ঢাকায় আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস পালিত

  • : Apr 5 2024
  • : Apr 5 2024
ঢাকায় আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস পালিত

আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ ) অডিটরিয়ামে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আল-কুদ্স দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ ) অডিটরিয়ামে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী এবং বঙ্গবন্ধু গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব:) মোহাম্নদ আফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ. কে. এম বদরুদ্দোজা।

 

 

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, মুসলমানদের পবিত্র ভুমি ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসী ফিলিস্তিনীরা আজ নিজ দেশেই পরবাসী। শুধু পরবাসী বললেও ভূল হবে বরং তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে নির্মূল করতে চাচ্ছে জায়নবাদীরা।তিনি বলেন,আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস এমন সময় পালিত হচ্ছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজা উপত্যকা এবং জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নতুন করে গণহত্যা শুরু করে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাদের হামলায় ৩৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৪ হাজারেরও বেশি।এছাড়া গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদীদের এই বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনীদের সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ফিলিস্তিনে এই অল্প কয়েকমাসের মধ্যে এতো ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানীর পরও যদি বিশ্ববিবেক জাগ্রত না হয় তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।তবে ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বৃহৎ শক্তি মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রও তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে ।ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীরা যেভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাতে ফিলিস্তিনের বিজয় একদিন আসবেই।

 

 

 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার পালিত হয় আন্তর্জাতিক কুদস  দিবস। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ এবং ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদীদের আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে ও বিশ্বের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনি (রহ.)এই দিবসটি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন থেকে এ দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিন ও গাজার নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে তাদের সংহতি ঘোষণা করছে। ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে এই দিনটি বড় সুযোগ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। মুসলমানদের উচিত এই সুযোগকে সচেতনভাবে উপলব্ধি করা  এবং সমস্যার সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

 

অনুষ্ঠানে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আরব ইসরাইল যুদ্ধে বিজয়ের পর থেকে ইহুদিবাদীসেনারা নিজেদেরকে অপরাজেয় শক্তি মনে করতো।কিন্তু ইসরাইলে হামাসের সাম্প্রতিক অভিযান তাদের দম্ভকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে।  ইমাম খোমেনী ( রহ.) আল কুদস দিবস ঘোষণা করে একটা যুগান্তকারী কাজ করে গিয়েছেন। এই দিবস পালনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের ফিলিস্তিনীদের প্রতি সংহতি প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিবস ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধ আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে।

 

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী বলেন,  এই বছরের  আন্তর্জাতিক কুদস দিবস অন্যান্য বছরের তুলনায় একেবারেই অন্যরকম। কেননা, এ বছর ফিলিস্তিনে মানবতার যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে, ইতিহাসের ভয়াবহতম ও নৃশংসতম গণহত্যা চলছে, তা আমাদের হৃদয়কে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত করে তুলছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ বেসামরিক জনগনের উপর জায়নবাদী আগ্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান এই আক্রমণ ও গণহত্যা অভিযান থেকে আমরা দুটি জিনিস দেখতে পাচ্ছি- তাহলো এমন ভয়াবহতার মুখেও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর আশ্চর্যজনক নীরব ভূমিকা । আর এর বিপরীতে এমন নৃশংসতম জুলুমের মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের অবিশ্বাস্য ঈমানী দৃঢ়তা এবং প্রতিরোধ।” তারা আরো বলেন, “বর্তমানে ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ও রাষ্ট্রের মৌলিক, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক দায়িত্ব। আর মুসলিম হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্র ও জাতিগুলোর ওপর এই দায়িত্ব আরো বেশি।’

 

 

 

ইমাম খোমেনি (রহ.) এই দিনটিকে ইসলামি দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার এই ঘোষণার কারণেই আজ আল-কুদস দিবস একটি বৈশ্বিক রুপ পেয়েছে। আনন্দের বিষয় হলো- আজ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পশ্চিমা দেশগুলোতেও ব্যপক গণজাগরণ, বিক্ষোভ ও মিছিল দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ মানবিকতকর দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। ইসরায়েল ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশাবাদী এভাবেই একসময় এই নির্যাতক জুলুমকারী রাষ্ট্রের পতন ঘটবে ও ফিলিস্তিন ও আল কুদস আবার স্বাধীন হবে। আর ফিলিস্তিনের এই পথচলায় গত ৪০ বছর ধরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তাদের পাশে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে।

 

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল-কুদ্স কমিটি বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তাফা আবুল উলায়ী বলেন, মুসলিম বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে ফিলিস্তিন বিষয়ে ইরানকেই সবচেয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।ইরান গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিন নিয়ে যেসব কথা বলছে ও বলে আসছে যেগুলো মুসলিম উম্মাহরই কথা। মুসলিম বিশ্বের সব রাষ্ট্র সেভাবে মন খুলে কথা বলতে পারছে না। কিন্তু ইরান তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্ত অবস্থানের কারণে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সব কথা বলতে পারছে।আল কুদস কমিটির পক্ষ থেকে আমরাও বাংলাদেশের মানুষকে ফিলিস্তিনের পক্ষে আরো বেশি সচেতন করার ও ঐক্যবদ্ধ করার  চেষ্টা করছে। যদিও আমাদের এই চেষ্টা যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে আরো বেশি কাজ করতে হবে।তিনি বলেন,  কোন জালেমই চিরস্থায়ী নয়৷ মজলুম ফিলিস্তিনীরা যেভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাতে সম্রাজ্যাবাদের মদদপুষ্ট জায়নবাদীদের একদিন পতন হবেই।।

 

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর ( অব) আফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই ফিলিস্তিনীদের পাশে রয়েছে।’বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। ইয়াসির আরাফাত বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।  হামাসসহ ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা যে গণসংগ্রাম করছে সেই গণসংগ্রামের ভাষা ও প্রকৃতি বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো। বাংলাদেশের সরকার ও এদেশের জনগণ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।

 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন,’ইহুদিরা ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্র  নয়।  ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্যে মুসলিম উম্মার ঐক্য যে কোন মূল্যে জরুরী। তিনি বলেন, বিশ্ব আল কুদস দিবস ফিলিস্তিনের স্বধীনতার পক্ষে বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে আসছে।

:

:

:

: