ইরানের পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত মানবাধিকার বিষয়ক আইনের বিধানসমূহের সংক্ষিপ্ত সার
ভূমিকা : আইন এমন এক নিরাপত্তা বলবৎকারী বাধ্যতামূলক দলিল যাতে ব্যক্তির অধিকার ও দায়িত্বসমূহ সংজ্ঞায়িত থাকে। অন্য কথায়,মানবসমাজের অধিকার রক্ষার জন্যই আইন তৈরি ও অনুমোদিত হয়ে থাকে। দায়িত্বের কথা উল্লেখ করার অর্থ হলো এ ধরনের অধিকারের ওপর এক প্রকার গুরুত্বারোপ যাতে এ সকল অধিকার যতটা সম্ভব কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হয়। অল্প কথায় আইন হচ্ছে এমন এক দলিল যা ব্যক্তির বৈধ অধিকার নিশ্চিত করে। স্পষ্টতই ‘বৈধ কর্তৃত্বশালী’র পৃষ্ঠপোষকতায় আইনের অস্তিত্বের অর্থ এ নয় যে, ব্যক্তির অধিকার নিরাপদ হয়েছে- যার বিপরীতে বলা যায় যে,আইনবঞ্চিত সমাজ মানেই অসভ্য সমাজ।
বিভিন্ন শাসনব্যবস্থায় এমন শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অধীনে প্রধানত সর্বস্তরের জনগণের বৈধ অধিকার রক্ষায় গঠিত আইন ও আইন প্রণয়নবিষয়ক বিধি-ব্যবস্থা থাকার পরও কি কারণে মানবাধিকার নামে আরেকটা শাখা চালু করা হল যা তাত্ত্বিক, গবেষক, রাজনীতিক এবং নাগরিকগণের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করল? এর অর্থ এই যে, আইন ও আইন প্রণয়ন সংস্থা উভয়ই তাদের কর্তব্যের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি এবং নাগরিকগণের বৈধ অধিকারের প্রতি সরকারি স্বীকৃতি দানের উদ্দেশ্যেই এই নতুন শাখাটির প্রবর্তন করা হয়। নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এটা করা হয়েছে যা বিবেচনায় আনতে হবে?
যেসব কারণে মানবাধিকার নীতি ও ধারণাসমূহের উদ্ভব ঘটেছে সেগুলো যাচাই করতে হলে প্রয়োজন অধিকতর ব্যাপক ও গভীর বিশ্লেষণ। মানবাধিকারের সপক্ষে বিভিন্ন তত্ত্বগত ও আদর্শগত যুক্তি যা-ই থাকুক না কেন, এ বিষয়ের অধীনে উত্থাপিত প্রশ্নগুলো থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে, এটি সেই সব মূল্যবোধের পক্ষে পুনঃপুন সমর্থন ব্যক্ত করতে চায় যেগুলো অনেক সময় জাতীয় সার্বভৌম সরকার কর্তৃক লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবেই দেখা যায় অধিকতর সার্বভৌম সরকারসমূহ হঠকারিতা ও স্বৈরশাসন থেকে দূরে থেকেছে এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ব্যবস্থার অধীনে শাসনকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে তারা ‘মানবাধিকার মানদণ্ডসমূহ’ শিরোনামের অধীন মূল্যবোধগুলোর প্রতি অধিকতর সম্মান প্রদর্শন করে থাকে।
হঠকারি ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । প্রজাতান্ত্রিকতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বে বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা থাকলেও ইরানের শাসনব্যবস্থা অন্যান্য ব্যবস্থা থেকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা। কেননা, এটি ইসলামের মহান ও পূতঃপবিত্র খোদায়ী বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত- যা ধর্মীয় গণতন্ত্রের অধীনে শাসনব্যবস্থার একটা আদর্শ বা নমুনার প্রচলন করেছে। এমন একটা ব্যবস্থার অধীনে মানবাধিকারের সাথে যুক্ত মূল্যবোধসমূহের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করা হবে বলে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করা হয়ে থাকে। বিশেষত জাতীয় সার্বভৌম সরকার কর্তৃক। কেননা,পবিত্র ধর্ম ইসলামের মধ্যে রয়েছে এমন সুমহান বিশ্বাসসমূহ যেগুলো মানবাধিকার কর্তৃক গৃহীত মূল্যবোধগুলোর জন্য অধিকতর সম্মান ও মর্যাদা বিবেচনা করে থাকে। শাসনব্যবস্থার প্রজাতান্ত্রিকতার সাথে এমন বিশেষত্ব বা বৈশিষ্ট্য যুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই মানবাধিকার মূল্যবোধসমূহের প্রতি এক অসাধারণ শ্রদ্ধাবোধের প্রকাশ ঘটে থাকে।
ফলস্বরূপ, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আইন প্রণয়ন সংস্থা তথা ইসলামী সংসদের (মজলিস) ভূমিকা মানবাধিকার মানদণ্ডসমূহের রক্ষায় অনেক বেশি উচ্চকিত ও দৃশ্যমান হয়। মানবাধিকারের ওপর এই আইন প্রণয়ন সংস্থা কর্তৃক গৃহীত যেকোন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে মূলত ধর্মীয় কর্তব্য ও বিশ্বাসের প্রতি এর আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বস্তুত এই সংস্থাটিই এ ব্যাপারে কোন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দানকালে প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় নির্দেশের আইনগত বৈধতা প্রদান করে। এ সত্যটির আলোকে বলা যায়, জনগণের দ্বারা সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে একজন আইন প্রণেতা নির্বাচকমণ্ডলীর বৈধ অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা ও সুনিশ্চিতকরণে তাঁর দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
এখানে সংক্ষেপে উল্লিখিত আইন এবং সংসদে পাসকৃত বিধিবিধান এবং তৎসঙ্গে পরীক্ষাধীন অন্যান্য বিষয়ের (বিল ইত্যাদি) সংগ্রহ বা সমাহার অংশত সেই সকল মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রতি আইন প্রণেতাদের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় যেগুলো কয়েক দশক আগে গৃহিত হয়েছে। ২০০৯ সালের মে মাসে ‘বেসামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইরানী সরকারের যোগদানের অনুমতি দিয়ে সংসদে এক আইন অনুমোদিত হয়েছিল। এই আইন বলে বৈশ্বিক স্বাধীনতা, সুবিচার এবং শান্তির ওপর ভিত্তি করে মানবপরিবারের সকল সদস্যের জন্য স্বীকৃত হয় এক সমান ও হস্তান্তর অযোগ্য প্রাকৃতিক এবং আইনগত বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা, যদিও আইন প্রণয়নের এই ক্ষেত্রটির সূচনা হয় বহু বছর আগে, তথা ১৯২১ সালে। নিচে কতকগুলো দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো যেগুলো এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, আমাদের দেশ এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সুমহান ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আধুনিক ধারণা অনুযায়ী মানবাধিকার মানদণ্ডসমূহের সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অবশ্য,একথা অনস্বীকার্য যে,একটা আদর্শ অবস্থায় পৌঁছতে আরো অনেক দূর যেতে হবে এবং এতে আইন প্রণেতাদের কঠোর পরিশ্রমেরও প্রয়োজন পড়বে।
এ প্রতিবেদনে ৮টি অধ্যায়ে বেশ কিছুসংখ্যক প্রামাণ্য দলিল সন্নিবেশিত হল। এই শ্রেণিকরণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান : তৃতীয় অধ্যায় : জাতির অধিকার। বিপ্লবের মহান নেতা এ দলিলটিকে বর্ণনা করেন এভাবে : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান ইরানী জাতির দাবি ও আদর্শসমূহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য। এটি ইসলামী ব্যবস্থার বিধিবিধান ও নীতিসমূহের সূত্রবদ্ধকরণে একটা সার্বিক কাঠামোর অধীনে জনগণের জন্য রয়েছে সার্বিক পথনির্দেশ। এ সংবিধানের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য হলো যে, এটি বিরাজমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে নেয়। এ উদ্দেশ্যে এই সংবিধনে বিশেষজ্ঞগণের প্রাজ্ঞ মতামত গ্রহণের ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মত পন্থারও প্রচলন করেছে। আশা করা যায়, এ প্রতিবেদনটি পবিত্র ইসলাম ধর্ম ও সংবিধানের কাঠামোর ভিতর মানবাধিকার মানদণ্ডসমূহের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইনের ক্ষেত্রে সাড়া দেয়ার জন্য একটা যথোপযুক্ত ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারবে।
১.০ নারী ও পরিবারের অধিকার : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদ নারীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে। অবশ্য আরো কিছু অনুচ্ছেদেও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সুরক্ষামূলক বিধিবিধান রয়েছে। সাধারণভাবে সংবিধানের ৩টি অনুচ্ছেদে নারীরাই কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে রয়েছে। এগুলো হলো : অনুচ্ছেদ ২, ২০ ও ২১। আবার একই সাথে পরিবার হচ্ছে আরেকটি বিষয় যা ৪০টি অনুচ্ছেদে উল্লিখিত হয়েছে। যথা : অনুচ্ছেদ ১০, ২১, ৩১ ও ৪৩। অধিকন্তু বেশ কিছু সাধারণ আইনেও নারী অধিকার সুরক্ষায় কিছু কিছু আইন অনুমোদিত হয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ :
১.১ পরিবার সুরক্ষা আইন (১৯৬৭ সালের ১৫ জুন অনুমোদিত) : ইসলামী বিপ্লব-পূর্ব আইন হলেও কিছু কিছু সংশোধনীসহ আইনটি আজও প্রয়োগযোগ্য বিবেচিত। এই আইনে তালাক প্রক্রিয়া চলাকালে নারীর সুরক্ষার প্রতি অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে এমন কিছু ধারা সন্নিবেশিত আছে।
১.২ অভিভাবকহীন নারী ও শিশুদের ভরণপোষণ আইন: আইনটি ১৯৮৩ সালে অসমর্থিত হয় এবং পরবর্তীকালে ইরানের সংসদে আরো ব্যাপকভাবে সংশোধিত হয়ে ২০০২ সালের নভেম্বর অনুমোদিত হয় এবং অভিভাবক পরিষদের চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করে। ১০টি অনুচ্ছেদ এবং ৮টি নোট সম্বলিত আইনটিতে বিশেষ আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক এবং সেই সাথে কর্ম-সুরক্ষা ও কর্ম-সহায়তার বিধানসমূহ রয়েছে।
১.৩ বিশেষায়িত চিকিৎসা আবাস কোটা আইন : ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই আইনের বিধান অনুযায়ী স্বাস্থ্য, রোগের চিকিৎসা ও চিকিৎসা শিক্ষায় নারীদের জন্য কমপক্ষে ২৫% ভাগ আবাসিক সুবিধা বরাদ্দ করবে। সেই সাথে শিক্ষার অন্যান্য শাখায় এই কোটা হবে ন্যূনতম ৫০% ভাগ।
১.৪ শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন মায়েদের সুরক্ষা আইন : ১৩ মার্চ ১৯৯৬ সালে অনুমোদিত এবং পরবর্তী সংশোধনীসমূহ ১৩ মার্চ ১৯৯৬ ও ২৭ জুন ২০০৭ সালে অনুমোদিত। এই আইনের বিধান অনুযায়ী বুকের দুধ দানকারী মায়েদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে বিশেষত কর্মজীবী মায়েরা মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ কিছু কিছু বিশেষ সুবিধা ভোগ করে থাকে।
১.৫ সংবাদপত্র আইনের ধারা ও এর সাথে একটি অনুচ্ছেদ ও একটি নোট যুক্তকরণ আইন : ২২ আগস্ট ১৯৯৮ সালে আনুমোদিত। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী কিংবা পুরুষ যে-ই হোক, কারো ছবিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং অসম্মানজনক আচরণ এবং অবৈধ বা বেআইনি প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়। এরূপ অপরাধীকে ইসলামী শাস্তি বিধানের ৬৯৮ ধারা মতে উপযুক্ত সাজা দেয়া হবে।
১.৬ নারী ও পরিবার সম্পর্কিত তৎপরতায় সহযোগিতামূলক চুক্তি আইন : ২০০৩ সালের ১৩ মে অনুমোদিত নারী ও পরিবারবিষয়ক তিউনিশীয় মন্ত্রীর আমন্ত্রণে ইরানী প্রেসিডেন্টের মহিলাবিষয়ক উপদেষ্টা এবং সেন্টার ফর উ্যমেন পার্টিসিপেইশন প্রধান কর্তৃক ১৬-২১ এপ্রিল ২০০০ তিউনিশিয়া সফরকালে এ দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়। ৮টি বিষয় সম্বলিত দলিলটি পরিবারে ও পরিবার সংশ্লিষ্ট পরিবেশে নারীর তৎপরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কবিষয়ক একটি দলিল।
১.৭ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও দায়িত্ব সুরক্ষা আইন : ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে অনুমোদিত। এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে নারীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত সনদের ওপর ভিত্তি করে আনীত আইনি প্রস্তাব। ২০০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবটি সংসদে পাশ হয়। আইনটি দ্বারা হাই কাউন্সিল অব কালচারাল রেভল্যূশন সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারীরা যাতে কার্যত তাদের ন্যায্য অধিকার ও দায়িত্ব লাভ করতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে সংবিধানের ২০ ও ২১ ধারার অধীনে এবং সেই সঙ্গে ফরোয়ার্ড-লুকিং ডকুমেন্ট-এর আলোকে সহায়তা দানের দায়িত্ব প্রদান করে।
১.৮ পঙ্গু ও নারীপ্রধান পরিবারসমূহকে স্টেট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেইশন কর্তৃক ক্রমবর্ধমান হারে পুনর্বাসন ও সুরক্ষাদান আইন : ২০০৮ সালের ২৬ জুন অনুমোদিত। এ আইনের বিধান অনুযায়ী সরকারকে কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে যাতে তারা এক লক্ষ পঙ্গু ও ৩০ হাজার নারীপ্রধান পরিবারকে ক্রমান্বয়ে সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম হাতে নিতে পারে।
১.৯ দেওয়ানি আইন আংশিক সংশোধন আইন : ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অনুমোদিত। এই আইন
অনুযায়ী দেওয়ানি আইনের ৯৪৬ এবং ৯৪৮ নং ধারা এমনভাবে সংশোধন করা হয় যাতে স্ত্রী স্থাবর সম্পত্তি ছাড়াও ভবন ও জায়গা জমিসহ অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারে।
২.০ শিশু-কিশোরবিষয়ক বিধানাবলি
মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষার আবশ্যকতা এবং পরিবার ও শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত বেশ কিছু সাংবিধানিক ধারার সংশোধনী আনা হয়েছে। এতে শিশু-কিশোরদেরকে দেশের ভবিষ্যতের ভিত্তিস্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং তাদের সুরক্ষায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আইন পরিষদ বহু আইন ও বিধিবিধান অনুমোদন দিয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ কয়েকটি উল্লেখ করা হলো :
২.১ অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মায়েদেরকে তাদের অভিভাবকত্ব প্রদান : অনুমোদন কাল : ১৯৮১ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এ আইন অনুযায়ী যেসব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর পিতা শহীদ হয়েছেন কিংবা পরলোকগন করেছেন,মায়েদেরকে তাদের অভিভাবকত্ব দান করা হয়। এ সকল শিশুর প্রচলিত মানের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা হয় তাদের উত্তাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে করা হবে নতুবা সরকার এ খরচ প্রদান করবে অথবা তাদের মায়েদের কোন বিপ্লবী সংস্থার দায়িত্বে দিয়ে দেয়া হবে। তবে,কোন আদালত কর্তৃক এ সকল মায়ের কেউ অযোগ্য ঘোষিত হলে অন্য কথা। ইরানের ইসলামি মজলিস ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে এ আইনটির সংশোধনী পাস করে।
২.২ জাতিসংঘ শিশু অধিকার দলিল অনুমোদন আইন : অনুমোদনকাল : ২০ ফেব্রুয়ারি,১৯৯৩।
জাতিসংঘ সনদের প্রাসঙ্গিক ধারাসমূহের উপর ভিত্তি করে এ আইনটি অনুমোদন করা হয়। এতে মানব পরিবারের সকল সদস্যের সমঅধিকারের স্বীকৃতি দান করা হয় যাতে বিশ্বে স্বাধীনতা, সুবিচার ও শান্তির ভিত্তি স্থাপিত হতে পারে। এই সম্মেলনে শিশুদেরকে মানবজাতির সর্বাধিক দুর্ভোগের শিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয় যাদের উপর নির্ভর করছে বিশ্বের ভবিষ্যৎ। এই দলিলটিতে ৫৪টি ধারা এবং একটি ভূমিকা রয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন এমন সব বিষয় এ দলিলে বিবেচনা করা হয়েছে। ইরানের সংসদ ১৯৯৩ সালে এই দলিলটি অনুমোদন করে।
২.৩ শিশু অধিকার কনভেনশন সংশোধনী গ্রহণ আইন : অনুমোদনকাল : ১০ জুলাই ২০০১। জাতিসংঘ প্রস্তাব নং এ ৫০/১৫৫- ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৫ অনুযায়ী দলিলটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
২.৪ নিকৃষ্টতম শিশুশ্রম নিষিদ্ধকরণ ও বিদূরণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কিত দলিল অনুমোদন আইন; অনুমোদনকাল : ৩০ অক্টোবর ২০০১। ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন দলিলটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাধারণ সম্মেলনে গ্রহণার্থে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে উপস্থাপিত হয় যা ২০০১ সালের অক্টোবরে ইরানের পার্লামেন্টে উপস্থাপিত হয়। পার্লামেন্ট দলিলটি অনুমোদনের পর ৩টি নোটে উল্লেখ করে যে, ইরানের ৩টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তথা খনি ও শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শ্রম ও সমাজবিষয়ক মন্ত্রণালয় দলিলটির প্রযোজ্য বিধানাবলি বলবৎ করবে।
২.৫ শিশু-কিশোর নিরাপত্তা সুরক্ষা আইন : অনুমোদন কাল : ২০ আগস্ট ২০০২। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের হয়রানি এবং শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করে এই আইনটি অনুমোদন করা হয়। ইরানের ইসলামি সংসদ এ ধরনের অপরাধের হোতাদের জন্য বিশেষ কিছু শাস্তি নিশ্চিত করে আইনটিতে অনুমোদন দেয়।
২.৬ অইরানী পুরুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ইরানী মহিলার সন্তানের নাগরিকত্ব সম্পর্কিত আইন : অনুমোদনকাল : ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬। এই আইন অনুযায়ী অইরানী স্বামীর ঔরশে ইরানে জন্ম হওয়া ইরানী মহিলার গর্ভজাত সন্তান কিংবা এ আইনটি গৃহীত হওয়ার অনুর্ধ্ব এক বছরের মধ্যে ইরানে জন্ম হওয়া সন্তানগণ তাদের বয়স আঠারো বছর পূর্ণ হলেই ইরানী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। এ ধরনের আবেদন ইরানী নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য গৃহীত হবে যদি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কিংবা নিরাপত্তাবিষয়ক কোন রেকর্ড না থাকে এবং তাদের অইরানী নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যাত না হয়ে থাকে।
২.৭ শিশু বিক্রয়, পতিতাবৃত্তি ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত শিশু শ্রমিক কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রটোকল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কর্তৃক স্বাক্ষর বিষয়ক আইন : অনুমোদনকাল ৩১ জুলাই ২০০৭। আলোচ্য প্রটোকলটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২০০০ সালের ২৫ মে তারিখে গৃহীত হয়। উল্লেখ্য,প্রটোকলটির কোন কোন বিধান ইসলামি মজলিসের পরবর্তী আইন প্রণয়নকালে অধিকতর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর একটা স্পষ্ট দৃষ্টান্ত হলো,সাইবারনেটীয় অপরাধ আইন যাতে শিশুর অপব্যবহার সম্পর্কিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই আইন অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সীদের অপব্যবহার বিষয়ক সাইবারনেটীয় অপরাধের বিশ্বজনীন যোগ্যতা বিবেচনা করে।
২.৮ সামাজিক নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য পেনশন তহবিলের অধীনে মৃত মাতার সন্তানদের বৃত্তি প্রদান আইন: এ আইন অনুযায়ী, পরলোকগত মাতা এবং একই রূপে পরলোকগত পিতারা তাদের মৃত্যুত্তোরকালে বৃত্তি প্রাপ্য হবেন। এই আইনটি অভিভাবকের অবর্তমানে সন্তানদেরকে নানারূপ দুর্ভোগ থেকে লক্ষণীয় সুরক্ষা সুবিধা দান করে।
২.৯ অভিভাবকহীন শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় আইনি বিল প্রস্তাব: উত্থাপনকাল : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। সর্বশেষ বিরাজমান পরিস্থিতির সাথে ১৯৭৪ সালে অনুমোদিত ‘অভিভাবকহীন শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা আইনটি’কে খাপ খাইয়ে নেয়া, দুর্দশায় নিপতিত এই শ্রেণিটির সুরক্ষায় অপেক্ষাকৃত উত্তম ও যথেষ্ট ভিত্তি প্রস্তুতকরণ এবং সেই সাথে ইসলামি মানদণ্ডের আলোকে পরিবারের পবিত্র মর্যাদা সংরক্ষণে বিলটি উত্থাপিত হয়। সংবিধানের ২৯ ধারার কাঠামোর মধ্যে প্রস্তুত বিলটি উপযুক্ত পরিবারসমূহকে যোগ্য শিশু-কিশোরদের অভিভাবকত্ব অর্পণে অধিকতর ব্যাপক একটা ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো অভিভাবকগণ কর্তৃক শিশুদের যত্নে উন্নততর কৌশল বাস্তবায়ন এবং উল্লিখিত শিশুকিশোরদের সাথে তাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণের সম্পর্কোন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ, যাতে তাদের লালন-পালন ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে মানসিক ও শারীরিকভাবে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত হয়। পূর্বেকার আইনটিতে এ ব্যাপারে কিছু ঘাটতি ছিল, সেকারণে এ বিলটি সংসদে আনা হয় যা বর্তমানে আলোচনাধীন আছে।
৩. নাগরিকগণের সম্মান ও গোপনীয়তা
এ বিষয়টি সংবিধানের ২২, ২৩ ও ২৫ নং ধারায় বিবেচিত হয়েছে। বিষয়টির উপর ইসলামিক সংসদে স্বাধীন ও ব্যাপকভিত্তিক কোন আইন পাস না হলেও বর্তমান আলোচ্যসূচিতে এর উপর একটা বিষয় আলোচনাধীন আছে। যাহোক, এ বিষয়ে প্রধান আইনগুলো নিম্নরূপ :
৩.১ গোপনীয়তা প্রস্তাব : উত্থাপনকাল : ২৮ জুন,২০০৬। প্রস্তাবটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ৮ম সরকার ক্ষমতাশীন থাকাকালে একটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপিত হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এর আগে ৭ম সংসদে বিষয়টি উত্থাপিত হয় এবং এর সাধারণ দিকগুলো পাস হয়। তবে চূড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার জন্য আর কোন বিতর্ক আলোচনা হয়নি। সংবিধানের ২৩ ও ২৫ ধারার অধীনে প্রস্তাবটি শুধু যে আবশ্যকীয় তা নয়; বরং এর ব্যাপকতার কারণে এটি অন্য আরো কিছু ক্ষেত্রে দরকারিও বটে, যদিও চূড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার জন্য প্রস্তাবটিতে কিছু কিছু সংশোধনী প্রয়োজন।
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক সামরিক ও রাজনৈতিক অধিকার কনভেনশনসহ কিছু কিছু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মানবাধিকার কনভেশনে আমাদের দেশের অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে এই বিষয়টির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কেননা, এ সকল অধিকার বিষয়ে আমাদের যুক্ত থাকতে ও তা মেনে চলতে হবে,সে অনুযায়ী কিছু কিছু অভ্যন্তরীণ আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রস্তাবটিতে আছে ৭টি অধ্যায়। ‘সংজ্ঞা ও সাধারণবিধি’ শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে প্রযোজ্য কিছু ধারণা,বিশেষত গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং সেই সাথে আরো কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়। দৈহিক গোপনীয়তার উপর ২য় অধ্যায়ে বিবেচিত হয়েছে কিছু বিষয়, যেমন কীভাবে কোন ব্যক্তিকে তদন্ত বা অনুসন্ধান করা যেতে পারে। স্থান ও বাড়িঘরের গোপনীয়তা সম্পর্কিত ৩য় অধ্যায়টিতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কর্মপ্রক্রিয়াকে সংজ্ঞায়িত ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ৪র্থ অধ্যায়ে রয়েছে কর্মক্ষেত্রের গোপনীয়তা বিষয়ক বিধানাবলি এবং ৫ম অধ্যায় বিবেচনা করা হয়েছে তথ্য গোপনীয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। অপরদিকে ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে আছে বিশেষত যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার বিষয়টি এবং সবশেষে ৭ম অধ্যায়ে রয়েছে গোপনীয়তা লঙ্ঘন থেকে উদ্ভূত বিষয়সমূহের শ্রেণিবিন্যাস।
৩.২ তথ্য প্রকাশ সম্পর্কিত গৃহীত বিলের অংশবিশেষ ও তথ্যে অবাধ প্রবেশগম্যতা : ২৯ জানুয়ারি, ২০০৯। এই আইনের ভিত্তি হচ্ছে সরকারি তথ্যে স্বচ্ছতা প্রবর্ধন, যা পরবর্তী অংশগুলোতে দেখা যাবে। অবশ্য এ আইনে কিছু তথ্যকে ব্যতিক্রম হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয় যার মধ্যে পড়ে ৪র্থ অধ্যায়ে বিধৃত ব্যক্তির গোপনীয়তাবিষয়ক আইন।
৩.৩ সাইবারনেটীয় আইনের ক্ষেত্রসমূহ : গ্রহণকাল : ৩১ মে ২০০৯। এই আইনের ১৬ ও ১৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে কম্পিউটার কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে কৃত যে কোন কর্ম যা ব্যক্তিকে হেয়করণের জন্য করা হয় সেগুলোকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে- যা শাস্তিযোগ্য। অধিকন্তু এ আইনের ২য় অনুচ্ছেদে বর্ণিত ব্যক্তিগত গোপনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে আড়িপাতা অপরাধ হিসেবে গণ্য। ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এরূপ নিয়ম লঙ্ঘনে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা হয়েছে। তদুপরি,এই আইনের ২য় অংশে বা সাইবারনেট সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কিত কিছু বিশেষ সুরক্ষা বিধান দেয়া হয়েছে যেগুলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে হস্তান্তরযোগ্য তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন সম্পর্কিত (ধারা ৩২-৩৫ এবং ধারা-৪৯)।
৪. মত প্রকাশ ও তথ্য স্বাধীনতা
সংবিধানের ৪ নং, ২৬ নং ও ২৭ নং ধারা এই বিষয় ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য দিক সম্পর্কিত। অবশ্য সংবাদপত্র সম্পর্কিত সংবিধানের ১৬৮ নং ধারা মতে এ ধরনের মামলার বিচার হওয়া উচিত প্রকাশ্যে এবং জুরিগণের উপস্থিতিতে।
৪.১ বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী, রাজনৈতিক ও বাণিজ্য সমিতি এবং স্বীকৃতি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কর্মতৎপরতা (সম্পর্কিত) আইন; গ্রহণকাল : ২০ আগস্ট, ১৯৭১। এ আইন অনুযায়ী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাধারণ নীতিমালার ভিতর সুনির্দিষ্টরূপে সুরক্ষা অধিকার ও মানদণ্ডের অধীনে এ ধরনের দল বা গোষ্ঠী গঠন অনুমোদিত।
৪.২ সংবাদপত্র আইন; গ্রহণকাল : ৩রা মার্চ, ১৯৮৫। লক্ষণীয় যে, এ আইনটি এক শতাব্দীরও অধিক আগে অর্থাৎ ১৯০৭ সালে প্রণীত। তবে ১৯৮৯ সালে এটিতে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয় এবং ইসলামি সংসদ কর্তৃক পাস হয়। অতঃপর আইনটিতে কিছু কিছু সংশোধনীও আনা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক প্রকাশনাকে অন্তর্ভুক্ত করে বিধান-১ এ একটা নোট যুক্তকরণ। যাতে এ আইনের অধীনে উপযুক্ত আইনি সুরক্ষা হিসেবে ই-প্রকাশনার মালিকগণ কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের বিচার উপযুক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন আদালত কর্তৃক জুরিগণের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে।
৪.৩ তথ্য প্রদান ও অবাধ তথ্য প্রবেশগম্যতা বিল : গ্রহণকাল : ২৯ জানুয়ারি, ২০০৯। পাস হওয়া এ বিলটিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণের অন্যতম মৌলিক মানবাধিকার তথা সরকারি তথ্যে প্রবেশগম্যতা প্রতিফলিত হয়েছে। বিলটি এখনও জাতীয় উপযুক্ততা পরিষদের (ইক্সপিডিয়েন্সী কাউন্সিল) অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন, কেননা, এটি অভিভাবক পরিষদের আপত্তির মুখে পড়েছে যা সংসদ কর্তৃক পরিবর্ধিত হয়নি। এই অধিকারটি যাতে অব্যব্যহারিক না হয় সেজন্য এর কিছু কিছু অধ্যায়ে এমন ব্যাখ্যাদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে এগুলোতে তথ্য প্রবেশগম্যতা থাকে এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্তব্যাদি সন্নিবিষ্ট থাকে। অধিকন্তু, একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যাতে তারা একটা তথ্য প্রদান ও অবাধ তথ্য প্রবেশগম্যতা কমিটি গঠন করে যাদের দায়িত্ব হবে সম্ভাব্য সর্বোত্তম পন্থায় এ আইনটি প্রয়োগ করা- পরিকল্পনা থেকে নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত। এ ছাড়াও যেহেতু সরকারিভাবে শ্রেণিকরণকৃত তথ্য এবং জনগণের নিকট প্রদানযোগ্য অন্যান্য তথ্যের ব্যাপারে প্রয়োগযোগ্য আর কোন ব্যাপকভিত্তিক আইন নেই সেহেতু এ আইনটি প্রয়োগে যেকোন ব্যর্থতা রোধে বিশেষত এমন ব্যর্থতা যা ইরানী জনগণকে তাদের প্রতিষ্ঠিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে, আইনটিতে একটা আলাদা অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে। সবশেষে, এ আইনের বিধানসমূহ লঙ্ঘনের অপরাধের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ কিছু কিছু বিষয়ে সুনিশ্চয়তার বিধান রাখা হয়েছে।
৪.৪ সাইবারনেট সংক্রান্ত অপরাধ আইনের অংশসমূহ: অনুমোদনকাল : ৩০ মে, ২০০৯। সাইবার পরিবেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষার্থে এ আইনের অধীনে উপযুক্ত বিধানাবলি বিবেচনা করা হয়েছে। একই সাথে এতে সংবাদ ওয়েবসাইটসমূহকে অবাঞ্ছিত মতপ্রকাশ পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট পরিবীক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ধারা-২১ এর অধীনে শুধু ফৌজদারি অপরাধের ঘটনার ক্ষেত্রসমূহেই পরিবীক্ষণ করা হবে, অনৈতিক কাজের ক্ষেত্রে নয়। প্রসিকিউটার জেনারেলের সভাপতিত্বে কর্মতৎপর ১১ সদস্যের একটি সরকারি ওয়ার্কিং গ্রুপ যথোপযুক্ত ও প্রয়োগযোগ্য রুলিং জারি করবে। অধিকন্তু,ওয়েবসাইট পরিবীক্ষণের বিষয়টি যদি ব্যক্তিগত অভিযোগ হয়, তবে শুধু প্রাসঙ্গিক বিচারিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের নির্দেশের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ গৃহীত হবে। ২১ ধারার ১ নং নোটের অধীনে বিধৃত অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল,কোন কোন অবস্থায় অপরাধী পক্ষের ওয়েবসাইট পরিবীক্ষণ করা হবে না এবং এতদসম্পর্কিত আইনসঙ্গত বিষয়বস্তুতে মানুষের প্রবেশগম্যতা বজায় রাখা হবে। কোন কোন অবস্থায় এই আদেশটি বলবৎযোগ্য যাতে ঐ ওয়েবসাইটটির অপরাধের প্রকৃতি তৎক্ষণাৎ অকার্যকর হয়ে যায়।
৫. নৃগোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু
বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিপালনের উপর গুরুত্ব দিয়ে সংবিধানে অনেক ধারা রয়েছে। যাতে তাদের বিশেষ রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয়েছে। এসকল ধারার মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ১২ থেকে ১৫, ১৯ এবং ২০ নং ধারা। লক্ষণীয় যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণেতাগণ সব সময়েই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন বা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এসেছেন। অধিকন্তু এ সকল ধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইরানের ইসলামি সংসদ এ ব্যাপারে বিভিন্ন সুরক্ষামূলক আইন প্রণয়ন করে এসেছেন। নিম্নে বর্তমানে প্রযোজ্য এ ধরনের কিছু আইনের অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো :
৫.১ বর্ণবাদী বৈষম্যের সকল রূপ মূলোৎপাটনে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সম্পর্কিত আইন : ২১ জুলাই, ১৯৬৮। একটি ভূমিকা ও ২৫টি ধারা সম্বলিত এই কনভেনশনটি জাতিসংঘের সকল সদস্য কর্তৃক সমগ্র মানবজাতির প্রশংসা ও তাদের সমতা ও সমযোগ্যতার নীতির প্রতি সম্মানার্থে গৃহীত হয়েছিল। এ দলিলে স্বাক্ষরকারী হিসেবে আমাদের দেশের তৎকালীন জাতীয় পরামর্শ সভা কর্তৃক এটি পাস হয়েছিল।
৫.২ বর্ণবাদী বৈষম্য প্রচারের শাস্তি আইন : পাসকাল : ২১ জুলাই ১৯৭৭। এই আইনের ধারা-১ অনুযায়ী গণমাধ্যমের দ্বারা বর্ণ, নারী-পুরুষ এবং বর্ণবাদী বিদ্বেষভিত্তিক যেকোন বৈষম্যমূলক ধারণার প্রচার-প্রকাশ এবং বর্ণ ও নারী-পুরুষভিত্তিক কোন উস্কানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেই সাথে বর্ণবাদী প্রকৃতির কোন কর্ম তৎপরতায় আর্থিকসহ যেকোন সাহায্য-সহযাগিতা প্রদানকে নিষিদ্ধ করা হবে এবং অপরাধীকে জেল এবং আর্থিক দণ্ড পেতে হবে।
৫.৩ আন্তর্জাতিক বর্ণবাদী অপরাধ নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তি প্রদান কনভেনশনে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের যোগদান আইন : অনুমোদনকাল : ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫। বর্ণবাদী,লিঙ্গভিত্তিক,ভাষাভিত্তিক এবং ধর্মীয় বৈষম্যের সকল রূপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানবগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধার স্বাক্ষরস্বরূপ এই দলিলটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৩০ নভেম্বর ১৯৭৩ সালে গৃহীত হয়। ১৯৮০ সালে ইরানের ইসলামি জাতীয় সংসদ অভিভাবক পরিষদের অনুমোদনক্রমে এটি পাস করে।
৫.৪ ক্রীড়ায় বর্ণবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্মতি আইন : অনুমোদনকাল : ২৯শে সেপ্টেম্বর,১৯৮৭। একটি ভূমিকা ও ২২টি ধারা সম্মলিত এই দলিলটি জাতিসংঘ সদস্যদের নিকট উপস্থাপিত হয় ১৯৮৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে। ক্রীড়াক্ষেত্রে সকল বৈষম্য সৃষ্টিকারী বিষয়কে দূর করার লক্ষ্যে একটি দলিল হিসেবে এটি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত হয়।
অনুবাদ : মিয়া আবদুল আউয়াল
ইরানের পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত মানবাধিকার বিষয়ক আইনের বিধানসমূহের সংক্ষিপ্ত সার | |