ইমাম খোমেইনি (রহ.) ও ইসলামি বিপ্লব
মো. আশিফুর রহমান
ইমাম খোমেইনি (রহ.) ছিলেন বর্তমান বিশ্বের ইসলামি পুনর্জাগরণের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি এমন এক সফল বিপ্লবের নায়ক যে বিপ্লবের ঢেউ লাগে সারা বিশ্বে। এ বিপ্লব সারা বিশ্বের মুমিনদের কাছে সত্যিকার ইসলামকে তুলে ধরে। দলে দলে মানুষ সত্য পথের সন্ধান পেয়ে এর ছায়ায় আশ্রয় নেয়।
ইমাম খোমেইনি (রহ.) ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ২২৫ কি.মি. দক্ষিণে খোমেইন শহরে ১৯০১ সালের ২৩ অক্টোবর (১৩২০ হিজরির ২০ জমাদিউস সানি) এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুস্তাফা মুসাভী একজন বিশিষ্ট মুজতাহিদ ছিলেন। ভূ-স্বামীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার কারণে তাঁকে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ইমাম খোমেইনির প্রপিতামহ সাইয়্যেদ আলী দীন শাহ কাশ্মীরের একজন বিশিষ্ট আলেম ছিলেন। তাঁর মাতামহ আয়াতুল্লাহ্ মির্জা আহমদ ছিলেন একজন বিখ্যাত মুজতাহিদ।
ইমামের শিশুকালেই তাঁর পিতা শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান। তিনি তাঁর ফুফু ও বড় ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকেন। তাঁর বড় ভাই আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুর্তাজাও একজন প্রাজ্ঞ ধর্মতত্ত্ববিদ ছিলেন।
ইমাম খোমেইনি ছোটবেলা থেকেই প্রখর বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছিলেন। মাত্র সাত বছর বয়সে সম্পূর্ণ কোরআন পড়া শেষ করে আরবি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। এরপর বড় ভাইয়ের কাছে তিনি যুক্তিবিদ্যা,আরবি ব্যাকরণ শিক্ষালাভ করেন।
১৯ বছর বয়সে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য আরাকে গমন করেন। সেখানে আয়াতুল্লাহ্ গোলপায়গানির কাছে শিক্ষা লাভ করেন। এক বছর পর আয়াতুল্লাহ্ হায়েরির সাথে কোমে চলে আসেন। সেখানে ১৫ বছর তিনি আয়াতুল্লাহ্ হায়েরির দারসে খারেযে যোগ দেন। তখন তিনি নিজেও বিভিন্ন বিষয়, যেমন আইনশাস্ত্র, ইরফান, দর্শন ইত্যাদি শিক্ষাদান করতেন।
আয়াতুল্লাহ্ হায়েরির ইন্তেকালের পর কোমে আসেন আয়াতুল্লাহ্ বরুজেরদি। ইমাম তাঁর ক্লাসে যোগ দিতেন। তিনি আয়াতুল্লাহ্ আলী আকবর ইয়াযদির কাছে জ্যোতির্বিদ্যা এবং মরহুম শায়খ মুহাম্মদ আলি শাহবাদির কাছে দর্শন ও রহস্যজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেন।
এভাবে অল্প সময়েই মধ্যেই তিনি ধর্মতত্ত্ব, ইসলামি আইন, হাদীস ও তাফসীর শাস্ত্র, রহস্যজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে একজন আসামান্য পণ্ডিত হয়ে ওঠেন। এর পাশাপাশি বিশ্বে প্রচলিত অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানেও তিনি বেশ পারদর্শিতা অর্জন করেন। তিনি এসবের পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেন। রিয়াজত, মুশাহাদা,মোরাকাবার মাধ্যমে তিনি তাযকীয়ায়ে নফসের উঁচু স্তরে পৌঁছে যান। তিনি ২৭ বছর বয়সে দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।
ইরানের তৎকালীন অবস্থার প্রতি দৃষ্টি
রাস্তার মোড়ে মোড়ে শুঁড়িখানা ও নাইটক্লাবের আড্ডা প্যারিস-নিউইয়র্ককেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। নারীদেরকে আধুনিকতার নামে ভোগ্যপণ্যে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এ সবের সমর্থনে একটা তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি গড়ে তোলা হয়েছিল। সমাজের সর্বত্র ইসলামি মূল্যবোধের পরিবর্তে পাশ্চাত্য মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছিল।
অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আমেরিকা-বৃটেনের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই পরিচালিত হতো। শাহের গুপ্তপুলিশ সাভাকের প্রশিক্ষণ হতো ইসরাইলে। তারা শত শত মানুষকে হত্যা করে অথবা চিরতরে পঙ্গু করে দেয়। জনগণের টাকায় অঢেল অস্ত্র আমদানি করা হয়। ইরানকে মধ্য এশিয়ায় আমেরিকার পদলেহী একটি সামরিক শক্তি হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। তেল সম্পদের বিরাট লভ্যাংশ বৃটেন ও মার্কিন তেল কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
