরনের চক্রান্ত একটি বৈশ্বিক ঔদ্ধত্য।

পশ্চিমাদের দ্বারা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলে উত্তেজনা, নিরাপত্তাহীনতা এবং বিরোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন কোনো ইসলামি সভ্যতার উত্থান রোধ করা। ইসরাইল প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিন দখল এবং ইহুদিবাদী শাসন সৃষ্টির চক্রান্ত অনুসরণ করে, ইসলামি বিশ্ব ক্রমাগত উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েছে যা আঞ্চলিক জাতিগুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে ৪ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়ে আসছে এবং যদি আমরা সমগ্র অঞ্চলে ইহুদিবাদী শাসনের ক্ষতির দিকে তাকাই তাহলে আমরা ইমাম খোমেইনির বিজ্ঞ এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করি যা ইহুদিবাদী শাসনকে একটি ‘ক্যান্সারাক্রান্ত টিউমার’ বলে অভিহিত করেছিল এবং এই কারণেই তিনি এই টিউমার দূর করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে বিশ্ব কুদস দিবসের সূচনা করেছিলেন।

বিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা ইমাম খোমেইনি পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার বিশ্ব কুদস দিবস ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষণার পর সারা বিশ্বের মানুষ দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই দৃষ্টান্তকে স্বাগত জানায় এবং জুমার নামাজের পর বাড়ি-ঘর ও মসজিদ থেকে বের হয়ে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য রাস্তায় জড়ো হয় এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করার জন্য তাদের ইচ্ছাও ব্যক্ত করে।

বিশ্ব কুদস দিবস শুধু ইহুদিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের কাছে কেবল একটি বার্তাই নয় যে ফিলিস্তিনিরা একা নয় এবং তাদের অধিকার আর বঞ্চিত হবে না বরং এই উপলক্ষটি মুসলিম ঐক্য ও উম্মাহর ধারণার এক অনন্য প্রদর্শনীও বটে। শিয়া এবং সুন্নি উভয়েই যখন মুসলিম জমির অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, তখন এটি বোঝা যায় যে উম্মাহর মধ্যে বিভক্তির চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং মুসলমানদের ঐক্যের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। ইমাম খোমেইনির আগে মুসলিম বিশ্বের কোনো নেতা ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে এতটা স্পষ্টভাবে কথা বলেননি।

প্রয়াত ইমাম ইসলামি বিপ্লবের আগে ফিলিস্তিনি সম্পর্কে কথা বলতেন এবং এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই স্পষ্ট। এ কারণেই ইসলামি বিপ্লবের সাফল্যের পরপরই তিনি বিশ্ব কুদস দিবস ঘোষণা করেন। আজ যখন আমরা দেখি বিশ্বব্যাপী বিশ্ব কুদস দিবস পালিত হচ্ছে, এমনকি পশ্চিমা দেশেও, এটা আসলে ইমাম খোমেইনির দৃষ্টিভঙ্গির সফলতা। যখন আমরা দেখি যে কিছুসংখ্যক মুসলিম রাষ্ট্র বাধার সৃষ্টি করে বা নিপীড়িত জনগণের সমাবেশকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা করে তখন আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে এটি ইহুদিবাদের এজেন্ডা অনুযায়ী হচ্ছে। কখনও কখনও কুদস দিবসের মিছিলকারীদেরকে ফিলিস্তিনিদের কারণে ভারী মূল্য দিতে হয়। এটি ইমাম খোমেইনির দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব, যিনি তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন সত্ত্বেও ইসরায়েল এই অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্বল দেশ। ইমাম খোমেইনি একবার উল্লেখ করেছিলেন যে, ‘কুদস ইস্যু কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এটি কেবল একটি দেশেরই সমস্যা নয় বা মুসলমানদের বর্তমানকালের সমস্যা নয়; বরং, এটি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত - সমস্ত যুগের সমস্ত তাওহীদবাদী এবং বিশ্বাসী লোকের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি প্রপঞ্চ।

ইমাম খোমেইনি চেয়েছিলেন, বিশ্ব কুদস দিবস শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সমগ্র নিপীড়িত জনগণকে আন্তর্জাতিক বিরোধসমূহ নিষ্পত্তির জন্য একটি বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তুলতে একতাবদ্ধ করবে। প্রকৃতপক্ষে, ইমাম খোমেইনি বিশ্ব কুদস দিবসের সূচনা করে বিশ্বব্যাপী মানুষকে ইহুদিবাদ, ঔপনিবেশিকতা ও আধিপত্যবাদী শক্তিবিহীন একটি বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ইসরাইলের বিরোধিতা এবং বিশ্ব কুদস দিবসকে সম্মান করার পিছনে ক্রমবর্ধমান রহস্যের মূল রয়েছে ইসরাইল ও অহংকারী শক্তিবিহীন একটি বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তা করার গভীর সুখানুভূতির মধ্যে।

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সুসংহতকরণ এবং আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় ইমাম খোমেইনির উদ্যোগ

:

:

:

: