সুপেয় পানি প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে ইরানের সাফল্য বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি, বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, নিরাপদ ও সুপেয় পানির প্রাপ্যতায় ইরানের সাফল্য বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি।

বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, নিরাপদ ও সুপেয় পানির প্রাপ্যতায় ইরানের সাফল্য বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি।
পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম গুরুতর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিল্পায়নের ফলে পানি সম্পদের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ গুরুতর পানি সংকটে পড়তে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, জলবায়ুগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইরান নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহে বিশ্ব গড়কে ছাড়িয়ে গেছে।
শহর ও গ্রামে পানীয়জলের প্রাপ্যতা
প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের ৯৯.৯ শতাংশ শহুরে জনগণ নিরাপদ পানীয়জলের আওতায় রয়েছে; যেখানে বিশ্ব গড় মাত্র ৮৭ শতাংশ। গ্রামীণ ইরানে এই হার ৮৭ শতাংশ, অথচ বিশ্ব গড়ে তা মাত্র ৬২ শতাংশ।
এই সাফল্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন আঞ্চলিক অনেক দেশেই পানীয় জলের সরবরাহ ন্যূনতম পর্যায়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তানে গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানীয় জলের প্রাপ্যতা ৩০ শতাংশেরও কম। ইরাকের বহু অঞ্চলে আবার জলের ঘাটতি বা দূষণ প্রকট, এবং সেখানকার অনেক এলাকায় এখনো লাইনভিত্তিক পানীয় জল সরবরাহ গড়ে ওঠেনি।
পানি সংকট মোকাবিলায় ইরানের পদক্ষেপ
ইরানও বর্তমানে পানি ঘাটতির মুখোমুখি, তবে সংকট মোকাবিলায় একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে:
১. পানি শোধনাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি: বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ উপকূলে সমুদ্রের পানি মিষ্টি করার (ডিস্যালিনেশন) সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানি মন্ত্রণালয় প্রতিদিন ৫৫১ হাজার ৮৩২ ঘনমিটার পানি শোধন করার সক্ষমতা যুক্ত করেছে।
২. পানীয় ও অ-পানীয় জলের পৃথকীকরণ: নিরাপদ পানীয় জলের ঝুঁকি কমাতে এবং সহজ নিয়ন্ত্রণের জন্য বোতলজাত পানি ব্যবহারের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। এতে দৈনন্দিন পানীয় জলের সরবরাহ আলাদা রাখা যায়।
৩. নগরীর পানীয় জল বিতরণ ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন: মাশহাদ ও কেশমের মতো শহরে পরীক্ষামূলকভাবে সেন্সরযুক্ত স্মার্ট নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে, যা পাইপলাইনের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে পানির ব্যবহার ২৫% এবং পাম্পিং এনার্জির ব্যয় ৩০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে, সেবার মান অপরিবর্তিত রেখেই।
৪. স্মার্ট মিটার স্থাপন: স্মার্ট মিটারগুলো তাৎক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ, অস্বাভাবিক ব্যবহার শনাক্তকরণ, লিকেজ নির্ণয় এবং তথ্যপ্রদানের সুবিধা দেয়। এর মাধ্যমে বেআইনি ব্যবহার ও অতিরিক্ত খরচ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. কম পানি খরচের কুলিং প্রযুক্তি: কুলারগুলোতে স্মার্ট টাইমার ও থার্মোস্ট্যাট বসিয়ে দৈনিক পানির ব্যবহার ৩০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ইরানি স্টার্টআপগুলো পুরোনো কুলারকেও উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তর করছে।
৬. ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ: চাহিদাসম্পন্ন এলাকায় কূপ থেকে পানি উত্তোলনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে ভূগর্ভস্থ জলের ওপর চাপ কমাতে বাঁধ ও অন্যান্য উৎস থেকে পানি সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে।
৭. কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক সেচব্যবস্থা: কৃষিতে পানির অপচয় রোধে আধুনিক পদ্ধতি যেমন ড্রিপ ইরিগেশন (ফোঁটা ফোঁটা সেচ) ও ভূগর্ভস্থ সেচব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।#
পার্সটুডে
.