ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শিক্ষানীতি
[ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কল্যাণ নির্ধারণী পরিষদ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যে সাধারণ নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন তার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ ‘উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নকে একটি অপরিহার্য বিষয় হিসেবে অভিহিত করেন। ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক এ সাধারণ নীতিমালা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ নির্ধারণী পরিষদ কর্তৃক প্রণীত ও অনুমোদিত হয়- যাতে দেশের তিন বিভাগের অর্থাৎ বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও প্রশাসনের তিন প্রধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।]
‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক নীতিমালা
১. দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি হচ্ছে ইসলামি শিক্ষা দর্শন- যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায় ও ভালো কাজভিত্তিক জীবন গড়ে তোলা (অর্থাৎ ব্যক্তিকে ইসলামি আদর্শ ও অনুসরণীয় হিসেবে সমাজ জীবন গড়ে তোলা), মানুষের ভেতরে নিহিত সম্ভাবনাসমূহের উন্নয়ন সাধন, তাদের আদর্শিক গুণাবলি বৃদ্ধি করা, তাদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং শারীরিক ও মানসিক কল্যাণ সাধন, এ লক্ষ্যে নিরক্ষরতার বিলোপ সাধন এবং এমন মানুষ গড়ে তোলা যারা হবে সৎ, খোদাভীরু, নীতিবান, অধ্যয়নশীল, আশাবাদী, কল্যাণকামী, সুখী, সত্যান্বেষী, খোলা মনের অধিকারী, দায়িত্ববান, আইন মান্যকারী, সুবিচারকামী, যৌক্তিক, সৃজনশীল, সমাজ চেতনার অধিকারী, আত্মনির্ভরশীল, ত্যাগী, স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী এবং যুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অভ্যস্ত।
২. শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থানের মানোন্নয়নের মাধ্যমে নার্সারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে যার ফলে যথাযথ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র তৈরি হবে- যারা হবে সামাজিক পুঁজি উৎপাদনকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অনুমোদিত নীতিমালা ও পথনির্দেশ বাস্তবায়ন ও তার তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্বশীল। বস্তুত এটি একদিকে যেমন সরকারি দায়িত্ব অন্যদিকে এ কাজে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে।
৩. দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের অন্যতম অক্ষ হিসেবে শিক্ষার উপায়-উপকরণসমূহের উন্নয়ন ও বৃদ্ধিকরণ এবং সেই সাথে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা সহ মানব সম্পদের উন্নয়ন হবে :
৩.১. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মানের উন্নয়ন সাধন এবং বৈজ্ঞানিক, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার অনবরত উন্নয়ন সাধন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যাঁরা সক্রিয় রয়েছেন তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, শিক্ষা কেন্দ্রসমূহের ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কারিকুলামের হালনাগাদকরণ, সেই সাথে মটিভেটেড, কার্যকর, দ্বীনী, গঠনমূলক ও যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাবিদগণেরও শিক্ষাদানের লক্ষ্যে শিক্ষক ও শিক্ষাবিদগণের শিক্ষা পদ্ধতির হালনাগাদকরণ।
৩.২. শিক্ষাব্যবস্থার জন্য কাম্য রিক্রুটিং, প্রশিক্ষণ, সহায়তা, জনশক্তিকে কাজে লাগানোর পদ্ধতির পর্যালোচনা এবং যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নৈতিকতার অধিকারী সুযোগ্য ও সুদক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের রিক্রুট করার জন্য পথ খুলে দেয়া এবং সে লক্ষ্যে তাঁদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিকারী কোর্সের ব্যবস্থা করা।
৩.৩. শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সেই সাথে সেবামূলক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে তাঁদেরকে কাম্য পর্যায়ে শিক্ষাসেবা প্রদানের জন্য উৎসাহিতকরণ, সেই সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত সকলের জন্য আর্থিক সমস্যাবলির ও তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাবলির সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩.৪. শিক্ষকদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা ও জ্ঞানগত মানের উন্নয়ন এবং সেই সাথে চাকুরিরত অবস্থায় প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, তেমনি শিক্ষকদের জন্য বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের তথ্যাবলির হালনাগাদকরণ এবং তাঁদের জন্য উঁচু মানের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণÑ যাতে তাঁদের মধ্যে সমাজ ও বিশ্বের প্রয়োজন পূরণের উপযোগী কাম্য যোগ্যতা ও দক্ষতা গড়ে তোলা।
৩.৫. শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক ও প্রশিক্ষণের উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত মানের অধিকারী শিক্ষক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং সাধারণ, পেশাগত ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের শিক্ষার প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে একটি মূল্যায়ন ও পরিমাপন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৩.৬. শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রসমূহের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এ ক্ষেত্রে একটি শিক্ষক সহযোগিতা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৩.৭. শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মরত সকলের জন্য, বিশেষত শিক্ষকদের জন্য পেশাগত মানসহ বিশেষজ্ঞত্ব, দক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক কর্মতৎপরতার ভিত্তিতে বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করা :
৪.১. শিক্ষার বিষয়বস্তুকে হালনাগাদ করা এবং ইসলামি শিক্ষা দর্শনের ভিত্তিতে, দেশের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা ও হালনাগাদ করা এবং ইসলামি ইরানের স্বকীয় পরিচিতি ও সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা।
৪.২. জনশক্তির ভিতরে চিন্তা, অনুসন্ধান, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন ক্ষমতার উন্নয়ন, এ লক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতি কাজে লাগানো এবং বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনা ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যৌক্তিক ও মজবুত চিন্তাক্ষমতা গড়ে তোলা।
৪.৩. শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে আয়াতুল্লাহ উযমা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) কর্তৃক প্রস্তাবিত ধর্মীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা তথা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ ও এর মৌল ভিত্তিসমূহ, বিশেষত বেলায়াতে ফক্বীহ (মুজতাহিদগণের অভিভাবকত্ব) এবং দেশের সংবিধানের স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় বিধানসমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
৪.৪. ইসলামি সংস্কৃতি ও আদর্শের এবং কোরআনিক শিক্ষার (ক্বিরাআত, তেলাওয়াত ও তাৎপর্য শিক্ষা) বিকাশ সাধন এবং কোরআন মজীদ, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততাকে কাজে লাগানো আর নামায আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
৪.৫. শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত সক্ষমতা ও সৃজনশীলতার পরিপূরণের লক্ষ্যে তাদের মধ্যকার প্রতিভার স্বীকৃতি দান ও মেধার ঘাটতি চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে মূলগতভাবে শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষাদানের পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো।
৪.৬. সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কারিকুলাম ও পাঠ-পরিকল্পনা অনুসরণ।
৪.৭. শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত দক্ষতা, জীবন যাপন পদ্ধতি ও সমস্যা সামাধানের যোগ্যতাকে কাজে লাগানো এবং তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে তারা যা শিখেছে তাদের মাধ্যমে তা বাস্তবে কাজে লাগানো।
৪.৮. কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষাকে শক্তিশালীকরণ ও কাজে লাগোনো।
৫. ইসলামি শিক্ষা দর্শন অনুযায়ী, বিশেষ করে নিম্নোক্ত লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান :
৫.১. শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নৈতিক ও আত্মিক মুক্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের মধ্যে ইসলামি জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টিকে শক্তিশালীকরণ এবং সেই সাথে পরিবার পর্যায়ে আধ্যাত্মিকতার উন্নয়নের চেষ্টা চালানো।
৫.২. সামাজিক ক্ষতি ও অচলাবস্থা প্রতিহত করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক কল্যাণ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা।
৫.৩. শিক্ষার্থীদের মধ্যে যৌক্তিক শিক্ষার এবং ইসলামি রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শের উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে, সেই সাথে জাতীয় সংহতি ও ঐক্যকে সুসংহত করা, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে তোলা এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আর সেই সাথে স্বাধীনতা, মুক্তি, ধর্মীয় গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের প্রতি সম্মানবোধ গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা চালানো।
৫.৪. শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক দিক থেকে সুখ-শান্তি ও প্রফুল্ল ভাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের মধ্যকার সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক ও শিল্পকলা সংক্রান্ত মেধা-প্রতিভার উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটানো।
৫.৫. স্কুল পর্যায়ে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৫.৬. শিক্ষা সংক্রান্ত লক্ষ্য ও পরিকল্পনাসমূহের পরিপূরণে সক্ষম সুদক্ষ ও মানসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তোলা ও সরবরাহ করা।
৬. নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ সহকারে আর্থিক, দাফতরিক ও ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে :
৬.১. সাংবিধানিক আইনের সাথে মিল রেখে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থার সাধারণ নীতিমালার সাথে খাপ খাইয়ে, বিশেষ করে শিক্ষা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষকগণ, পরিবারসমূহ, দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্রসমূহ, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, সমুন্নত শিক্ষা-গবেষণা কেন্দ্রসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠন, সংস্থা ও নির্বাহী প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রতিটি স্তরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে পুনর্গঠন করা এবং এ লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে সক্ষমতা, সংস্কৃতি ও ভিত্তি সমূহকে সক্রিয় ও গতিশীল করে তোলা।
৬.২. এ সাধারণ নীতিমালায় যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করার লক্ষ্যে সরকারের বার্ষিক বাজেট অনুমোদনের সময় শিক্ষা খাতের প্রয়োজন পূরণের জন্য যথাযথ বরাদ্দ প্রদানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
৬.৩. শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষাব্যবস্থাকে কাম্য পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ নিয়োজিত করা এবং তা যথাযথভাবে কাজে লাগাবার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
৭. নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপসহ শিক্ষার লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাঙ্গনসমূহের জায়গার পরিমাণ, অবকাঠামো ও শিক্ষার উপায়-উপকরণসমূহ বাঞ্ছিত পর্যায়ে উপনীত করতে হবে :
৭.১. ইসলামি-ইরানি স্থাপত্য মূলনীতির অনুসরণে স্কুলসমূহকে গড়ে তোলা, পরিচালনা ও বাঞ্ছিত পর্যায়ে উন্নীত করা, সেগুলোর সৌন্দর্য বিধান করা এবং সুসংহত ও নিরাপত্তার বিধান প্রণয়ন করা, শিক্ষাগত প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে স্কুলসমূহের স্থান নির্বাচন করা ও তার জায়গাকে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষাগত প্রয়োজনের ভিত্তিতে বণ্টন করা এবং এরই ভিত্তিতে শিক্ষা কমপ্লেক্সসমূহের ভবন ও ব্লকসমূহ নির্মাণ করা। তেমনি স্কুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের সহায়তা আকর্ষণ করা এবং সংশ্লিষ্ট আবাসন ব্যবস্থাপনা করা।
৭.২. প্রয়োজনীয় শিক্ষা ইউনিটসমূহ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ও প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতার প্রতি দৃষ্টি রেখে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা।
৭.৩. নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মডেল প্রদান করা এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ম-নীতি ও বিধিমালা কার্যকর করা।
৭.৪. স্কুলসমূহকে তথ্যপ্রযুক্তি উপায়-উপকরণ ও যোগাযোগ উপকরণসমূহ সরবরাহ করা এবং স্কুলসমূহে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির কাম্য ব্যবহারের ভিত্তি তৈরি করা।
৮. অত্র সাধারণ নীতিমালার প্রথম ধারায় বর্ণিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্কুলসমূহের ভূমিকা ও নির্বাচন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা এবং স্কুল, পরিবার, সমাজ, প্রচারমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে গঠনমূলক ও প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৯. দেশের সীমান্তবর্তী শহরসমূহে শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সক্ষমতা গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা।
১০. বৈপ্লবিক ও মূল্যবোধভিত্তিক আবেদন অনুযায়ী এবং স্কুলসমূহের পরিবেশকে রাজনৈতিক সংঘাতের দ্বারা দূষিত হওয়া থেকে মুক্ত রাখার মাধ্যমে সেগুলোর পরিচালনা ব্যবস্থাকে ভারসাম্যপূর্ণ করে গড়ে তোলা ও স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখা।
১১. সাধারণ শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থা ও সংগঠনের মধ্যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নীতিমালা, পরিকল্পনা ও শিক্ষার বিষয়বস্তুসমূহের মধ্যে সমন্বয় ও সম্পর্ক বজায় রাখা।
১২. ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের ২০ বছর মেয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনায় যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে উপনীত হওয়ার জন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের মানদণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রেখে শিক্ষার স্তরকে গুণগত ও পরিমাণগত দিক থেকে উন্নততর করা।
১৩. দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিচালনা, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শিক্ষার মৌলিক সংস্কার সংক্রান্ত দলিল
(নিম্নোক্ত দলিলটি ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে পবিত্র মাশ্হাদ্ নগরীতে অনুমোদিত হয়।)
‘আমি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার ও সকল কর্তৃপক্ষের কাছে এ মর্মে সুপারিশ করছি যে, তাঁরা যেন সম্ভাব্য সকল উপায়-উপকরণ বিনিয়োগ করে কিশোর-তরুণদের জন্য নৈতিক, আদর্শিক, বৈজ্ঞানিক ও শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট উন্নয়নের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেন এবং তাদের সমুন্নত মূল্যবোধ ও উদ্ভাবনী পর্যায়ে উপনীত হওয়া পর্যন্ত এবং তাদের মধ্যে স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার চেতনা সংরক্ষণের লক্ষ্যে তাদের সাথে থাকেন।’
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.), ছাহীফায়ে নূর, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৯৬।
বিভিন্ন উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর বিবৃতি :
আমাদের জন্য শিক্ষার বিবর্তন ও পুনঃপর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
(২ মে, ২০০৬)
আমাদের দেশে বিদ্যমান বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের চিন্তাধারা, আমাদের ধ্যানধারণা ও আমাদের দর্শনের ওপর ভিত্তিশীল নয়। আমরা এখন যে দর্শনের বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি আমাদের বর্তমান শিক্ষার ভিত্তি তার ওপরে প্রতিষ্ঠিত নয়।
(২৫ জুলাই, ২০০৭)
‘সংস্কার’ একটি শব্দ মাত্র, কিন্তু তা সত্ত্বেও এ সাদামাটা শব্দটিতে নিহিত তাৎপর্যের বাস্তবায়ন করতে হলে যে পরিশ্রম করতে হবে তার ব্যাপকতাকে একটি মহাসাগরের সাথে তুলনা করা চলে।
(২৫ জুলাই, ২০০৭)
শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদগণের জন্য শিক্ষার পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে অনেক সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করা অপরিহার্য। ইসলামি শিক্ষার দর্শন সুস্পষ্ট হতে হবে এবং আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিগন্ত সুস্পষ্টভাবে এ দর্শনের ওপর ভিত্তিশীল হতে হবে। আমরা কিসের সন্ধান করছি এবং আমরা কোন দিকে যাচ্ছি সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার পরিকল্পনাকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পথনির্দেশের ওপর ভিত্তিশীল হতে হবে। আমাদের জন্য এরই প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষাকে আমাদের অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্মের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। এটাই আমাদের কথার ভিত্তি।
