ঢাকায় পর্দা নামল তিনদিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসবের
রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ তিনদিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে।
রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ তিনদিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশী এবং ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মদী। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক সামির আহমেদ।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহ নিস্তার জাহান কবীর।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ ও ফিল্ম ক্লাবের উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহযোগিতায় আয়োজিত এ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ইরান ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি দেশ। দেশটির সাথে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।ভাতৃপ্রতিম দেশদুটির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অনেক মিল রয়েছে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ ও ফিল্ম ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসবে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাস ও ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের আয়োজন দু’পক্ষের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, ইরানের চলচ্চিত্র সারা বিশ্বেই সমাদৃত। ইরানি চলচ্চিত্রের গুণগত মান, সরলতা, নৈতিক শিক্ষা এবং মানবিক বার্তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবিকতার দিকগুলো সম্পর্কে জানা সম্ভব। এ ধরনের উৎসব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জ্ঞানচর্চার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বলেন, চলচ্চিত্র হলো বিশ্বের এমন একটি প্রভাবশালী শিল্প যা বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটি দেশের সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মানবিক দিকগুলো সম্পর্কে জানা যায়। ইরানের চলচ্চিত্র শিল্প বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চলচ্চিত্র শিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ ও ফিল্ম ক্লাবের উদ্যোগে ইরানি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের আয়োজন বাংলাদেশ ও ইরানের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মাদী বলেন, চলচ্চিত্র শিল্প হলো অনেকগুলো শিল্পের সমন্বিত রূপ।এতে রয়েছে গল্প, সংগীত, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি ইত্যাদি। এটি কেবল একটি শিল্পই নয়, বরং এটি আজ দর্শকদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে।এ কারণে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর ইরান তার বিপ্লবের বার্তা এই প্রভাবশালী শিল্পের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
ইরানের কালচারাল কাউন্সেলর বলেন, ইরানি চলচ্চিত্রে গল্প বা বিষয়বস্তুর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।ইরানি সিনেমার গল্পে মানবিক ও নৈতিক বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পায়। আর এ কারণেই ইরানি চলচ্চিত্র বিশ্বের দর্শকদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছেও ইরানি চলচ্চিত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।আমরা মনেকরি, এধরনের চলচ্চিত্র উৎসব দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনে সহযোগিতার জন্য ইরানি দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইরানি চলচ্চিত্রে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শিক্ষণীয় বিষয়গুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা এসব চলচ্চিত্র থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। ইরানি চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শাহ নিস্তার জাহান কবীর ও বিভাগের শিক্ষক সামির আহমেদ।
তিনদিনব্যপী এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখানো হয় ইবরাহিম হাতামি কিয়া পরিচালিত ‘বডিগার্ড’।উৎসবের দ্বিতীয় দিন ৪ ডিসেম্বর দেখানো হয় ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মাজিদ মাজিদির ‘দি কালার অব প্যারাডাইস’ ও সাইফুল্লাহ দাদ পরিচালিত ‘দি সারভাইভার’। উৎসবের শেষ দিন ৫ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হয় মাজিদ মাজিদির ‘দি সংস অব স্প্যারো’, আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘টেস্ট অব চেরি’ এবং মাজিদ মাজিদির ‘দি চিল্ড্রেন অব হ্যাভেন’।বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আয়োজিত এ উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।