রাজবংশ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন
১৮৯২ সালে তামাকবিরোধী আন্দোলন দিয়ে সর্বপ্রথম রাজবংশের বিরুদ্ধে জনগণ সোচ্চার হয়। এতে নেতৃত্ব দেন আলেমরা। মীর্যা হাসান সিরাজি তামাক বর্জনের ফতোয়া দেন। ১৯০৩ সালে কোরআনভিত্তিক সংবিধান রচনার দাবিতে শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫২-৫৩ সালে তেলসম্পদ জাতীয়করণের আন্দোলন হয়। ১৯৫৩ সালে পার্লামেন্টে জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ড. মোসাদ্দেক তেলসম্পদ জাতীয়করণের বিল উত্থাপন করেন। পার্লামেন্টে বিল পাস হয়। মোহাম্মদ রেজা ইরান থেকে পলায়ন করে। বৃটিশরা এ অবস্থায় ইরানের উপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্ভব হবে না জেনে ইরানের ভার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দেয়। সিআইএ দ্বারা পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানে মোসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটে এবং মোহাম্মদ রেজা আবার ইরানে ফিরে এসে ক্ষমতা গ্রহণ করে।
এ সময়কালের মধ্যে মীর্যা হাসান সিরাজি, সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বিহবিহানি, সাইয়্যেদ তাবতাবায়ি, শেখ ফাজলুল্লাহ্ নূরি, আয়াতুল্লাহ্ কাশানি,আয়াতুল্লাহ্ বরুজেরদি প্রমুখ খ্যাতনামা আলেম এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
ইমামের বিপ্লব
১৯৪১ সালে কাশফ আল আসরার (রহস্য উন্মোচন) নামক গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে ইমাম খোমেইনি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের যাত্রা শুরু করেন। এতে তিনি বলেন, ‘একমাত্র ধর্মই মানুষকে বিশ্বাসঘাতকতা ও অপরাধের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত যারা ইরানের রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, তারা মেকী ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা তাদের আদৌ কোন ধর্মবিশ্বাস নেই।’
‘স্বৈরতান্ত্রিক শাসক দস্যু রেজা খানের ইস্যুকৃত নির্দেশাবলীর আদৌ কোন মূল্য নেই। তার পার্লামেন্টে গৃহীত আইনগুলো মুছে ফেলতে হবে, পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ঐ মূর্খ সৈনিকের মগজ থেকে যে সব অর্থহীন শব্দ বেড়িয়ে এসেছে সব নির্মূল করতে হবে এবং একমাত্র আল্লাহর আইন টিকে থাকবে এবং তা এ কালের ধ্বংসকে প্রতিহত করবে।’
ইমাম খোমেইনি তাঁর ছাত্রদের আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং রূহানী শক্তি ও নৈতিকতা অর্জনের উপর গুরুত্ব দিতেন। পরবর্তীতে তিনি নীতিশাস্ত্র এবং আত্মিক জ্ঞানের ক্লাস চালু করেন। তাঁর ক্লাসে শত শত ছাত্র, এমনকি মুজতাহিদরাও যোগ দিতেন।
তাঁর জনপ্রিয়তা এবং তাঁর ক্লাসে বিপুল সংখ্যক ছাত্রের উপস্থিতি রেজা খানের নিরাপত্তা পুলিশকে আতঙ্কিত করে এবং তারা লোকদেরকে এ থেকে নিবৃত্ত প্রয়াস চালায়। এমনকি ক্লাসটি বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়া হয়।
কোমের ফায়জিয়া মাদ্রাসা থেকে কোমের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজী মোল্লা সাদিক মাদ্রাসায় নীতিশাস্ত্রের ক্লাসগুলো স্থানান্তরের পূর্ব পর্যন্ত পুলিশ এ চাপ অব্যাহত রাখে। রেজা শাহের পতন ও নির্বাসনের আগ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। এরপর আবার ফায়জিয়া মাদ্রাসায় ক্লাস চালু হয়। এ সব ক্লাসের বক্তৃতা পরবর্তীকালে ‘নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ ও ‘আল জিহাদুল আকবার’ নামে সংকলিত হয়।
তাঁর ক্লাসগুলো একই উপকারী যে প্রায় পাঁচম মুজতাহিদ হওযার সৌভাগ্য লাভ করে। অনেকেই গুরত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত হন। তাঁদের মধ্যে বর্তমান রাহবার আয়াতুল্লাহ্ আল উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ি এবং রাফসানজানি অন্যতম।
ইমাম খোমেইনির রাজনৈতিক উত্থানের পেছনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ঐতিহ্যের পাশাপাশি দু’টি বিষয় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
প্রথম বিষয় হলো ১৯২২ সালে শায়খ আবদুল করীম হায়েরি কর্তৃক কোমের ধর্মতত্ত্ব কেন্দ্রকে মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা। আর দ্বিতীয়টি হলো আয়াতুল্লাহ্ বরুজেরদির অবদান। তিনি আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ের শক্তিশালী কেন্দ্র হিসাবে কোমকে গড়ে তোলার কাজে মনোযোগ দেন। তিনি সারা ইরানে খুম্স ও অন্যান্য ধর্মীয় বিধান বাস্তবায়নের জন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর ফলে কোমের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়।
আয়াতুল্লাহ্ বরুজেরদি ইরানি আলেমগণের সর্বজনগ্রাহ্য নেতা ছিলেন। ১৯৬২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর আলেমগণ ইমাম খোমেইনিকে তাঁদের নেতৃত্বে বরণ করে নেন। এ সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যাতে ১৯৬৩ সালে ৫ জুন গণ-অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
সমাজতন্ত্রের মোকাবিলা এবং তাঁবেদার দেশগুলোতে মার্কিন পণ্যের বাজার সৃষ্টির লক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচী চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এরকমই এক সংস্কার কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল মহিলাদের ভোটাধিকার দান এবং প্রাদেশিক সমিতিসমূহের জন্য কোরআন নিয়ে শপথের শর্তের বিলোপ সাধন। এটি ছিল ১৯৬২ সালের কথা।
যেখানে পুরুষরাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারত না সেখানে মহিলাদের ভোটাধিকার নিছক একটা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ইমাম এসব বিষয়ে প্রতিবাদ জানান এবং আলেমরাও তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। সরকার প্রতিবাদের মুখে কোরআন নিয়ে শপথ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি বাতিল করে। কিন্তু ১৯৬৩ সালে ৯ জানুয়ারি আবার ছয় দফা সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং এ কর্মসূচি অনুমোদনের জন্য গণভোটের আয়োজন করে। একে ‘শ্বেত বিপ্লব’বা ‘শাহ ও জনতার বিপ্লব’ নাম দেওয়া হয়। বিপ্লবীরা একে শ্বেত বিপ্লব বলতেন এ অর্থে যে, তা হোয়াইট হাউসে জন্মলাভ করেছিল।
ইমাম খোমেইনি ভোট বর্জনের ডাক দেন। জনগণ ভোটদান হতে বিরত থাকে। সে বছরই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ইমাম শাসকগোষ্ঠীর বেআইনী ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বন জানান। ইমামের নেতৃত্বে ইরানের ইসলামি উম্মাহর প্রতিরোধে শাহ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে।
১৯৬৩ সালে আলেমরা ঘোষণা করেন যে, এ বছর সপ্তাহব্যাপী নওরোজ পালন করা উচিত নয়। কারণ, নববর্ষের ২য় দিন ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শাহাদাতবার্ষিকী। জনগণ এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে।
১৯৬৩ সালের ২২ মার্চ নওরোজের দ্বিতীয় দিন ফায়জিয়া মাদ্রাসায় ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হাজার হাজার লোক অংশগ্রহণ করে। শাহের লোকেরা এ অনুষ্ঠানে আক্রমণ করে অনেককে হত্যা ও আহত করে। শুধু তাই নয় কয়েকদিন পর যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ছিল তাদেরকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।
এ ঘটনার চল্লিশতম দিনে সারা দেশে প্রচণ্ড বিক্ষোভ হয়। জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর পরপরই আশুরা সমাগত হয়। সাভাক বাহিনী হুকুম দেয় যে,ফায়জিয়া মাদ্রাসায় ইমামের বক্তৃতা দেওয়া চলবে না। ইমাম এ অন্যায় আদেশ উপেক্ষা করে আশুরার বিকেলেই মাদ্রাসা ফায়জিয়ায় পৌঁছান। ইমাম তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি যে,তারা ইসলাম ও ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরোধী। ইসরাইল আমদের পবিত্র ঐশী গ্রন্থ আল কোরআনকে হেয় করতে চায় এবং ধর্মীয় নেতৃত্বকে নির্মূল করতে চায়। ইসরাইল আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা ও কৃষিকে পাকাপোক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।’
ইমামের ভাষণে জনগণ ক্রোধে ফেটে পড়ে। রাতে ইমামকে গ্রেফতার করা হয়। মুহূর্তে খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জনতা স্লোগান তোলে : ‘হয় খোমেইনি, না হয় মৃত্যু।’ তেহরানে বিশাল মিছিল হয়। বিশ্ববিদ্যালয়,দোকানপাট বন্ধ থাকে। সারা দেশে ধর্মঘট পালিত হয়।
১৯৬৩ সালের ৫ জুন গণবিক্ষোভে গুলি বর্ষণ করলে তেহরানে ১৫০০০, কোমে ৪০০ লোক শাহাদাতবরণ করেন। জনগণের দাবির মুখে ১৯৬৪ সালের ৭ এপ্রিল শাহ ইমামকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
ক্যাপিটিউলেশন আইন
১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ইরানি পার্লামেন্টে ইরানে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আইন পাশ করা হয়। এ আইনে মার্কিন নাগরিকদের বিচার করার কোন ক্ষমতা ইরান সরকারের থাকবে না এবং তাদের বিচার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
ইমাম এর বিরোধিতা করে বক্তৃতা রাখেন। তিনি বলেন, ‘এহেন অপমানের প্রতিবাদ করার ভার এখন ইসলামি মুবাল্লিগ ও বক্তাদের উপরই ন্যস্ত। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে দেশের স্বাধীনতার জন্য কলম ধরতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কদের উচিত পার্লামেন্টে গৃহীত সিদ্ধান্তের পেছনে কি রহস্য নিহিত রয়েছে, সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা। এ সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সর্বসম্মত নীতি গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ইসলাম ও কোরআনের গৌরব বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হওয়া এবং একই সাথে মুসলমানদের সমর্থনে কাজ করে যাওয়া উচিত।’
ইমাম সেনাবাহিনীকে জেগে উঠে শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানান। শাহ বুঝতে পরল যতদিন ইমাম দেশে আছেন ততদিন জনগণের স্বার্থের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করা যাবে না। তাই আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য ইমামকে নির্বাসনে পাঠানোর কথা ভাবল। ১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর ইমামকে কোম থেকে গ্রেফতার করে তুরস্কে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সৈন্যরা ধর্মীয় নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে। ইমাম খোমেইনির জ্যেষ্ঠপুত্র মোস্তফা খোমেইনিও গ্রেফতার হলেন। দু’মাস পর তাঁকেও তুরস্কে নির্বাসন দেয়া হয়।
১৯৬৫ সালের অক্টোবরে তুরস্ক সরকার তাঁকে ইরাকের নাজাফে প্রেরণ করে। সেখানে তিনি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। তিনি সেখান থেকে তাঁর বাণী ইরানে প্রেরণ করতেন এবং আলেমরা তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতেন।
ইমাম খোমেইনিকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মোস্তফা খোমেইনিকে ১৯৭৭ সালের ২৩ অক্টোবর বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
১৯৭৮ সালের ৭ জানুয়ারী ইমাম খোমেইনির মর্যাদা নষ্ট করে পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ইমামকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং তিনি বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থার দালাল বলে উল্লেখ করা হয়।
এর প্রতিবাদে কোমে বিক্ষোভ হয় এবং ২০০ লোক শাহাদাত বরণ করেন। কোমের শহীদদের স্মরণে তাবরীজে বিক্ষোভ হয়। এতে ৫০০ জন শহীদ হন। এরপর ইরানের প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। শত শত লোক শহীদ হন।
১৯৭৮ সালের মুহররম মাসে লাখ লাখ মানুষ তেহরানের রাস্তায় নেমে আসে। নিরস্ত্র জনতা কাফনের কাপড় পড়ে মেশিনগান সজ্জিত সেনাবাহিনীর সামনে ছুটে যেতে থাকে। ৮ সেপ্টেম্বর ৫০০০ লোক শাহাদাতবরণ করেন।
অক্টোবর মাসে ইমামকে ইরাক থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও ইমাম কোন মুসলিম দেশে যেতে চেয়েছিলেন,কিন্তু কোন মুসলিম দেশ ইমামকে গ্রহণ করতে রাজী হয়নি। তাই তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে চলে যান।
সেখান থেকে ইমামের বাণী রেকর্ড করে ইরানে প্রেরণ করা হতো। তেহরানের বহু লোক ফোনে সরাসরি তাঁর কথা রেকর্ড করে রাখতেন। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাঁদের ছাত্রদের মাধ্যমে গ্রাম-গ্রামান্তরে তা পৌঁছৈ দিতেন।
১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইমামকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মিছিল করে। শাহের বাহিনী এ মিছিলের উপর গুলি করলে ৬৫ জন ছাত্র শহীদ হয়। এরপর মুহররম ৯ ও ১০ তারিখ (১৯৭৯) পুনরায় বিক্ষোভ হয়। ইমাম তাঁর প্রেরিত বাণীতে বলেন : ‘মুহররম হলো তরবারির উপর রক্তের বিজয়ের মাস।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সারা দেশে কার্ফু ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারে যে, কার্ফু মানা হবে না। তাই তা প্রত্যাহার করা হয়। প্রায় ৫০ লক্ষ লোক মিছিল করে উত্তর তেহরানের দিকে ধাবিত হয়। তারা শাসকদের ভবনগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়। শাহ বুঝতে পারে আর টিকে থাকা সম্ভব নয়। সে কট্টর ধর্মবিরোধী নেতা শাপুর বখতিয়ারকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে। সে শাহকে নিরাপদে দেশ থেকে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়। শাহ পালিয়ে যাবার সময় বলে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু দিন বেড়িয়ে আসি। শাহ আমেরিকায় কিছুদিন অবস্থান করে। আমেরিকার সরকার তার নিরাপত্তার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করে। সে মিশরে আনোয়ার সাদাতের আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই মারা যায়।
ইমামকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। কিন্তু শাপুর বখতিয়ার এ দাবিকে উপেক্ষা করে। ইমাম বখতিয়ারের অনুমতি ছাড়াই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। বিমান বন্দরে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। ইমামকে এ ব্যাপারে অবহিত করার পরও তিনি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ফ্লাইটে দেশে ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
শাপুর বখতিয়ার বিমান বন্দর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও বিমান বন্দরের কর্মচারীরা তা উপেক্ষা করে ইমামের বিমান অবতরণের ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ইমাম বিজয়ীর বেশে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রায় ৬০ লক্ষ লোক তাঁকে অর্ভ্যর্থনা জানায়।
ইমাম প্রথমেই বিপ্লবের শহীদদের কবরস্থান বেহেশতে যাহরায় যান এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন। তিনি রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও মজলিশকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তিনি সেনাবাহিনীকে জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোণার আহ্বান জানান। তাঁদেরকে স্বাধীনতার দিকে উৎসাহিত করেন। তিনি মেহেদী বাজারগানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। বাজারগান অস্থায়ী মন্ত্রিসভা গঠন করেন। দেশে দুটি সরকার অস্তিত্ব লাভ করে।
সেনাবাহিনীর সদস্যদের দলত্যাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১০ ফেব্রুয়ারি বিমান বাহিনীর ক্যাডেটরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সেনাবাহিনীর প্রধান দেশে সামরিক আইন জারির চিন্তা করে। ইমাম সামরিক আইন উপেক্ষা করে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। জনতা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস, রেডিও স্টেশন, টেলিভিশন স্টেশন, সংসদ ভবন, সাভাব বাহিনীর সদর দফতর ও নির্যাতন কেন্দ্রগুলোতে গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় ৮০০ লোক নিহত হয়। জনগণের প্রবল চাপে শাপুর বখতিয়ার রাতের আঁধারে পালিয়ে যায় এবং ১১ ফেব্রুয়ারি বিপ্লব পূর্ণ সফলতা লাভ করে। ১৯৭৯ সালের ৩০ মার্চ গণভোট হয় এবং দেশের ৯৮.২% জনগণ ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সপক্ষে ভোটদান করে। ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।
বিপ্লবের পরপরই খুব কম সময়েই মধ্যেই আয়াতুল্লাহ্ মুর্তাজা মোতাহ্হারি,আয়াতুল্লাহ্ তালেকানি,আয়াতুল্লাহ্ বেহেশতিসহ বিপ্লবের প্রথম কাতারের ৭৩ জন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে শহীদ করা হয়। বোমা বিস্ফোরণে শহীদ করা হয় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী রাজাই ও প্রধানমন্ত্রী ড. জাওয়াদ বাহোনারকে। আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়িকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যে বিপ্লব ধ্বংসের জন্য এত প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবাণীতে আজোও তা টিকে আছে এবং ইমাম মাহদি (আ.)-এর হাতে এ বিপ্লবের পতাকা তুলে দেয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ্।
অন্যান্য আলেমদের তুলনায় তাঁর সফলতা
ইমাম খোমেইনি (রহ.)-এর সফলতার কারণ ছিল ইমাম মাহদি (আ.)-এর আত্মপ্রকাশের পূর্বে ফকীহ-মুজতাহিদের কর্তব্য সম্পর্কে তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তাধারা। এ বৈপ্লবিক চিন্তাধারায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র ও শিক্ষক গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৬৩ সালের পূর্বে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়ার পেছনে প্রকৃত কারণ ছিল এটাই। কেননা, এ সময় তিনি আলেম সমাজের মধ্যে এক চিন্তাগত নীরব বিপ্লব সাধন করছিলেন।
অনেক ধর্মতত্ত্ববিদের ধারণা ছিল ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে ফকীহ-আলেমগণ সমাজের ছোট-খাট সংস্কার করতে পারেন; অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তাঁদের কাজ হলো বড় জোর ধর্মীয় ফতোয়া ও সংগ্রামের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীকে কিছুটা সংযমী করা,দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা- এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু ইমাম খোমেইনি (রহ.) বুঝিয়ে দেন : ইমাম মাহদি (আ.) বিশ্ব-বিপ্লবের নায়ক হবেন, সন্দেহ নেই;কিন্তু তাঁর সর্বাত্মক বিপ্লবের পূর্বে দেশে দেশে ফকীহ আলেমদের উচিত তাঁর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা এবং কোরআনের আইন জারির চেষ্টা করা।
তাঁর কথা ছিল সাম্রাজ্যবাদীরা এ ভুল ধারণা আমাদের মধ্যে ছড়িয়েছে যে, ইসলামে সরকার গঠনের বাধ্য-বাধকতা নেই। ইসলামের বিধান তো রয়েছে, সরকার না হলেও ইসলামি শরিয়ত চলতে থাকবে। তাই ইসলামি হুকুমত কায়েমের প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) যে রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন তাঁর পর তাকে অব্যাহতভাবে চালিয়ে নেয়ার জন্য খলীফার পদ নির্দিষ্ট করেছেন। খলীফার কাজ কি শুধু আইন বর্ণনা-বিশ্লেষণ ও প্রচার করার জন্য? তাহলে তো খলীফার দরকার নেই। খলীফার পদ আইন কার্যকর করা। কার্যকর নির্বাহী ব্যবস্থা না থাকলে আইন কার্যকর হতে পারে না। আইন কার্যকর করার জন্য নির্বাহী কর্তৃত্ব একান্ত আবশ্যক।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ও ধর্ম আলাদা নয়। রাসূলের সময় কি তা ছিল? খোলাফায়ে রাশেদীন বা ইমাম আলী (আ.)-এর সময় কি তা ছিল?’
আসলে সাম্রাজ্যবাদীরা চেয়েছে মানুষের জীবন থেকে ইসলামকে নির্বাসিত করতে, বাস্তব জীবনে দীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বোধকে নিঃশেষ করতে এবং ফলশ্রুতিতে জনগণের সাথে আলেমদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা আলেমরাই ইসলামের প্রকৃত বিপ্লবী রূপের সাথে পরিচিত এবং তারাই জনগণকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত রাখতে সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ধর্ম-রাজনীতি পৃথক হলে জনগণের উপর আলেমদের প্রভাব কমত, সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বাড়ত, আর তারা ধন-সম্পদ লুটে নিতে পারত।
তিনি বলেন, ‘শুধু নামায, রোযা, যিকির নিয়ে ব্যস্ত থাকলে এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা পরিত্যাগ করলে তারা কখনই আমাদের সাথে বিবাদ বাধাতে আসবে না। সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ না করে শুধু জ্ঞান শিক্ষাদান,আইন-কানুন পাঠ করলে তাদের সাথে সংঘর্ষের কোন আশংকা থাকবে না। নামায নিয়ে তো ওদের মাথা ব্যথা নেই। ওরা চায় খনিজ সম্পদ।’
তিনি বলেন, ‘গোটা জগৎটাই তো রাজনৈতিক। এখানে রাজনীতি না করলে টিকে থাকাই তো সম্ভব নয়।’
ইমাম বলেন, ‘ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অবর্তমানে আইন সংক্রান্ত জ্ঞান এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষকেই শাসক নিয়োগ করতে হবে। এরকম প্রচুর আলেম পাওয়া যাবে। এরা সকলে এক হয়ে কাজের সংকল্প করলে একটি তুলনাহীন বিশ্বজনীন ন্যায়বাদী রাষ্ট্র কায়েম করা খুব সহজেই সম্ভব হবে।’
সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহের স্বরূপ উদ্ঘাটন
ইসলামপন্থী দল ও আন্দোলনগুলোর নেতারা মনে করতেন নাস্তিক সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে অস্তিক মার্কিনীরা ভালো এবং তাদের দিক থেকে ইসলামের উপর আঘাত আসবে দেরীতে বা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে তাদের সমর্থন লাভ করা যাবে। কিন্তু ইমাম খোমেইনি বুঝেছিলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিত মোটেই শক্তিশালী নয়; বরং অতি শীঘ্রই কমিউনিজমের পতন ঘটবে।
রাজনৈতিক দর্শন
ইমাম খোমেইনি (রহ.)-এর চেষ্টার লক্ষ্য ছিল ধর্মী রাষ্ট্র গঠন এবং রাজনীতি ও ধর্মের মধ্যকার তথাকথিত ব্যবধান ঘুচানো। তিনি এমন এক সময় এ দর্শন ব্যক্ত করেছিলেন যখন সারা বিশ্বে প্রচার চালানো হচ্ছিল যে,ধর্মীয় রাষ্ট্রের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং তা মধ্যযুগীয় একটি দর্শন ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কিন্তু ইমাম খোমেইনি এ ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত করে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করেন যা এখনও বিদ্যমান।
মুসলমানদের মধ্যে সৌহার্দ্র্য সৃষ্টি
মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য ইমাম মুসলমানদের ঐক্যের উপর জোর দিতেন। রাসূলের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে যেন মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয় সেজন্য তিনি ১২ থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল ‘ঐক্য সপ্তাহ’ পালনের আহ্বান জানান।
ইসরাইল কর্তৃক দখলকৃত মসজিদুল আকসাকে মুক্ত করার সংগ্রামকে কেন্দ্র করে যেন মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠে সেজন্য তিনি রমযান মাসের শেষ শুক্রবার ‘আল কুদ্স’ দিবস পালন করার আহ্বান জানান।
দীর্ঘ কর্মব্যস্ত জীবনশেষে ইমাম খোমেইনি (রহ.) ১৯৮৯ সালের ৩রা জুন মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন।
ইমাম খোমেইনি (রহ.) ও ইসলামি বিপ্লব | |