এজেন্সি
জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্টের চিঠি

জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্টের চিঠি

জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্টের চিঠি

আল্লাহর নামে

মহামান্য আন্তোনিও গুতেরেস,

জাতিসংঘ মহাসচিব

শুভেচ্ছা।

এটি জাতিসংঘের কাছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মহিলা ও পারিবারবিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্সির একটি জরুরি বিবৃতি ও বার্তা যার লক্ষ্য হলো এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া যে, বহু বছর ধরে অধিকৃত ফিলিস্তিনে নারী ও শিশুদের উপর যে বড় মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলেছে তা এখন চরমে পৌঁছে গেছে এবং সেখানে একটি ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

যখন গোটা বিশ্ব পরিবারের উষ্ণ আলিঙ্গনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে তেমনি এক সময়ে এই দিনগুলোতে ফিলিস্তিনে একটি অসম যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা গাজার অসংখ্য পরিবারকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

অনেক নারী তার পরিবারের সকল সদস্যকে হারিয়েছে এবং অনেক শিশু তাদের পিতামাতার প্রাণহীন দেহকে প্রত্যক্ষ করেছে! এসব ঘটনা কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেককে নাড়া দেয় না?

জাতিসংঘের কি এমন হয়েছে যে, এক সময়ে নারীর অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে ছুটে যায় এবং নারীদের সম্পর্কে একটি অপ্রমাণিত প্রতিবেদনের কারণে উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেয়, আবার অন্য সময়ে নারী ও শিশুদের ছিন্নভিন্ন লাশের বাস্তব চিত্রের প্রতি চোখ বন্ধ করে থাকে?

মহামান্য মি. গুতেরেস,

নিপীড়িত গাজা শহরে নিহত ও আহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বর্তমানে হাজার হাজার গর্ভবতী মহিলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই শহরের মহিলাদের মধ্যে এমন শত শত মহিলা রয়েছেন যারা সম্প্রতি বাচ্চা প্রসব করেছেন; তাই মা ও শিশু উভয়ের জন্য নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন, কিন্তু এক্ষেত্রে যৎসামান্য সুযোগ-সুবিধাই অবশিষ্ট রয়েছে।

তাছাড়া দুর্ভাগ্যবশত, পানি সরবরাহ ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতির খবর পাওয়া যাচ্ছে, অথচ এসব ঘাটতির তাৎক্ষণিক শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। বর্তমানে, এমনকি গাজার হাসপাতালগুলোও বোমা হামলা থেকে মুক্ত নয় এবং হাসপাতালের উপর বর্বর হামলার কারণে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

প্রিয় মি. গুতেরেস

গাজার নির্যাতিত জনগণের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বাস্তব ও রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় কি আসেনি? আন্তর্জাতিক বৈধতাহীন একটি দখলদার জান্তার হাতে অরক্ষিত নারী ও তাদের শিশুদের হত্যা এবং পরিবারের উষ্ণ আলিঙ্গনকে বাধাগ্রস্ত করাকে বর্ণবাদ ও গণহত্যার দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? আমরা এমন লোকদের কথা বলছি যাদের কাছে একমাত্র গাজা উপত্যকা অবশিষ্ট রয়েছে– যেটি খাঁচাসদৃশ এমন একটি জায়গা যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দখলদার শাসকদের দ্বারা গুরুতর বিধিনিষেধ ও নির্দয় গণহত্যার শিকার হয়েছে। আর এসময়ে যখন তারা এই খাঁচাটি ভেঙে ফেলতে এবং এই দখলদারদের নিপীড়নের প্রতিবাদ জানাতে চাচ্ছে তখন তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে।

মহামান্য মি. গুতেরেস

ইসরায়েলের দখলদার শাসক এখনও তার দুষ্ট চক্রান্ত বন্ধ করেনি এবং এখনও তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এই স্বল্পসংখ্যক লোককেও এই সীমিত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে। যেসব নারী ও শিশুকে ন্যূনতম মানবীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে রক্ষার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব হিসাবে আপনার কি পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আসেনি?

প্রিয় মি. গুতেরেস

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপনার ভিন্ন আচরণের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্যাতিত ও সন্তানহারা মায়েদের হাহাকার, যেসব নিষ্পাপ শিশু তাদের মায়েদেরকে হারিয়েছে এবং গাজার শিশুদের আতঙ্কভরা আর্তনাদ কি এখনো জাতিসংঘের সদস্যদের কানে পৌঁছায়নি?

প্রিয় মি. গুতেরেস

যদি এই সংস্থার পক্ষ থেকে গাজার জনগণের দুর্ভোগ ও দুর্দশার যন্ত্রণা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানো না হয় তাহলে কিভাবে জাতিসংঘ সকল জাতির বলে বিবেচিত হতে পারে? যেমনটি ইরানের মহান কবি সাদি বলেছেন: আদমের সন্তানরা একই দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, তারা একটি নির্যাস থেকে সৃষ্ট, সময়ের বিপর্যয় যখন একটি অঙ্গকে পীড়িত করে তখন অন্য অঙ্গগুলো শান্তিতে থাকতে পারে না।

শুভেচ্ছান্তে,

এনসিয়ে খাজালি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মহিলা ও পারিবারবিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্ট

জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্টের চিঠি

:

:

:

: