দামেস্ক ও বৈরুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টার সফরের বার্তাগুলো
সিরিয়া ও লেবাননে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা চলতে থাকা সত্ত্বেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী লারিজানির ওই দু’টি দেশ সফর স্বাধীনতাকামীদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করেছে।
সিরিয়া ও লেবাননে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা চলতে থাকা সত্ত্বেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী লারিজানির ওই দু’টি দেশ সফর স্বাধীনতাকামীদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করেছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী লারিজানি আঞ্চলিক দেশগুলো সফরের প্রথম পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে পৌঁছান। তিনি সেখানে আঞ্চলিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে সিরিয়ার পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করেন। দামেস্ক থেকে তিনি লেবাননের রাজধানী বৈরুতে যান। পার্সটুডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, লারিজানি শুক্রবার বৈরুতে পৌঁছান এবং এটি ছিল বিগত ৪০ দিনের মধ্যে তৃতীয় কোনো শীর্ষস্থানীয় ইরানি কর্মকর্তার বৈরুত সফর।
এর আগে বিগত কয়েক সপ্তাহে ইরানের সংসদ স্পিকার মোহাম্মাদ বাকের কলিবফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি লেবানন সফর করেন। এসব সফরে দু’দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা লেবানন ও গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আলোচনা করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টার বৈরুত সফরের সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেসব বিষয় ফলাও করে প্রচার করেছে সেসবের মধ্যে রয়েছে, যখন ইহুদিবাদী ইসরাইল লেবানন শহরের বিভিন্ন স্থানে এবং ওই শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে বোমাবর্ষণ করছে তখন তিনি সাহস করে ওই বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সামাজিক মাধ্যমে লারিজানির এই সাহসিকতার প্রশংসা করে অনেকেই পোস্ট দেন এবং কমেন্ট করেন।
ইরানি এক্স ব্যবহারকারী আলী মোখতারজাদে ইরানের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তার সিরিয়া ও লেবানন সফরকে সাহসিকতার প্রদর্শন উল্লেখ করে লিখেছেন, লারিজানি বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেইন (আ.)কে নিজের আদর্শে পরিণত করতে পেরেছেন।
মোখতারজাদে লিখেছেন: যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ইরানের শান্তিকামী যোদ্ধারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কোনো ধরনের ভয় বা শঙ্কা ছাড়াই পালন করে যাচ্ছেন। একজন ইরানি কমান্ডার শহীদদের সর্দার ইমাম হোসেইন (আ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে কূটনৈতিক অঙ্গন হোক বা যুদ্ধক্ষেত্র হোক সব সময় সামনের সারিতে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
মোহেব্বি নামে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এর আরেক ইউজার তার পোস্টে যুদ্ধের সময় ইরানি ও ইহুদিবাদী রাজনীতিবিদদের আচরণের পার্থক্য তুলে ধরেন।
তিনি লেখেন: ইরানিদের অভিধানে ‘ভয়’ নামক কোনো শব্দ নেই। ইরানের পরিবর্তে ইহুদিবাদী কর্মকর্তা হলে লারিজানি ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজে বেড়াতেন। কিন্তু লারিজানি ও তার সফরসঙ্গীরা ইহুদিবাদী ইসরাইলের তীব্র বোমাবর্ষণের মধ্যেই লেবানন ও সিরিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।
দামেস্ক ও বৈরুতে লারিজানির সফরের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাসমূহ:
প্রথম বার্তা: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানি কর্মকর্তাদের বৈরুত ও দামেস্ক সফরের একটি বিশেষ বার্তা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে ইরান প্রতিরোধ অক্ষের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এক্ষেত্রে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় ইরান পিছপা হবে না।
দ্বিতীয় বার্তা: পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো বিগত মাসগুলোতে নানা ধরনের অপকৌশল অবলম্বন করে একথা বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, সিরিয়া ইরানের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে পশ্চিমা ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করছে। অথচ আলী লারিজানির দামেস্ক সফর প্রমাণ করছে, তেহরান ও দামেস্কের মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা দিন দিন ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতির ব্যাপারে দু’দেশ অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে।
তৃতীয় বার্তা: ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা লারিজানি এমন সময় বৈরুত সফরে যান যখন পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এ খবর প্রচার করে যে, লেবাননে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত দেশটির পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। বলা হচ্ছে, নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামত নিয়ে ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্তাবলী নির্ধারণ করা হয়েছে। ঠিক এরকম একটি সময়ে লারিজানির বৈরুত সফর প্রমাণ করে, ইরান প্রকৃত যুদ্ধবিরতি চায়, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধবিরতি নয়।
চতুর্থ বার্তা: বৈরুতে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট স্পিকারসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে লারিজানির সাক্ষাৎ প্রমাণ করে, পশ্চিমা ও মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর প্রচারণা সত্ত্বেও তেহরান-বৈরুত সম্পর্কে কোনো ধরনের ফাটল তৈরি হয়নি। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো গত কয়েকদিন ধরে একথা দেখানোর চেষ্টা করেছিল যে, ইরান ও লেবাননের সম্পর্কে মারাত্মক ফাটল দেখা গিয়েছে। তারা এ খবরকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য লেবাননের সংসদ স্পিকার নাবিহ বেরির কিছু বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করেছিল। খোদে বেরির পক্ষ থেকে ওই সব বক্তব্য নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
পার্সটুডে
.