(২ মে, ২০০৬)
দলিল অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষসমূহ :
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সর্বোচ্চ পরিষদ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়
সর্বোচ্চ শিক্ষা পরিষদ
চতুর্থ অধ্যায় : দেশের শিক্ষার জন্য পরিকল্পিত ভবিষ্যৎ চিত্র
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শিক্ষা সম্পর্কে ২০২৫ সালে যে ভবিষ্যৎ চিত্র নির্ধারণ করা হয়েছে, ইন্ শাআল্লাহ্, তা হবে ইসলামি আদর্শ এবং ইসলামি ও ইরানি সংস্কৃতি ও সভ্যতার ওপর ভিত্তিশীল একটি শিক্ষাব্যবস্থা এবং তা হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অনুসারী ন্যায়নীতিভিত্তিক একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায় গড়ে তোলার ক্ষেত্র তৈরি করবে- যাতে উল্লেখযোগ্য ধরনের উন্নয়ন সামর্থ্য তৈরি হবে এবং তা আঞ্চলিক পর্যায়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মর্যাদার জন্য উপযোগী হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হবে এমন যা বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অনুপ্রেরণা তৈরি করবে এবং সেসব শিক্ষাব্যবস্থার সাথে গঠনমূলকভাবে ও কার্যকরভাবে আন্তঃক্রিয়া করবে। ফলত তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা-প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে, তাদের মধ্যে ইসলামি বিপ্লবী পরিচিতি গড়ে তুলবে এবং এতে তাদের ব্যক্তিগত গুণ-বৈশিষ্ট্যসমূহকে বিবেচনায় রাখা হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকর, শিক্ষণীয়, সুবিচারকামী, অংশগ্রহণমূলক এবং এমন শিক্ষকমণ্ডলী ও পরিচালকগণ দ্বারা সমৃদ্ধ হতে হবে যাঁরা হবেন আল্লাহর প্রতি ঈমানদার, ইসলামি নৈতিকতার অধিকারী, সৎকর্মশীল, আশাবাদী, সংস্কারকামী, বিপ্লবী, ভবিষ্যৎ নির্মাতা, জ্ঞানী, নিষ্ঠার অধিকারী, সততার অধিকারী ও অন্যান্য পছন্দনীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
২০২৫ সালের ইরানি স্কুল : ভবিষ্যৎ দৃশ্যকল্প
এ ভবিষ্যৎ দৃশ্যকল্প অনুযায়ী ইরানি স্কুলসমূহকে ঐ সময় হায়াতে ত্বাইয়্যেবাহ্ (উত্তম ও পবিত্র জীবন)-এর বাস্তবায়ন করে প্রদর্শন করতে হবে- যা শিক্ষা সেবার ও এতদসংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এটি হবে শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি ফোরাম যেখানে তাদের পক্ষে তাদের মূল্যায়নের পরিস্থিতি অনুধাবন ও উন্নয়ন সম্ভব হবে, তেমনি তাদের পক্ষে ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে স্বীয় সমুন্নত পরিচিতি লাভ করা সম্ভব হবে। এর ফলে দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার রূপ হবে এই যে, তা বিশ্বজগতের মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে ও নিজের সাথে সম্পর্কের ফলশ্রুতিতে একটি সমৃদ্ধ ইসলামি বিপ্লবী সংস্কৃতি প্রদর্শন করবে, ফলত তাদের মধ্যে অন্যান্য বিশেষ নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা, আত্মবিশ্বাস, সততা, সুদক্ষতা ও ব্যবসায়িক যোগ্যতা গড়ে উঠবে। তখন তারা অপব্যয়, অপচয় ও বিশ্বের প্রতি নির্ভরশীলতা এড়িয়ে চলতে সক্ষম হবে; তাদের মধ্যে গড়ে উঠবে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্মানবোধ, আস্থা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, ত্যাগী মনোবৃত্তি, আইন-কানুন ও বিধিবিধান মেনে চলার মানসিকতা, সমালোচনা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা; তারা বৈশ্বিক দাম্ভিক বলদর্পী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে, মযলুম, নিপীড়ত ও বঞ্চিতদেরকে এবং ইসলামি বিপ্লবের মূল্যবোধসমূহকে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে। বস্তুত এর ফলে শিক্ষাঙ্গন হবে জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান এবং সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হবে এর মাধ্যমে দেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করা। সেই সাথে স্কুল হবে-
০ স্থানীয় জনগণের জন্য শিক্ষা উন্নয়নের ও জনগণের মানোন্নয়নের কেন্দ্র।
০ এটি হবে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তকারী ও পরিকল্পনা প্রণয়নের যোগ্যতার অধিকারী।
০ এটি ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক প্রক্রিয়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সচেতন, প্রাজ্ঞ, দায়িত্বশীল ও নির্বাচনী ভূমিকা পালন করবে।
০ এটি ব্যক্তিদের মধ্যকার পার্থক্যসমূহকে স্বাগত জানাবার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতার অধিকারী হবে, বিভিন্ন ধরনের মেধা-প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে তাদেরকে পথনির্দেশ দিতে সক্ষম হবে, সর্বোপরি ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার আওতায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনসমূহ পূরণ ও তাদের আগ্রহের নিবৃত্তি করতে সক্ষম হবে।
০ এটি শিক্ষা ও পূর্ণতা অর্জনের স্থান এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে সমুন্নত অবস্থার সন্ধান করবে এবং শিক্ষার জন্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি শিক্ষার প্রক্রিয়াকে পথনির্দেশ করবে এবং শিক্ষার জন্য নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করবে।
০ এটি হবে আত্ম-মূল্যায়নকারী, দায়িত্বশীল এবং এর বাইরে অবস্থিত পর্যবেক্ষণকারী ও মূল্যায়নকারীর নিকট জবাবদিহি করবে।
০ এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রয়োজনসমূহ পূরণ করবে এবং একটি নৈতিক, বৈজ্ঞানিক, নিরাপদ, সুস্থ, আনন্দদায়ক ও ত্যাগী পরিবেশ তৈরি করে দেবে এবং এতে সামষ্টিক পরিচিতি প্রতিফলিত হবে।
০ এটি নৈতিক ও পেশাগত গুণাবলির অধিকারী শিক্ষকদের সেবার অধিকারী হবে এবং ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তিশীল একটি সমন্বিত তাওহীদবাদী পরিচিতির অধিকারী হবে।
০ এটি হবে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনাভিত্তিক আবেদনের অধিকারীÑ যা সমালোচনাকে স্বাগত জানাবে।
০ এটি হবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মৌল নীতিমালার ওপর ভিত্তিশীল এবং এটি কার্যকর অংশীদারিত্বের সহায়তা গ্রহণ করবে এবং এ থেকে সুবিধা ভোগকারীদের, বিশেষ করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিবারসমূহের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল হবে।
০ এটি মানসম্মত শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি সহায়তার অধিকারী হবে এবং এটি ব্যাপকভিত্তিক উপায়-উপকরণ ও শিক্ষা মাধ্যম (জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক)-কে দৃষ্টিতে রাখবে।
০ এটি দেশের সাধারণ প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সক্ষমতার অধিকারী হবে।
০ এটি মসজিদ ও অন্যান্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনকেন্দ্রসমূহের সাথে, যেমন : গণপাঠাগারসমূহ ও জনসাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহের সাথে কার্যকর আন্তঃক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতার অধিকারী হবে এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, পণ্ডিত, মনীষী ও বিশেষজ্ঞগণের সাথে যথাযথভাবে সম্পর্ক রাখতে সক্ষম হবে।
০ এটি সমাজের সমস্যাবলির সাথে কার্যকর সম্পর্ক রাখবে এবং জনজীবনে কার্যকর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় বিষয়াদিতে ভূমিকা পালন করবে।
পঞ্চম অধ্যায় : লক্ষ্যসমূহ
১. এমন তাওহীদবাদী ব্যক্তিদের গড়ে তোলা যাঁরা আল্লাহ্র ওপর ঈমান পোষণ করবেন এবং পরকালের ওপর ঈমান পোষণ করবেন, যাঁরা আল্লাহ্র, নিজেদের, অন্যদের ও প্রকৃতির প্রতি স্বীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান হবেন; যাঁরা হবেন সুবিচারকামী, প্রকৃত অবস্থার সন্ধানী ও শান্তিকামী; যারা যুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন ও আল্লাহ্র পথে লড়াই করবেন; যারা হবেন সাহসী, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক, বন্ধুবৎসল, ত্যাগ স্বীকারকারী, সামাজিক ক্ষেত্রে বহুত্ববাদী, আন্তর্জাতিকতাবাদী, ধর্মীয় ফিক্বাহ্র সনিষ্ঠ অনুসরণকারী ও হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থায় ঈমান পোষণকারী; যাঁরা হবেন বিশ্বের বুকে সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনবরত সংগ্রামকারী; এমন ব্যক্তিদেরকে লালন করা হবে যাঁরা হবেন আশাবাদী, দৃঢ়প্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী, বিশ্বস্ত, বুদ্ধিমান, শক্তিশালী, নেককার, ভদ্র, মধ্যমপন্থী, উদার, ধর্মপ্রাণ, সৃজনশীল, সফল বিনিয়োগকারী, মিতব্যয়ী, সুদক্ষ, আনন্দচিত্ত, সুস্থ, আইন মান্যকারী, সুশৃঙ্খল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ইসলামি রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যশীল একটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন শুরু করার জন্য প্রস্তুত।
২. দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং সাধারণ জনগণের সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ও তাকে চিত্তাকর্ষকভাবে উপস্থাপন, বৈজ্ঞানিক শক্তি ও রেফারেন্সের ভিত্তি তৈরি করে দেয়া এবং বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপযোগী করে ইসলামি-ইরানি সভ্যতার বিবর্তনের লক্ষ্যে সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার ও পরিবারের ভূমিকার উন্নয়ন।
৩. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপসহ এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে গভীর করাসহ একটি সুবিচারভিত্তিক মাহ্দাভী (ইমাম মাহ্দীর আবির্ভাবে ঈমান পোষণকারী) জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা।
৪. জ্ঞান, নৈতিক মূল্যবোধসমূহের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শাসনব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য, ধর্মীয় ফিক্বাহ্ বা আইন-বিধান ও ধর্মীয় গণতন্ত্রের প্রতি বাস্তবে ও তাত্ত্বিকভাবে প্রতিশ্রুতিশীলতা, জাতীয় ঐক্যকে সুসংহতকরণ, জ্ঞানগত মনোবলকে শক্তিশালীকরণ, সামাজিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা ও দায়িত্ব-কর্তব্যসমূহ পালন করা, ঐশী জীবনের প্রতি ঈমান গড়ে তোলা এবং পরিবেশের সংরক্ষণ।
৫. সকলের জন্য সর্বজনীন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ-এর সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ করা।
৬. ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে একটি কার্যকর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
৭. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থাকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এতে জনগণের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে পরিবারের ভূমিকা ও তার কার্যকরিতা বৃদ্ধিকরণ।
৮. কারিকুলাম উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাসমূহের এবং অবকাঠামোসমূহের উন্নয়ন ও সংস্কার।
৯. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকরিতা ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন।
১০. মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ও মুসলিম জাহানে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত অবস্থান অর্জন এবং বৈশ্বিক স্তরে দেশের শিক্ষাগত অবস্থানকে ক্রমবৃদ্ধিমান করে রাখা।
ষষ্ঠ অধ্যায় : প্রধান স্ট্রাটেজিসমূহ
১. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামি শিক্ষার তাত্ত্বিক ভিত্তিসমূহ ও দর্শনের ওপর ভিত্তিশীল করে গড়ে তোলা (তথা সকল লক্ষ্য অর্জন)।
২. সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার সকল দিক থেকে (১, ২, ৪, ৫, ৬ ও ৮ নং লক্ষ্য) সমুন্নতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আবেদন সহকারে শিক্ষা সম্পর্কে একটি পবিত্র দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।
৩. সাব-সিস্টেম-এর সংস্কার কর্মসূচিসমূহের পরিকল্পনা প্রণয়ন, গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সূচনা করা (এগুলো হচ্ছে : জাতীয় কারিকুলাম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা, আর্থিক বরাদ্দ, শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানসমূহ, প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ ও যন্ত্রপাতি, গবেষণা ও মূল্যায়নের ব্যবস্থাকরণ), এছাড়া ইসলামি শিক্ষার তাত্ত্বিক নীতিমালা ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত স্বল্প মেয়াদের ও মধ্যম মেয়াদের কর্মসূচি প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যসমূহ (১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নং লক্ষ্য) অবহিতকরণ।
৪. শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে সমতা গড়ে তোলা ও তাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং প্রত্যন্ত এলাকাসমূহে শিক্ষাকে শক্তিশালী করা এবং এ ক্ষেত্রে ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার মূলনীতিসমূহের (২, ৩, ৪ ও ৭ নং লক্ষ্য) সাথে সঙ্গতিশীল করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শক্তিশালী করা ও শিক্ষা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা।
৫. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় (২, ৩, ৫ ও ৭ নং লক্ষ্য) জনগণের, পরিবারসমূহের, অর্থনৈতিক সংগঠনসমূহের, শহুরে ও গ্রাম্য ব্যবস্থাপনাসমূহের এবং এ থেকে উপকৃত প্রতিষ্ঠানাদির কার্যকর অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টির মাধ্যমে একে শক্তিশালী করা ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।
৬. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার (১, ২, ৪ ও ৮ নং লক্ষ্য) ক্ষেত্রে জাতীয় বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার গবেষণা ও মূল্যায়ন, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন, তাত্ত্বিকীকরণ ও ডকুমেন্টেশন।
৭. ইসলামি রীতিনীতিভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তিশীল (১, ২, ৩, ৫ ও ৭ নং লক্ষ্য) দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আধুনিক প্রযুক্তিসমূহের ব্যবহার।
৮ দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থা-সংগঠনের, বিশেষ করে পরিবারসমূহ ও প্রচারমাধ্যমসমূহের মধ্যে কার্যকর ও সক্রিয় আন্তঃক্রিয়া গড়ে তোলা, বিশেষত প্রাতিষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যকার সীমান্তকে সঙ্কুচিত করে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ (১, ২, ৪ ও ৭ নং লক্ষ্য)।
৯. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি সুদক্ষ, কার্যকর ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদ ও তার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি সুদক্ষ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া (২, ৪, ৬ ও ৭ নং লক্ষ্য)।
১০. যেহেতু দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক পুঁজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন সেহেতু শিক্ষাব্যবস্থার মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত গভর্নিং বডি গঠনের মাধ্যমে গৃহীত নীতিমালা, পথনির্দেশ ও পরবর্তী পর্যবেক্ষণের বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তাতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে (২, ৪ ও ৫ নং লক্ষ্য)।
১১. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি ও নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটানোর এবং পারিবারিক পর্যায়ে আধ্যাত্মিক উন্নয়নে তাঁদের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তাঁদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও বিপ্লবী জ্ঞান বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে (১, ২, ৪ ও ৫ নং লক্ষ্য)।
১২. দেশের সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও প্রক্রিয়া গড়ে তোলা ও পুনর্গঠন (১, ২, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নং লক্ষ্য)।
১৩. শিক্ষকগণের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও শিক্ষা বিভাগের এমন অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী যাঁরা শিক্ষাদান করেন না তাঁদের আদর্শিক, জ্ঞানগত ও পেশাগত গুণাবলি ও যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য অব্যাহত উন্নয়ন কর্মসূচি।
১৪. দেশের সংবিধানে, দেশের উন্নয়ন কর্মসূচির ভবিষ্যৎ চিত্রকল্পে, সর্বোচ্চ নেতার সাধারণ নীতিমালায় ও দেশের ৫ বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা হয়েছে তার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষাগত সামর্থ্য ও সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে যাতে এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় ও গঠনমূলকভাবে উপস্থিতি সম্ভব হয় (২, ৭ ও ৮ নং লক্ষ্য)।
১৫. হায়াতে ত্বাইয়্যেবাহ্ (উত্তম ও পবিত্র জীবন)-এ উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম কার্যকর উপাদান হিসেবে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী ও কাম্যতার বৈশিষ্ট্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ সহকারে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অনুসন্ধিৎসার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে (১, ২, ৭ ও ৮ নং লক্ষ্য)।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শিক্ষানীতি | |