মিনার
মিনার: মিনার-এর শাব্দিক অর্থ হলো আলোর স্থান। এটি এমন একটি উচ্চ স্থান যেখানে আলো জ্বালানো হয় এবং এটি যাত্রীদেরকে ও জাহাজের নাবিককে গাইড করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এর আরেকটি অর্থ হলো একটি উঁচু স্তম্ভ যা ইট বা পাথর দিয়ে তৈরি । এতে আরোহণ করা এবং নামাজের জন্য আযান দেওয়া হয়।
শব্দের ঐতিহাসিক উৎপত্তি : প্রাক-ইসলামি যুগে ইরানের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে যাত্রীদের পথপ্রদর্শন করার জন্য যে মিনার ব্যবহার করা হতো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পথনির্দেশক মিনার বিভিন্ন প্রকারে বিদ্যমান ছিল এবং এগুলোর ভিন্ন ধরনের কার্যকারিতাও ছিল। সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু নজরদারির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো এবং কিছু কিছু দিন ও রাত্রিতে যাত্রীদেরকে ও জাহাজকে গাইড করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। অধিকাংশ ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে মিনারের ইতিহাস পার্থিয়ান যুগের। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, হাখামানশি যুগে এবং তারও আগে কোনো পথনির্দেশকারী উপায়-উপকরণ ও সুবিধা বিদ্যমান ছিল না। যাহোক,পার্থিয়ান যুগের নওরাবাদ মিনারের মতো কয়েকটি মিনার বাদে প্রাক-ইসলামি যুগের এই ধরনের কোনো মিনার আর বিদ্যমান নেই।
ঐতিহাসিক প্রবণতা: প্রাচীনকালে দুটি সীমান্তের মধ্যে মিনার তৈরি করা হতো এবং সীমানা বুঝানোর জন্য এতে আলো বা উজ্জ্বল কিছু স্থাপন করা হতো। ধীরে ধীরে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় মিনার তৈরি করা হতে থাকে যাতে ভ্রমণকারীরা এবং মরুযাত্রীদল তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য পথ খুঁজে পেতে পারে। প্রথম যে মিনারটি নির্মিত হয়েছিল তা ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার মিনার,যার উচ্চতা ছিল দুইশ ত্রিশ হাত। ইসলামের আবির্ভাবের পরে ইসলামি দেশগুলোতে এই ধরনের মিনার আযান দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল আর তাই দেখা যায়, বেশিরভাগ জায়গায় মিনারগুলো মসজিদ বা এমন ভবনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে যার একটি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ইসলামের প্রথম শতাব্দীর বেশিরভাগ মসজিদেও আযান দেওয়ার জন্য মিনারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এই মিনারগুলোতে মুয়াজ্জিনের জন্য একটি জায়গা ছিল এবং এ কারণেই যে মিনারগুলোতে এমন জায়গা নির্মিত হয়নি সেগুলো প্রাক-ইসলামি যুগের বলে বিশ্বাস করা হয়।
আকৃতির দিক থেকে মিনারগুলোর বিভিন্নতা: মিনারগুলোর বেশিরভাগই ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে মুকারনা সজ্জা (একপ্রকার ইসলামি স্থাপত্যকর্ম),ইটের কারুকাজ, মোজাইক, ফিরোজা টাইলস ইত্যাদির ব্যবহার।
ইরানের তিনটি মিনার পাথরের তৈরি,যার মধ্যে একটি আলে কাকুয়েহ যুগের (৪২০ হিজরি) অন্তর্গত আবারকুহের উচ্চ গম্বুজ। এই ধরনের পাথরের মিনারগুলোর বেশিরভাগই সমাধিতে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যমান মিনারগুলোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন : বিদ্যমান প্রাচীন মিনারগুলোর মধ্যে রয়েছে ষষ্ঠ শতাব্দীর সাথে সম্পর্কিত কোশখানেহ বাগানের মিনার। এটি সুলতান সানজারের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। ইসফাহানের সেলজুক যুগের সাথে সম্পর্কিত সারবান বা সারভান মিনার- যা চেহেল দোখতারান (চল্লিশ কন্যা) মিনারের কাছে অবস্থিত। এই মিনারের উচ্চতা প্রায় ৪৮ মিটার এবং এর ভিত্তির পরিধি ১৪ মিটার। এই মিনারের অলঙ্করণের মধ্যে রয়েছে ইটের কাজ,ইটের মুকারনা ও ফিরোজা টাইলস। আর মঙ্গোলিয়ান টাইলের কাজসহ যে মিনারগুলো রয়েছে সেগুলো দ্বিতীয় সেলজুক আমলের এবং এর মধ্যে রয়েছে সেমনান জামে মসজিদের মিনার-যা সেমনানের প্রাচীনতম কাজ। এই মিনারের কোনো ঐতিহাসিক শিলালিপি পাওয়া যায়নি। এরকম আরেকটি মিনার হলো ইসফাহানের আলী মসজিদের মিনার।
মিনার | |