‘ইরানি জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হবে’
ইমাম খোমেনীর (রহ.) ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ভাষণ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, শত্রুরা ইরানি জনগণকে এদেশের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের সে চেষ্টা কোনোদিনও সফল হবে না। তিনি আজ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনীর (রহ.) ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভাষণে এ মন্তব্য করেন।
শনিবার সকালে রাজধানী তেহরানের অদূরে বেহেশতে জাহরায় ইমাম খোমেনীর মাজার প্রাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে ভাষণ দেন সর্বোচ্চ নেতা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে গত দুই বছর ইমামের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং সর্বোচ্চ নেতাও ইমামের মাজারে ভাষণ দেননি। এর আগে প্রতি বছর ইমামের মাজারে সমবেত জনগণ সর্বোচ্চ নেতার ভাষণ শোনার অপেক্ষায় থাকতেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আজকের ভাষণে আরো বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইরানে ইরানের কোথাও জনগণের বিক্ষোভ দেখলেই পুলকিত বোধ করে। তারা বিষয়টির অপব্যবহার করে জনগণকে এদেশের সরকারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে চায়। কিন্তু শত্রুর আরো বহু হিসাবনিকাশের মতো এই হিসাবও ব্যর্থ হতে বাধ্য।
তিনি বলেন, মার্কিনীদের উপদেষ্টা হিসেবে এমন কিছু বিশ্বাসঘাতক ইরানি যোগ দিয়েছে যারা ওয়াশিংটনকে ভুল পরামর্শ দিচ্ছে। এসব লোক যে শুধু ইসলামি ইরানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাই নয় বরং তারা মার্কিনীদের সঙ্গেও প্রতারণা করছে। কারণ, তারা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমেরিকাকে পরামর্শ দিচ্ছে এবং এসব পরামর্শে কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, এমনকি ইরানের অভ্যন্তরেও মুষ্টিমেয় কিছু লোক আমেরিকার ওই সব বিশ্বাসঘাতক উপদেষ্টাদের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, এদেশের জনগণের চিন্তা-চেতনা উপলব্ধি করা আমেরিকায় বসে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ইসলামি বিপ্লবের প্রতি ইরানি জনগণের বিশ্বাস ও নির্ভরতা বিপ্লবের দিনগুলোর তুলনায়ও অনেক বেশি। এটি বুঝতে হলে শহীদ কাসেম সোলাইমানির দাফন অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করতে হবে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তার ভাষণের অন্য অংশে বলেন, শত্রুরা গ্রিসের উপকূলে ইরানি তেল চুরি করার পর ইরানের সাহসী জওয়ানরা শত্রুর জাহাজ জব্দ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ইরানকে চুরি করার দায়ে অভিযুক্ত করা শুরু করেছে!তিনি বলেন, “তোমরা আমাদের যে তেল চুরি করেছিলে আমরা তা ফিরিয়ে নিয়েছি মাত্র। চোর তোমরা, আমরা নই।”
সর্বোচ্চ নেতা তার ভাষণে বলেন, আজকের তরুণ সমাজে ইমাম খোমেনীকে সঠিকভাবে চেনে না; অনেকে ইমামের সঙ্গে আমার তুলনা করে অথচ ইমামের সঙ্গে আমার পার্থক্য আকাশ-পাতাল। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইমাম খোমেনী ছিলেন ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বিপ্লবের নেতা। সাম্প্রতিক ইতিহাসের বিখ্যাত বিপ্লবগুলো হলো- ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব এবং ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব। তিনি বলেন, বহু কারণে প্রথম দু’টি বিপ্লবের তুলনায় ইরানের ইসলামি বিপ্লব ছিল অনেক বেশি বৃহৎ ও প্রভাবশালী। তিনি বলেন, প্রথম দু’টি বিপ্লবে জনগণের আত্মিক চাহিদার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি কিন্তু ইসলামি বিপ্লবে মানুষের বস্তুগত চাহিদার পাশাপাশি তাদের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিপ্লবের পর গত ৪৩ বছরে ইরানে প্রায় ৫০টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন যা এ বিপ্লবের বিশালত্ব তুলে ধরেছে আর ইমাম ছিলেন এমন একটি বিপ্লবের নেতা।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, শাহের স্বৈরাচারী শাসনের যাতাকলে পিষ্ট ইরানি জনগণ যখন তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছিল তখন ইমাম খোমেনী তাদেরকে আশার আলো দেখিয়েছেন। এই আশা এর আগের কোনো নেতা ইরানি জনগণকে দেখাতে পারেনি।
ইমাম খোমেনীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহান নেতার মাজারে সমবেত জনতার উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেন, অনেক মনে করেন ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এদেশের সঙ্গে শত্রুতা করছে। তিনি এটিকে ভুল ধারনা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থা জুলুম ও জালিমের বিরোধিতা করে বলেই তারা এর সঙ্গে শত্রুতা করছে; অন্য কোনো কারণে নয়। সূত্র: পার্সটুডে
.