• Jun 8 2025 - 07:26
  • 31
  • : 3 minute(s)

পারমাণবিক শিল্প ইরানি জাতির সম্পদ, আমেরিকাসহ অন্য কারো সাথে এর সম্পর্ক নেই: সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ি

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি পরমাণু নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সম্পর্কে বলেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক জ্বালানি চক্রের অধিকারী হওয়া জাতির জন্য গৌরবের।

পার্সটুডে- ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি পরমাণু নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সম্পর্কে বলেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক জ্বালানি চক্রের অধিকারী হওয়া জাতির জন্য গৌরবের। এটা ইরানের তরুণ বিজ্ঞানীদের "আমরা পারি"-এমন আত্ম বিশ্বাসের ফল। আজ বুধবার সকালে, ইরানে ইসলামি বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর পবিত্র মাজার প্রাঙ্গনে এক বিশাল জনসমাবেশে সর্বোচ্চ নেতা এ কথা বলেছেন।

অন্যান্য বিজ্ঞান ও শিল্পের অগ্রগতির উপর পারমাণবিক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থাপিত পারমাণবিক পরিকল্পনাকে আমাদের নীতি ও স্বার্থ বিরোধী বলে উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ছাড়া একটি বিশাল পারমাণবিক শিল্প অকার্যকর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের জানা উচিত যে পারমাণবিক শিল্প রক্ষায় ইরানকে তার মূল লক্ষ্য অর্জন থেকে কেউ বিরত রাখতে পারবে না।

পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ি বলেছেন: "তার দেশের যুবসমাজের বুদ্ধিমত্তা এবং কঠোর পরিশ্রমী বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ইরান একটি সম্পূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানি চক্রের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে বিশ্বের খুব কম দেশই এই ক্ষেত্রে ক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে।"

তিনি পারমাণবিক শিল্পের সুবিধাগুলো কেবল পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি এবং সস্তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে আরো বলেছেন: "পারমাণবিক শিল্প হচ্ছে শিল্পের জননী এবং এটা প্রধান শিল্প। বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের মতামত জনসাধারণেরও জানা উচিত আর তা হচ্ছে,  মৌলিক বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা, শক্তি প্রকৌশল, সেইসাথে চিকিৎসা সরঞ্জাম, মহাকাশ এবং গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক সেন্সরগুলোতে সংবেদনশীল প্রযুক্তি প্রভৃতি  পারমাণবিক শিল্পের উপর নির্ভরশীল।"

ইমাম খামেনেয়ি চিকিৎসা ও ওষুধ খাতে রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য পারমাণবিক শিল্পের সুবিধা, কৃষি ও পরিবেশ সম্পর্কিত শিল্পের উপর এই পরমাণু শিল্পের প্রভাবসহ আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির ব্যবহারের  কথা উল্লেখ করে বলেছেন: পারমাণবিক শিল্পে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ একটি মৌলিক এবং মূল বিষয় যা থেকে বিরত রাখার জন্য আমাদের শত্রুরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা ছাড়া বিশাল পারমাণবিক শিল্প কেন অকেজো তার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন: আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহের জন্য যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে না পারি তাহলে এই প্রযুক্তির অধিকারী এমন কারো কাছে আমাদের হাত পাততে হবে যারা আমাদের নিজস্ব তেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বলে যে আমাদের তেল শোধনাগার থাকার কিংবা পেট্রোল উৎপাদনের অধিকার থাকতে পারবে না। তারা চায় আমাদেরকে অবশ্যই সেইসব দেশের ইচ্ছা অনুযায়ী পেট্রোল কিনতে হবে।

ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং জ্বালানি উৎপাদন করা ছাড়া, ১০০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকাও অর্থহীন; কারণ এর অন্যথায় আমাদের জ্বালানি সরবরাহের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধর্ণা  ধরতে হবে এবং তারা এর জন্য কয়েক ডজন শর্ত আরোপ করবে। যেমনটি ১৯৮০-এর দশকে ২০ শতাংশ জ্বালানি নেয়ার জন্য আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তিনি বলেন, পারমাণবিক ইস্যুতে মার্কিনিদের দাবীর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই শিল্প থেকে ইরানের জনগণকে বঞ্চিত করা।

তিনি আমেরিকার জবরদস্তিমূলক এই আবদারকে ইরানি জাতির অগ্রগতি এবং উন্নতির পথে বড় বাধা বলে উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেছেন: আমরা এইসব বাস্তবতা সবার সামনে তুলে ধরছি যাতে ইরানি জাতি কিছুটা হলেও অবহিত হয় এবং কর্মকর্তাদের উচিত এ বিষয়ে জনগণকে আরো বিস্তারিত জানানো।

"মার্কিন সরকারের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ি কয়েক বছর আগে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অপরাগতা ও অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করে বলেছেন, ওই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন তিনি যদি পারতেন, তাহলে তিনি ইরানের পারমাণবিক শিল্পের যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতেন। তার ওই কথার জবাবে সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন "আজ, আমাদের পারমাণবিক শিল্পের যন্ত্রপাতি  অনেক শক্ত অবস্থানে আছে, ঠিক যেমনটি সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন স্বীকার করেন যে তিনি ইরানরে ব্যাপারে কিছুই করতে পারেননি। তাই আজকের ইসরাইল এবং আমেরিকার  জানা উচিত যে তারা ইরানকে কিছুই করতে পারবে না।

ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর পবিত্র মাজারে এক বিশাল জনসমাবেশে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আজকের বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ব্যাপক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে জোর দিয়ে বলেন: মরহুম ইমাম, ঈমান থেকে উৎসারিত বিচক্ষণতা এবং যুক্তির সাথে 'প্রকৃত স্বাধীনতা'র মৌলিক ধারণা নিয়ে বিপ্লব এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। যে পথে  ইরান অগ্রগতি, জনকল্যাণ, টেকসই নিরাপত্তা, শক্তিশালী বৈদেশিক অবস্থান এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত অর্জন করবে।

ভাষণের শেষ অংশে, সর্বোচ্চ তো ইমাম খামেনেয়ি গাজায় ইসরাইলি নজিরবিহীন অপরাধযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আমেরিকাকে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের সহযোগী বলে অভিহিত করে বলেন: এই কারণেই আমরা জোর দিয়ে বলি যে আমেরিকাকে এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হবে।

সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ি মুসলিম সরকারগুলোর গুরু দায়িত্বের  কথা তুলে ধরে বলেছেন যে আজ কেবল পর্যালোচনা, রক্ষণশীলতা, নিরপেক্ষতা এবং নীরবতা দেখানোর সময় নয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন: যদি কোনও মুসলিম সরকার ইসরাইলকে যেকোনো অজুহাতে সমর্থন করে, তাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, ফিলিস্তিনি জনগণকে সাহায্য করার পথ বন্ধ করে, অথবা ইহুদিবাদীদের অপরাধকে ন্যায্যতা দেয়, তবে তাদের নিশ্চিতভাবে জানা উচিত যে তাদের কপালে দুর্ভোগ রয়েছে। #

পার্সটুডে

Dhaka Bangladesh

Dhaka Bangladesh

.

:

:

:

: