• Feb 12 2024 - 12:28
  • 37
  • : 5 minute(s)

ঢাকায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৫তম বিজয়বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৫তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধরী অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৫তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মোজাফফর আহমেদ চৌধরী অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ইরানের ইসলামি বিপ্লব ও এর নয়া বার্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক।  ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইরানের আল-মুস্তাফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. আলী আব্বাসী, বাংলাদেশে অবস্থিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত জনাব মানসুর চাভূশি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান।

সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিলুদ্দিন সরকার সালেহী।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব দুনিয়ার মুসলমানের কাছে, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সমগ্র মানবতার কাছে এক নুতন দিগন্ত উন্মোচন করে। ঐতিহাসিক এই বিপ্লবের ৪ দশকের সাফল্য আজ চোখে পড়ার মতো। দশকের পর দশক ধরে চলমান নানা ষড়যন্ত্র ও কঠিন অবরোধের মধ্যেও বিশ্বের অনেক  দেশের চেয়ে দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশটি। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরান বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে শক্তিশালী অবস্থান বলে দিচ্ছে দেশটি কতটা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান, উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন নেতৃস্থানীয় দেশের তালিকায় রয়েছে ইরান।

বিশেষ করে আবিষ্কার ও উদ্ভাবন, ন্যানো প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাবমেরিন বা ডুবো জাহাজ শিল্প, এ্যারোস্পেস, সামরিক ও বেসামরিক বিমান শিল্প, কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশ সংক্রান্ত প্রযুক্তি, চিকিৎসা  এবং কৃষিতে বিশ্বসেরা ১০টি দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে আজকের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।

মন্ত্রী বলেন, ইমাম খোমেইনী (র.) এর নেতৃত্বে ইরানের ইসলামী বিপ্লব রেজাশাহ পাহলাভির দু:শাসন থেকে দেশটির জনগণকে মুক্ত করেছিল। কিন্তু এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র হয়েছে, মিথ্যাচার হয়েছে এবং এখনও এসব ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার চলছে। তবে শত্রুদ্রে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলমানদের এক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের নির্যাতিত বঞ্চিত মানুষদের পথ দেখিয়ে চলেছে ইরানের ইসলামী বিল্পব।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে অবস্থিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত জনাব মানসুর চাভূশি বলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লব দেশটিকে বিশ্বের মাঝে নতুন অঙ্গিকে তুলে ধরেছে। আলো আসলে যেমন অন্ধকার দূরিভূত হয় তেমনি সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যায়-অসত্য দূরিভূত হয়। ইরানের ইসলামী বিপ্লব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অনুষ্ঠানে আল-মুস্তাফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. আলী আব্বাসী বলেন, বস্তুবাদী চিন্তাধার উর্ধ্বে উঠে মহান আল্লাহ দেখানো পথের উপর ভিত্তি করে ইরানে ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই দেশটি আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চোখ ধাঁধানো সাফল্য অর্জন করেছে। সম্প্রতি মহাকাশে একসঙ্গে ৩টি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির প্রয়োজনীয় ওষুধের ৯৮ শতাংশ আজ নিজেরাই তৈরি করছে। ইসলামী বিপ্লবের পূর্বে ইরানের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৪ শতাংশ। বিপ্লবের পরে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে দেশটির জনগণের গড় আয়ু এখন ৮৬.৫ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীরমোহাম্মাদী বলেন,ইরানে যখন ইসলামী বিপ্লব হয় তখন সারা বিশ্বে ব্যাপক হৈচৈ পড়ে যায়। বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোর শীর্ষ খবরে স্থান পায় ইরানের ইসলামী বিপ্লব। কারণ এই বিপ্লবে নতুন বার্তা ছিল যা বিশ্বকে আকৃষ্ট করেছে। তা না হলে এই বিপ্লব সারা বিশ্বে এমন সাড়া জাগাতে পারে না। তিনি বলেন, দিন বিবর্জিত কোন মতধারা মানুষকে মুক্তি দিতে পারে না। একমাত্র সত্য ও ন্যয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত মতাবাদই মানুষকে মক্তি দিতে পারে যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ইরানের ইসলামী বিপ্লব।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ইরান  সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। ইরান এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক মিল রয়েছে। অনেক ফার্সি শব্দ বাংলা ভাষায় আমরা ব্যবহার করছি।ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই দেশটির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। শত্রুদের শত বাধা-বিপত্তী  ও  ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ইরান বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে।আজকের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সত্যিকারের একটি স্বাধীন দেশ।দেশটি কোন পরা শক্তির কাছে মাথা নত করে না। দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে পশ্চিমারা অভিযোগ করলেও প্রকৃত মানবাধিকার ইরানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে  বিপ্লবের পর থেকেই যেমন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এবং এখনো চলছে বাংলাদেশেও তেমনি বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। তবে শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও ইরান ও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে উভয়দেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আলোচনা সভায়  বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিলুদ্দিন সরকার সালেহী  বলেন, ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেইনী (র.) এর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়। পর থেকেই দেশটি বিশ্বের বৃহৎ পরাশক্তি ও তার মিত্রদের নানা ষড়যন্ত্র ও অবরোধ মোকাবিলা করে আসছে।কিন্তু শত্রুদের চাপিয়ে দেওয়া এসব অবরোধ ও কূটকৌশলের কাছে নতজানু হওয়া তো দূরের কথা, বরং খাঁটি ইসলামের অদম্য শক্তির বলে দিনকে দিন ভেতরে ও বাইরে এবং বিশ্ব-অঙ্গনে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে ইসলামি বিপ্লবের দেশ ইরান।

