বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কখনও থেমে যাওয়ার নয়: সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইসলামি ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনীকে (রহ.) একটি মহান বিপ্লবের রূপকার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইসলামি ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনীকে (রহ.) একটি মহান বিপ্লবের রূপকার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আজ (রোববার) তেহরানের অদূরে ইমাম খোমেনীর (রহ.) মাজারে তাঁর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সমবেত লাখ লাখ জনতার উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে একথা বলেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইমামকে ইরানের সর্বকালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের নেতাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা কিংবা বিকৃত করা সম্ভব নয়।
ইমাম খোমেনী ১৯৮৯ সালের ৪ জুন ৮৬ বছর বয়সে তেহরানের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের ১০ বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ইরানি জনগণ ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের দেশ থেকে মার্কিন-সমর্থিত স্বৈরাচারী শাহ সরকারকে উৎখাত করেছিল।
আজকের ভাষণে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আরো বলেন, দেশের জনগণের ওপর ইমাম খোমেনীর (রহ.) পরিপূর্ণ আস্থা ছিল। আর দেশের জনগণ ইসলামি বিপ্লবের পাশাপাশি ইরাক-ইরান যুদ্ধে লাখ লাখ শহীদ উৎসর্গ করার মাধ্যমে ইমামের সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ইরানি জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি ইমামের সেই আস্থার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমাদেরকে ইমাম খোমেনীর (রহ.) প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করার মাধ্যমে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আমাদেরকে ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে পথ চলতে হবে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইরানকে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, ইহুদিবাদী শক্তি ও দাম্ভিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। যতদিন বিশ্বের বুকে এসব শক্তির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এই সংগ্রাম থেমে যাওয়ার নয়। আমরা যদি কখনও এই সংগ্রামের কথা ভুলে যাই তখনই আমাদেরকে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের সকল সফলতা এই সংগ্রামের পথ ধরেই এসেছে। সর্বোচ্চ নেতা বলেন, দুঃখজনকভাবে দেশের কিছু মানুষ মনে করে, আমেরিকা বড় শক্তি বলে তার সামনে কিছুটা নতজানু না হলে টিকে থাকা যায় না।
তিনি বলেন, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই আমরা উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করেছি। কাজেই দাম্ভিক শক্তির বিরুদ্ধে কখনও নতজানু হওয়ার কথা চিন্তাও করা যাবে না।
ইরানি জনগণকে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, গত বছরের শরতে দেশে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তার পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলোর থিংক ট্যাংকগুলোতে। এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক মানুষ যারা ইসলাম এবং ইরানের শত্রু, তারা ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, এ ধরনের ষড়যন্ত্র যেমন থেমে থাকবে না তেমনি তা বাস্তবায়নের লোকেরও অভাব হবে না। কিন্তু দেশপ্রেমিক ইরানি জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। গত বছর যেমন পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়েছে ভবিষ্যতেও একইভাবে শত্রুর নতুন নতুন ষড়যন্ত্র নস্যাত করতে হবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরানে বিদ্যমান কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাকে ব্যবহার করে শত্রুরা এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সব সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সেসব সমস্যাকে ব্যবহার করে শত্রুকে তার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সুযোগ আমরাই করে দেব। আমরা সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব। কিন্তু যতদিন সমস্যা থাকে ততদিন শত্রু যেন তা ব্যবহার করে এদেশের ক্ষতি করতে না পারে। ইরানি জনগণকে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আশাবাদী থাকতে হবে। এদেশের জন্য অতি উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। এ ব্যাপারে কেউ যেন তার মনে বিন্দুমাত্র সংশয় পোষণ না করে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় মদীনায় মুনাফিকরা আল্লাহর রাসূলকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তারা ইসলামি রাষ্ট্রে শত্রুর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। নানা ধরনের গুজব রটনা করে মুসলিম যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে ঈমানদার মুসলমানরা সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। আমাদেরকে এখন সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে হবে।
এর আগে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনীর (রহ.) মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তেহরানের অদূরে বেহেশতে জাহরায় ইমামের মাজারে লাখ লাখ ইরানি নাগরিক সমবেত হন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে গত কয়েকদিন ধরে এসব মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর মুখে ভাষণ শুনতে এবং ইমামের মাজার জিয়ারত করতে তাঁর মাজারে সমবেত হতে শুরু করেন।
১৯৮৯ সালের ৪ জুন ইমামের মৃত্যুর পর প্রতি বছর তাঁর মাজারে মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়ে আসছিলেন সর্বোচ্চ নেতা। তবে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কারণে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইমামের মাজারে জনগণের এই সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ বছর আবার ইমাম খোমেনীর মাজারে সারাদেশ থেকে আগত লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটে। #
পার্সটুডে
.