চোঘা জানবিল, খুজেস্তান
চোঘা জানবিল বা জিগুরাত দুর উনতাশ ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের শুশ (সুসা) কাউন্টিতে অবস্থিত একটি প্রাচীন ইলামি কমপ্লেক্স। এই প্রাচীন উপাসনালয়টি প্রাচীন ইলামের রাজা উনতাশ গাল, প্রাচীন শহর সুসার তত্ত্বাবধায়ক ইনশুশিনাকের সম্মানে ইলামিদের সময় এবং প্রায় ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি করেছিলেন।
জিগুরাত মানে চূড়া,পর্বত চূড়া এবং উঁচু স্থান আর সুমেরীয় ভাষায় এর অর্থ হলো বহুতল মন্দির যা সিঁড়ি আকৃতির। স্থানীয়রা অস্বাভাবিক ধরনের পাহাড়কে ‘চোঘা’ এবং ‘জানবিল’ মানে ঝুড়ি বলে এবং খননের আগে এই স্থানটি উল্টানো ঝুড়ির আকারে ছিল বলে একে চোঘা জানবিল বলা হতো। খুজেস্তান সমভূমির উত্তরাঞ্চলে ‘চোঘা’ শব্দ দিয়ে ‘প্রাচীন জিনিসের পাহাড়’কে বুঝানো হয় এবং স্থানীয় উপভাষায় এই শব্দটি দিয়ে শুরু হওয়া বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে, যেমন : চোঘা জানবিল (ঝুড়ির আকারে প্রাচীন পাহাড়),চোঘা মিশ (ভেড়ার আকৃতিতে প্রাচীন পাহাড়),চোঘা পাহন (প্রশস্ত এবং বড় প্রাচীন পাহাড়) এ বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
চোঘা জানবিল মন্দিরটি দুর উনতাশ নামে একটি শহরে অবস্থিত। এটি প্রায় ১৩০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং তিনটি সমকেন্দ্রিক প্রাচীর নিয়ে গঠিত- যা শহরের প্রধান এলাকাগুলোকে নির্দিষ্ট করে। মূল মন্দিরটি (জিগুরাত) শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রথম সীমানা প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত। প্রাসাদ ও ছোট মন্দিরগুলো দ্বিতীয় সীমানার মধ্যে এবং রাজকীয় ভূগর্ভস্থ সমাধি,রাজপ্রাসাদ এবং পানি শোধনাগার তৃতীয় সীমানার ভেতরে অবস্থিত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, চোঘা জানবিলে ইলামের দেব-দেবীদের জন্য অন্যান্য উপাসনালয়ও নির্মিত হয়েছিল।
এটি মূলত একটি পাঁচতলাবিশিষ্ট স্থাপনা ছিল,যার মধ্যে বর্তমানে দুটি টিকে রয়েছে। চোঘা জানবিলের জিগুরাটটির প্রতিটি পাশ ১০৫.২ মিটার (৩৪৫ ফুট) এবং উচ্চতায় প্রায় ৫৩ মিটার (১৭৪ ফুট) ছিল,যার মধ্যে এখন মাত্র ২৫ মিটার অবশিষ্ট রয়েছে। প্রথম এবং পঞ্চম তলা বাদে,যেগুলি ফাঁপা এবং ঘরের আকারে ছিল,বাকি মেঝেগুলো মাটির ইট দিয়ে তৈরি। দেয়ালের অভ্যন্তরীণ টেক্সচারটি কাদামাটির ইট দিয়ে এবং বাইরের অংশটি পাকা ইট দিয়ে তৈরি। জিগুরাটে ব্যবহৃত কিছু কিছু ইট চকচকে এবং অন্যগুলোতে স্টুড আকৃতির অলঙ্করণ রয়েছে যা বিশ্বের প্রাচীনতম টাইলসগুলোর অন্যতম। জিগুরাতের চারপাশেঅনেকগুলো ইট রয়েছে যার উপর নির্মাতার নাম এবং এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ইলামি কিউনিফর্মে খোদাই করা হয়েছে।
জিগুরাতের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সম্মুখভাগের অংশে দুটি বৃত্তাকার প্ল্যাটফর্ম দেখা যায় যেগুলো সম্পর্কে নানা মত ব্যক্ত করা হয়েছে। এই মতামতগুলো অনুসারে,এই প্ল্যাটফর্মগুলো পুজা-অর্চনার বেদি, প্রতিমা ও সূর্যঘড়ির স্থান এবং গণকি ও জ্যোতির্বিদ্যার স্থান ছিল। চোঘা জানবিলের পানি শোধনাগারটি মূল মন্দিরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এই শোধনাগারটি সংশ্লিষ্ট আধার-কৌশল ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বিশ্বের প্রাচীনতম পানি শোধনাগার হিসাবে বিবেচিত।
চোঘা জানবিলে একটি শিলালিপি রয়েছে যাতে লেখা আছে : ‘আমি,উনতাশ গাল,সোনালি ইট খোদাই করেছি। আমি এখানে গাল ও ইনশুশিনাকের দেবতাদের জন্য এই আশ্রয়স্থল তৈরি করেছি এবং তাদেরকে এই পবিত্র স্থানটি উপহার দিয়েছি। আমার কাজগুলো,যা গাল ও ইনশুশিনাকের দেবতাদের জন্য উপহার, তাদের দ্বারা গৃহীত হোক।’
ইলামের অন্যান্য শহরের মতো চোঘা জানবিল মন্দির এবং এর বড় শহর দুর উনতাশ খ্রিস্টপূর্ব ৬৪৫ অব্দে অ্যাসিরিয়ান রাজা আশুরবানিপালের নেতৃত্বে অ্যাসিরিয় আক্রমণকারীদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। দুর উনতাশ শহরের ধ্বংসাবশেষ এই চোঘা জানবিল একটি মূল্যবান,ব্যতিক্রমী ও আন্তর্জাতিক স্মৃতিচিহ্ন এবং এটি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
চোঘা জানবিল, খুজেস্তান | |
১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | |
ইলামের রাজা উনতাশ গাল |