দেশটি আজ বিশ্বের সব স্বাধীনতাকামী জাতির জন্য উন্নয়নের এক রোল মডেল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ তালিকায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।  তিনি বলেন, ইরানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ইরান সফর করেছেন এবং  ইরানের প্রেসিডেন্ট হাশেমি রাফসানজানি বাংলাদেশ সফর করেছেন। এছাড়া প্রায় প্রতি বছরই দুই দেশের মধ্যে মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তা এবং শিক্ষা-সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময় হচ্ছে। ইরান-বাংলাদেশ মৈত্রী ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী ভিত রচিত হয়েছে।এবং দু’দেশের সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইরান সবসময় অসহায়, বঞ্চিত ও মজলুম মানুষের পক্ষে কথা বলে। ফিলিস্তিনিদের পাশে সব সময় রয়েছে এবং মুসলিম উম্মার যেকোন সংকটে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইরান। আমি এ দেশটিকে স্যালুট জানাই। আমি আশা করছি ইরান একদিন মুসলিম উম্মার নেতৃত্ব দিবে এবং বিশ্ব নেতৃত্বে আশীন হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ইমাম খোমেইনী (র.) যে বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করেছেন তা সারা পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে। ইমামের কোন রাজনৈতিক দল ছিল না অথচ তিনি এমন এক বিপ্লব সংঘটিত করেছেন যা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে।এই বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি এমন এক ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়েছেন যে সেই সময়ে তিনি বিশ্ব রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বে সমাসীন হয়েছিলেন।যা আমাদেরকে বিস্মিত করে, আন্দোলিত করে। তার আদর্শ, অনুপ্রেরণা আমাদেরকে নির্যাতিত, অসহায় মানুষের পক্ষে কথা বলতে. অস্পষ্টভাষী হতে সাহায্য করে। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানে অত্যন্ত সুপণ্ডিত ছিলেন এবং তার অনুসারীদেরকেও বিশ্বমানের বুদ্ধিজীবী ও পন্ডিত হিসেবে তৈরি করেছেন। ইরানের রেজা শাহ পাহলভী যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদকে তার পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করে তখন ইমাম খামেইনী (র.)এই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটির রাষ্ট্রিয় সম্পদ দেশটির জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেন। এনে দেন প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তি। তিনি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই দেশটির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চলে আসছে। অথচ  এই বিপ্লব খাঁটি ইসলামী বিপ্লব হওয়ার কারণে মানুষ তা অধ্যয়ন করছে, বোঝার চেষ্টা করছে। এই বিপ্লব যে মজলুম মানুষের পক্ষে হয়েছিল, মানবতার পক্ষে হয়েছিল মানুষ  আজ তা উপলব্ধি করছে।

Dhaka Bangladesh

Dhaka Bangladesh

:

:

:

: