বাদগীর (উইন্ডক্যাচার)
বাদগীর হলো একটি প্যাসেজ যা ভবনের ছাদে তৈরি করা হয় যাতে ভবনের ভেতরে বাতাস সরবরাহ করা যায়।
বাদগীরের ঐতিহাসিক পটভূমি
বাদগীর (যাকে উইন্ড টাওয়ারও বলা হয়) প্রাচীন কাল থেকেই ভবনের ভিতরের বাতাসকে শীতল ও রূপান্তরিত করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এর ঐতিহাসিক পটভূমি বিবেচনা করলে এই সম্ভাবনা দেওয়া যায় যে, এটি ইরানিদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল; যদিও এর কিছু নিদর্শন প্রাচীন মিশর ও ব্যাবিলনেও দেখা যায়। আরবরাও এর সাথে পরিচিত হয়েছিল এবং এটি বিশ্বাস করা হয় যে, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব অংশ ও মিশরের মতো অঞ্চলে বাদগীর ব্যবহারের প্রসার ইসলামি যুগে এবং ইরাকের মাধ্যমে হয়েছিল। ইরানের অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে যেখানে এক বা একাধিক দিক থেকে অনুকূল বাতাসের প্রবাহ রয়েছে, সেখানে ঘর-বাড়িকে শীতল করার জন্য বাদগীরগুলো বাতাসের দিকে তৈরি করা হয়ে থাকে।
বাদগীরের বিভিন্ন অংশ
প্রতিটি বদগীরের তিনটি অংশ রয়েছে: ১. একটি দীর্ঘ ও ঊর্ধ্বমুখী ক্রস-সেকশনসহ বাইরের উন্মুক্ত অংশ। ২. একটি টিউব বা উইন্ড পাস, যা ছাদ থেকে ভেতরের দিকে বাতাসকে প্রবাহিত করে। ৩. একটি অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত অংশ যা ছাদ বা প্রাচীরের একটি কোণ থেকে প্রবেশ করে। অনেক সময় এর নিচে একটি ঘর তৈরি করা হয়, যাকে উইন্ডক্যাচার রুম বলে।
বাদগীরের প্রকারভেদ
আকৃতির উপর নির্ভর করে বাদগীরগুলোকে নিম্নরূপে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:
১. বর্গাকার (বা ঘন), ২. নলাকার, ৩. অষ্টভুজাকার এবং ৪. আয়তাকার।
সাধারণত যেখানে অনুকূল বাতাস বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয় সেখানে বাদগীরগুলো ঘন,নলাকার বা অষ্টভুজাকার আকারে তৈরি করা হয় এবং যেখানে অনুকূল বাতাস শুধু এক দিক থেকে প্রবাহিত হয়,সেখানে আয়তাকার ক্রস-সেকশনসহ একটি মাত্র উইন্ডক্যাচার ব্যবহার করা হয়।
বায়ু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত দিকের উপর ভিত্তি করে নিম্নরূপে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:
১. একটি উন্মুক্ত ও আয়তাকার ক্রস-সেকশনসহ একক উইন্ডক্যাচার,যা বাতাসের দিকে মুখ করা। কখনও কখনও এগুলোকে টর্নেডোর মতো বাতাস সহ্য করার জন্য একটি ঢালসহকারে তৈরি করা হয়।
২. দুইদিক উন্মুক্ত উইন্ডক্যাচার, যা সচরাচর নির্মাণ করা হয় না। অনেক সময় এই ধরনের উইন্ডক্যাচারের পরস্পরের ভিতরে দুটি উন্মুক্ত অংশ থাকে, একটি নিচের দিকে, অন্যটি উপরের দিকে-যার প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক বায়ু প্রবেশের পথ রয়েছে যাতে যখনই স্থলভাগ থেকে বা উপর থেকে অনুকূল বায়ু প্রবাহিত হয় তখন সেগুলোর যে কোনোটি বাতাসকে ভেতরের দিকে নিয়ে আসতে পারে।
৩. চারদিক উন্মুক্ত উইন্ডক্যাচার, যা এমন জায়গায় তৈরি করা হয় যেখানে বিভিন্ন দিক থেকে অনুকূল বায়ু প্রবাহিত হয়। এই ধরনের বাদগীরগুলোর একটি দিকের উন্মুক্ত অংশ বাতাসকে ভেতরে প্রবাহিত করে আর অন্যগুলো বাতাসকে বাইরে পাঠায়। এই ধরনের বাদগীরের বেশিরভাগই মিনাব ও কেশম দ্বীপে দেখতে পাওয়া যায়।
ইরানি উইন্ডক্যাচারের নমুনা
ইয়াজদ এবং এর আশেপাশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, যেমন আরদাকান, নাইন, ইসফাহান এবং অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি ওমান সাগর ও পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ উপকূলীয় শহরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের বাদগীর পাওয়া যায়। সবচেয়ে উঁচু বাদগীর হলো ইয়াজদের দৌলতাবাদ গার্ডেন প্যালেস ভবন, যা সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর উইন্ডব্রেক। ইয়াজদের কিছু কিছু জলাধারে চার বা পাঁচটি উইন্ডব্রেক রয়েছে এবং ছয়টি উইন্ডব্রেক সহ একটি জলাধারও নির্মিত হয়েছে। বেশিরভাগ আরদাকান উইন্ডব্রেক একক-স্প্যান এবং ভাররক্ষাকারী কাঠামো দিয়ে তৈরি। সবচেয়ে লম্বা বিদ্যমান উইন্ডক্যাচার হলো ইয়াজদের দৌলাতাবাদ বাগান যা সম্ভবত ইরানের সবচেয়ে সুন্দর উইন্ডক্যাচার। আরদাকান শহরের বাদগীরগুলো সাধারণত একটি একক উন্মুক্ত অংশ এবং একটি ঢালসহযোগে নির্মিত হয়।
বাদগীর সাধারণত বাসা-বাড়িতে দেখা যায়। তবে এগুলো মসজিদ, বিদ্যালয়, জলাধার ও সরাইখানার মতো কিছু সর্বসাধারণ ভবনেও দেখা যায়।
লেখক: আলী মোহাম্মদ রানজবার কেরমানি
বাদগীর (উইন্ডক্যাচার) | |