ইসলাম-পরিচিতি (৪)
সার্বিক বিধিবিধান ও হুকুমতের মূল ভিত্তিসমূহ
মহানবি (সা.) কর্তৃক মদীনায় প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটি তাঁর জীবদ্দশায়ই আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এ রাষ্ট্রটি যে ধর্মীয় রাজনীতি ও ইসলামি রাষ্ট্রের একটি বাস্তব নমুনা ছিল তা সম্পূর্ণ স্পষ্ট।
ইসলামের এ প্রাথমিক রাষ্ট্রটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিশাল এক অঞ্চল জুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। ইসলামের বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে মহানবি (সা.)-এর ইন্তেকালের পর প্রত্যেক যুগেই উম্মতকে দিকনির্দেশনা দান ও পরিচালনার জন্য একজন ইমাম বা নেতা থাকতে হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে ঐ নেতা ও ইমামের বৈশিষ্ট্য কী হবে এবং কে বা কারা তাকে নির্বাচন করবে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে মহানবি (সা.)-এর ওফাতের পর ইসলামি উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয় তা হলো ইমামত ও নেতৃত্ব। এ মতপার্থক্য সাকিফার ঘটনার দ্বারা সৃষ্টি হয়।
আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিতে ইমাম বা খলিফা হয় পূর্ববর্তী খলিফা দ্বারা মনোনীত অথবা পরামর্শ পরিষদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বলপ্রয়োগ ও জোরপূর্বক ক্ষমতাদখল ও খলিফা মনোনয়নের এক বৈধ পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃতি পায়। আহলে সুন্নাতের সব দলই এ বিষয়ে একমত যে, খলিফা বা ইমাম পূর্ব থেকে নির্ধারিত নয় এবং লোকেরা যাকে খলিফা বা ইমাম হিসাবে নির্বাচন করবে তার আনুগত্য অপরিহার্য।
তাদের মতে ইসলামের প্রথম যুগের যেচার সাহাবা পর্যায়ক্রমে ক্ষমতা লাভ করেছেন অর্থাৎ আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (আ.) হলেন রাশেদীন খলিফা। এই চার খলিফার পর বনি উমাইয়া ও বনি আব্বাসের শাসকরা খলিফা হিসাবে ইসলামি ভূখণ্ডের বিস্তৃত এক অঞ্চলে শাসন করেছেন। পরবর্তীতে তুরস্কের উসমানি শাসকরা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ইসলামি খেলাফতের উত্তরসূরী হিসাবে শাসন পরিচালনা করেছেন।
শিয়ারা মহানবি (সা.)-এর পর ইমামত বা নেতৃত্বের পদটি হযরত আলী (আ.)-এর অধিকার বলে মনে করে। বার ইমামি শিয়ারা ইমামতকে একটি ঐশী পদ হিসাবে বিবেচনা করে যা মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়। তারা বিশ্বাস করে এ পদটি মহানবি (সা.)-এর পর হযরত আলী (আ.) অতঃপর তাঁর ১১জন সন্তানের কাছে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বার ইমামি শিয়াদের নিকট ইমামতের পদটি একটি পবিত্র পদ এবং ইমামরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হন। একমাত্র প্রথম ইমাম, হযরত আলী (আ.) ও দ্বিতীয় ইমাম, হযরত হাসান (আ.) (কিছুদিনের জন্য) তাঁদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষমতা ও নেতৃত্বও লাভ করেছিলেন। শেষ জামানায় ও যখন বারতম ইমাম, হযরত মাহদী (আ.)–যিনি এখন মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছেন-আত্মপ্রকাশ করবেন তখন তিনি বিশ্বব্যাপী ন্যায়ভিত্তিকশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন।
শিয়া ইমামদের ধারাটি মহানবি (সা.)-এর বংশধারায় তাঁর আহলে বাইতের জন্য নির্দিষ্ট। প্রথম হিজরি শতাব্দীতে এ ধারা হযরত আলী (আ.)-এর থেকে শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয় হিজরি শতাব্দীতে তা ইমাম বাকির ও ইমাম সাদিকের–বিভিন্ন মাজহাব ও ফিরকার গ্রন্থসমূহে যাঁরা মহান ফকীহ হিসাবে স্বীকৃত- অতঃপর তৃতীয় হিজরি শতাব্দীতে ইমাম জাওয়াদ, ইমাম হাদী, ইমাম আসকারী ও ইমাম মাহদীর মাধ্যমে অব্যাহত ছিল।
এ বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা কখনই সমীচীন হবে না যে, ইমামদের ফিকাহগত মত ও শিক্ষা তাঁদের সমসাময়িক সামাজিক অবস্থা ও সাংস্কৃতিক চাহিদার সাথে সম্পর্কহীন ছিল না। এর ভিত্তিতে বলা যায়, এ দাবিটি অবান্তর নয় যে, ইমাম সাদিক (আ.)-এর মাধ্যমে ইমামিয়া ফিকাহশাস্ত্রের সঙ্কলন ও একে একটি ব্যবস্থা হিসাবে রূপদানের কাজটি ইসলামি ইতিহাসে ফিকাহশাস্ত্র সঙ্কলনের সূচনার যুগেই হয়েছিল।
ইসলামি রাষ্ট্র ও হুকুমত
মহানবি (সা.) মদীনায় যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তাঁর জীবদ্দশায়ই তা আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এ রাষ্ট্রটি যে ধর্মীয় রাজনীতি ও ইসলামি রাষ্ট্রের একটি বাস্তব নমুনা ছিল তা সম্পূর্ণ স্পষ্ট। ইসলামের এ প্রাথমিক রাষ্ট্রটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিশাল এক অঞ্চল জুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।
ইসলাম-পরিচিতি (৪) | |