এজেন্সি
হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এবং নারীর ত্রিমাত্রিক ভূমিকা

হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এবং নারীর ত্রিমাত্রিক ভূমিকা

হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এবং নারীর ত্রিমাত্রিক ভূমিকা

[২০ জমাদিউসসানি নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ নিবন্ধটি রচিত]

আব্দুল কুদ্দুস বাদশা

যে ব্যক্তি পৃথিবীতে ও পরলোকে উৎকৃষ্ট জীবন লাভ করতে চায় তার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের জীবনচরিতেই রয়েছে সর্বোত্তম নির্দেশনা। এ বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁদের ব্যবহারিক জীবনকে আদর্শ হিসাবে অনুসরণ করা ব্যতীত কোনো মানুষের পক্ষে সেই উৎকৃষ্ট জীবন অর্জন করা সম্ভবপর নয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইতের মধ্যে কেন্দ্রিয় ব্যক্তিত্ব হলেন নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.)। তাঁর পূত-পবিত্র জীবনচরিত বিশেষ করে মুসলিম নারীদের জন্য সূর্যের ন্যায় আলোকবর্তিকাস্বরূপ। আজকের বিশ্ব নারীসমাজ যে সমস্ত কঠিন সমস্যায় জর্জরিত, তার বহুলাংশের নিরসন সম্ভব এই মহীয়সী নারীর জীবনাচারের সাথে পরিচিত হওয়া এবং সেখান থেকে আদর্শ গ্রহণের মাধ্যমে। বর্তমান বিশ্বে যখন পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে মুসলমান নারী ও তরুণীদের জন্য একটি অশ্লীল ও অমানবিক আদর্শ উপস্থাপন করতে চায়, তখন হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের সূক্ষ্ম দিকগুলো আবিষ্কার করার মাধ্যমে শুধু মুসলিম নারীর জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের নারীদের জন্য একটি ব্যবহারিক জীবনাদর্শ উপস্থাপন করা যেতে পারে।
আজকের নারীর তার সত্যিকার আপন সত্তাকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে যত সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো জন্ম নিয়েছে একটি বিষয় থেকে। আর তা হল ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিকÑ এই তিন ক্ষেত্রে নারীর জীবনে ভারসাম্যতা প্রতিষ্ঠিত না থাকা। অর্থাৎ তার দরকার একটি ভারসাম্যশীল জীবনাদর্শ। এক্ষেত্রে হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর জীবনচরিতই তার জন্য সর্বোত্তম জীবনাদর্শ, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রত্যেক নারীর জন্য ধর্মীয় কর্তব্যসমূহ যথাযথ পালন ব্যতিরেকেও তিনটি ভূমিকা থাকে : ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক। হয়ত কোন কোন ধর্মে নারীর এই ত্রিমাত্রিক ভূমিকার মধ্য থেকে একটিকে অপরটি অপেক্ষা হালকা করে দেখা হয়েছে। কিংবা নারীর মঙ্গলার্থে সঠিকভাবে তা সংজ্ঞায়ন করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ মধ্যযুগীয় খ্রিষ্ট ধর্মে তারাই খ্রিষ্টান হতে পারতো যারা কখনো নারীর চারপাশে ঘুরবে না। একারণেই দেখা যায় যে, পাদ্রি ও পুরোহিতরা আজীবনে বিবাহ করে না। কেননা, বিবাহ হচ্ছে এমন বন্ধন যা ঈশ্বরকে ক্রোধান্বিত করে থাকে। তওরাতেও নারীদের অস্তিত্বকে মৃত্যুর চেয়ে তিতা বলে মনে করা হয়েছে। ইয়াহুদীদের প্রাত্যহিক প্রার্থনাবাণীর মধ্যে বলা হয়েছে, কৃতজ্ঞতা ঈশ্বরকে যিনি আমাকে পুরুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অথবা উপাসনালয় ও গির্জার শিক্ষায় বলা হয়েছে, নারী হচ্ছে পুরুষের সেবাকারিণী, আর পুরুষ নারীর মনিব। কখনোবা নারীকে তার সৃষ্টি-স্বভাবের দাবি অনুসারে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়। অবশ্য নিঃসন্দেহে সকল নবী-রাসূলই নারীর মর্যাদার প্রতিরক্ষক ছিলেন এবং তার প্রতি যে কোন ধরনের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বিকৃত কিতাবসমূহের বিধানাবলির কারণেই নারী তার মর্যাদা ও সম্মান হারায়।
এই বিচ্যুতির ধারা চলতে থাকে। যা এক পর্যায়ে পাশ্চাত্যে প্রতিবাদের মুখে পড়ে এবং নারীবাদী আন্দোলনে রূপ পরিগ্রহ করে। এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল নারী অধিকারকে পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে বাড়াবাড়ি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, কিছু কিছু বিষয়, যেমন : গর্ভপাতের স্বাধীনতা, প্রজনন প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, সেক্সুয়্যাল সোশ্যালিজম ইত্যাদি অবাঞ্ছিত বিষয়াবলিও বৈধ করার দাবি ওঠে। যার ফলে নৈতিক প্রতিশ্রুতিশীলতার আর কোন জায়গাই অবশিষ্ট থাকেনি। এতে শুধু যে নারীর নৈতিক দিকের খর্ব ঘটেছে, তা নয়, বরং তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদাও উন্নত হয়নি। জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী নারীর কর্ম ও পেশাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তার পরিবারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির স্থলাভিষিক্ত করার পরও এখনও ৯০ ভাগ উপার্জন পুরুষের হাতে। অপরদিকে কর্ম-বাজারে নারীকে অতিমাত্রায় টেনে আনার কারণে পাশ্চাত্যে পরিবারের ভিত্ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে এবং সন্তানদের মাতৃ¯েœহ ও মাতৃমমতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সেই সাথে সমানতালে বৃদ্ধি পেয়েছে যৌন নিপীড়ন ও নারী নিগ্রহের হার। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, যখন স্বাধীনতার নামে নারীর সম্ভ্রম ও লজ্জাশীলতা বিস্মৃতির কবলে পড়ে, তখন ফলাফল এটা ভিন্ন অন্য কিছু আশা করা যায় না। আশার কথা হল, এই ভ্রান্ত পথের অভিজ্ঞতা আজ নারীকে পুনরায় পরিবার ও সম্ভ্রমের দিকে প্রত্যাবর্তনে চালিত করছে। কিন্তু প্রশ্ন হল একটি সঠিক শিক্ষা ও আদর্শ না থাকলে কি নারী তার ত্রিমাত্রিক (ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক) ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবে?
হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) তাঁর ঈমান ও আকিদা-বিশ্বাসগত গুণাবলির (যা একজন মুসলমান নারীর জন্য স্বতন্ত্র) পাশাপাশি কিছু সর্বজনীন গুণ-বৈশিষ্ট্যেরও অধিকারী ছিলেন, যা সকল সম্প্রদায় ও জাতির নারীর জন্য আদর্শ হওয়ার উপযুক্ত। তিনি তাঁর জীবনধারায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক (মা ও স্ত্রী হিসাবে) এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকায় নারীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। ব্যক্তিজীবনে সরলতা ও অনাড়ম্বরতা, মানবপ্রেম ও পরোপকার, ধৈর্য ও আত্ম-ত্যাগ, লজ্জাশীলতা ও আত্ম-সম্ভ্রম ইত্যাদি মানবিক গুণাবলিতে এই মহিয়সী রমণী ছিলেন আদর্শ দর্পণস্বরূপ। এই মানবিক তাৎপর্যগুলো সর্বযুগে প্রশংসনীয় ছিল এবং থাকবে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো মানবের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই এগুলো চিরসত্য। পরিবেশের প্রভাব কিংবা বস্তুগত ও প্রযুক্তিগত চাকচিক্য কোনদিন এ সত্যকে বদলাতে পারে না। অর্থাৎ পরিবেশ, প্রযুক্তি ইত্যাদি বাহ্যিক কারণে কখনো অশ্লীলতা ও মিথ্যাচার পছন্দনীয় আর লজ্জাশীলতা ও সত্যবাদিতা নিন্দনীয় হয়ে যায় না। হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর জীবনচরিত প্রকৃতপক্ষে নির্দেশ করে যে, ইসলাম চুলচেরা মনোযোগের সাথে ব্যক্তির সুস্থতা ও নিরাপত্তা এবং তারই সূত্র ধরে সমাজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে। তাই তো দেখা যায় যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় ‘নারীর জন্য সবচেয়ে উত্তম কী?’- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নারীরা পুরুষদেরকে দেখবে না, আর পুরুষরা নারীদেরকে দেখবে না’। প্রকৃতপক্ষে তাঁর এ উক্তি থেকে যা উপলব্ধ হয়, সেটা হল সমাজের নৈতিক ও সামাজিক সুস্থতা ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি নিহিত রয়েছে নারীদের সম্ভ্রম সংরক্ষণ ও পর্দানশীন থাকার মধ্যে। দুঃখজনকভাবে আজ যা শুধু পাশ্চাত্য সমাজেই নয়, মুসলিম সমাজগুলোতেও প্রচ-ভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কবলে পড়েছে।
হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) পারিবারিক জীবনের পরিসরে এবং মা ও স্ত্রী হিসাবে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত সর্বতো অধিকার ভোগ করেন, যে অধিকার অন্য কোন মতাদর্শে কিংবা ধর্মে এমনকি চিন্তাও করা যায় না। পাশাপাশি তিনি স্বীয় ধর্মীয় কর্তব্যসমূহকে সর্বোত্তমভাবে পালন করেন। ইসলামে নারী নিজের জন্য কিংবা তার পরিবারের জন্য কাজ করতে বাধ্য নয়। নারীর ভরণপোষণ বহন করা শরয়ীভাবে পুরুষের ওপর ওয়াজিব। এমনকি এই যে নারী পরিবারে শিশুকে দুধ পান করায়, এ বাবদ স্বামীর নিকট থেকে অর্থ গ্রহণের অধিকার ছাড়াও অন্যান্য অধিকার তার রয়েছে। কিন্তু ফাতেমা যাহরা (আ.) অন্য কোন কিছুর আগে নিজের মাতৃত্ব ও স্ত্রীত্বের ভূমিকার প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিলেন, যা বর্তমানে অনেক পরিবারে চোখে পড়ে না। নারী যখন একাকীত্বের ভয়ে কিংবা অর্থ-সম্পদ না থাকার ভয়ে বিবাহে ব্রতী হয়, অথবা বিবাহের পূর্বে বিচিত্র সম্পর্কের জগতকে পরখ করে আসে, তখন তার ফলাফল দাঁড়ায় শ্বেত বিবাহ, সিঙ্গেল মাদার, আলাদা পরিবার, নিঃসন্তান দম্পতি, পরিচয়হীন সন্তান, যথেচ্ছ বিবাহবিচ্ছেদের মত ঘটনাবলির দৌরাত্ম্য। আর এই সবকিছুর কুফল হল ভয়ানক আত্মিক ও মানসিক সমস্যার অশান্তি। কেউ বা মাদকাসক্তির মধ্যে ডুব দেয়। আবার কেউ বা বেছে নেয় আত্মহননের পথ। সুতরাং পরিবারে নারীর মা ও স্ত্রী হিসাবে ভূমিকা পালনের প্রতি অকৃত্রিম আগ্রহ ও ভালবাসা যে জীবনের বুনিয়াদ রচনা করে, তা মানব জীবনযাত্রাকে সুদৃঢ়করণ, সুযোগ্য সন্তান-সন্ততি লালন পালন এবং সৌভাগ্যবান সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
আরেকটি বিষয় হল, ইসলামের বিরুদ্ধে যে কু-ধারণা ও অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকে যে, এখানে নারীরা ঘরে বন্দি, তা মোটেও সত্য নয়। বরং ইসলামে শুধু যে সমাজে নারীর সক্রিয় উপস্থিতিকে নিষেধ করা হয়নি, বরং সমাজে তাদের ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ফাতেমা যাহরা (আ.) সর্বকালের নারীদের আদর্শ হিসাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন। তবে এ উপস্থিতি কিরূপে হবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা আজকে বিভিন্ন সমাজে পরিলক্ষিত হয় যে, নারীদের অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবং চমকপ্রদ সব স্লোগান ব্যবহার করে তাদেরকে কেবল রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য উপকরণের ন্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজেই সমাজ ও রাজনীতির অঙ্গনে নারীদের উপস্থিতির অন্যতম পূর্বশর্ত হল নারীর মর্যাদা সুরক্ষিত থাকা। অর্থাৎ সমাজে এই উপস্থিতি যেন নারীর মানবিক মর্যাদায় আঘাত হানার কারণ না হয়। পাশ্চাত্যে নারীমুক্তির যেসব স্লোগান দেওয়া হয়ে থাকে সবই অন্তঃসারশূন্য। বাস্তবিকপক্ষে তা নারীর স্খলনের পথকেই প্রশস্ত করে থাকে। কেননা, তাদের বিভিন্ন ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়। যেমন ভোট প্রদানের অধিকার, গর্ভপাতের অধিকার, বিনাদোষে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, যৌন স্বাধীনতা, রাজনীতি সমাজ ও অর্থনীতিতে ব্যাপকভিত্তিক উপস্থিতির স্বাধীনতা ইত্যাদি। ফলে বিবাহের বয়স ও সিঙ্গেল লাইফের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়া, দুই লিঙ্গের মাঝে দ্বান্দ্বিক মনোভাব সৃষ্টি, নারীত্ব ধ্বংসকরণ এবং নারীদের পরিচয় সঙ্কট, পৌরুষত্বের দুর্বলীকরণ, ব্যক্তি ও সমাজের সীমানা তুলে দেওয়া, সমকামিতার প্রচলন, গর্ভপাত সৃষ্টির মাধ্যমে নারীদের পুঁজিবাদের সেবায় উপকরণসর্বস্ব হয়ে পড়া, সেক্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠা ইত্যাদি সমস্যা আজ প্রকট রূপ ধারণ করেছে।
নারীদের সামাজিক অঙ্গনে উপস্থিতির আরেকটি পূর্বশর্ত হচ্ছে তা যেন তাদের মাতৃত্ব ও স্ত্রীত্বের ভূমিকা পালনে বাধা না হয়। পাশ্চাত্যে নারীমুক্তি আন্দোলনসমূহের সূত্র ধরে যে ভ্রান্তিটা জন্ম নেয় তাতে নারীর মা ও স্ত্রী হিসাবে ভূমিকা পালন করা দুষ্কর হয়ে পড়ে এবং সামগ্রিকভাবে পরিবার বন্দি হয়ে পড়ে। যা স্বাধীনতা বাস্তবায়নের পথে অন্তরায়। আরেকটি শর্ত হল সমাজে নারীর কার্যকর উপস্থিতি। পাশ্চাত্য মনে করে নারীর কার্যকর উপস্থিতি শুধু তাদের দৈহিক আবির্ভাবের মাধ্যমেই সম্ভব। এর ফলে পাশ্চাত্য দৃষ্টিকোণ থেকে নারী তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সত্ত্বেও কেবল বাহ্যিকভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, যে দৃষ্টিভঙ্গি আজকের পশ্চিমা নারীকে অসহায় ও মরিয়া করে তুলেছে। অথচ ইসলামে নারীর এই উপস্থিতি তার কার্যকারিতা সহকারে নির্দেশিত হয়েছে। যেমনটা আমরা দেখতে পাই উহুদের যুদ্ধে হযরত ফাতেমার উপস্থিতি একজন চিকিৎসক হিসাবে। আহযাবের যুদ্ধে পরিখা খনন করার সময় তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি, বাগে ফাদাক এর পরিচালনা, নারীদের জন্য ধর্মীয় জিজ্ঞাসাসমূহের উত্তর প্রদানের জন্য জলসার আয়োজন ইত্যাদি। তাছাড়া ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে মুনাফিকদের তাবত চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়ে ইসলামকে রক্ষার্থে তাঁর মসজিদে নববীতে হাজির হওয়া এবং অগ্নিঝরা বক্তৃতার মাধ্যমে মুনাফিকদের কূট্চক্রান্তকে ফাঁস করে দেওয়াÑ এ সকল ঘটনাই সমাজে নারীর ইতিবাচক কার্যকর উপস্থিতির একেকটি দৃষ্টান্ত, যা অমুসলিম নারীদের জন্যও প্রযোজ্য। নারীর ত্রিমাত্রিক ভূমিকার উপরোক্ত এ বিশ্লেষণ থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, আজ যেসকল বিষয় নারীর স্কন্ধে ন্যস্ত করা হয়েছে সেগুলোর অনেক কিছুই প্রাসঙ্গিকতা হারায়। কারণ, তা নারীর মর্যাদা ও ইতিবাচক কার্যকর উপস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তাকে এ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতেই হবে। ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর জীবনচরিতই হোক নারীর জীবনাদর্শ।

(নিউজলেটার, জানুয়ারি-জুন ২০২০)

হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এবং নারীর ত্রিমাত্রিক ভূমিকা

:

:

:

: