ঐক্য সপ্তাহ শুরু- শিয়া-সুন্নি অভিন্ন, ঐক্যের মাধ্যমেই মুসলমানদের সমস্যার সমাধান সম্ভব
ইরানের বুকান শহরের জামে মসজিদের সুন্নি ইমাম মোল্লা আব্বাস আহমাদি ইসলামী ঐক্য সপ্তাহকে ইসলামী বিপ্লবের বড় অবদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ইরানের বুকান শহরের জামে মসজিদের সুন্নি ইমাম মোল্লা আব্বাস আহমাদি ইসলামী ঐক্য সপ্তাহকে ইসলামী বিপ্লবের বড় অবদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি গতকাল জুমার খুতবায় আরও বলেছেন, ঐক্য সপ্তাহ ইসলামি বিপ্লবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দান, যা শুধু ইরান নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ, সচেতনতা ও শক্তির প্রতীক। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইমাম জাফর সাদিক (আ.)–এর জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে তিনি আরও বলেন, ঐক্য সপ্তাহ মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বকে দৃঢ় করেছে এবং শত্রুর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টি করেছে।
কোরআনে ঐক্যের নির্দেশনা
পবিত্র কোরআন সকল মুসলমানের প্রতি ঐক্যের ডাক দিয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-“আর তোমরা সকলে আল্লাহ্র রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমর তো অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা হেদায়াত পেতে পার।"
এই আয়াত মুসলিম ভ্রাতৃত্বের চিরন্তন ভিত্তি—ঐক্য আল্লাহর অনুগ্রহ, বিভক্তি তাঁর অবাধ্যতা।
ঐক্য সপ্তাহ কী?
ঐক্য সপ্তাহ হলো ১২ রবিউল আউয়াল (সুন্নি মতে মহানবী'র জন্মদিন) থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল (শিয়া মতে মহানবী'র জন্মদিন) পর্যন্ত সময়। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনীর (রহ.) দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগে এই পাঁচদিনকে “ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ” নামে অভিহিত করা হয়।
এ উপলক্ষে ইরানে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি:
- নবীজির জন্মোৎসবের মহাসমাবেশ
- “রাসুলের ভালোবাসায় দান করি” ক্যাম্পেইন, যা অসহায় বন্দীদের মুক্তিতে সহায়তা করে
- ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশেষ প্রচারণা
- গাজায় চলমান গণহত্যার নিন্দায় আন্তর্জাতিক সেমিনার
- বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুরআন মাহফিল
- ঐক্যের গল্পকারদের বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- আন্তর্জাতিকভাবে “কাগজের সারস বানাও” আন্দোলন
- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদকজয়ী সুন্নি ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা
ইরান: ঐক্যের অগ্রদূত
ইমাম খোমেনী (রহ.) ইসলামি ঐক্যকে জীবনের লক্ষ্য করেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে ঐক্য সপ্তাহ ঘোষণা, আন্তর্জাতিক ঐক্য সম্মেলনের সূচনা এবং বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর নেতৃত্বে ইসলামী মাযহাব ঐক্য পরিষদ প্রতিষ্ঠা— এ সবই প্রমাণ করে যে, ইরান মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত ঐক্যের বার্তাবাহক। প্রতি বছর তেহরানে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইসলামি ঐক্য সম্মেলন আজ বিশ্ব মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে।
ইমাম খোমেনী (রহ.) ও ইমাম খামেনেয়ীর দৃষ্টিতে ঐক্য
ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি ইমাম খোমেনী (রহ.) ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, “আমরা সুন্নি মুসলমানদের সঙ্গে এক ও অভিন্ন; আমরা সবাই মুসলমান এবং পরস্পরের ভাই। যদি কেউ এমন কোনো কথা বলে যা আমাদের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, তাহলে বুঝবেন তারা হয় অজ্ঞ, নয়তো এমন লোক যারা মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ বাধাতে চায়। শিয়া-সুন্নি প্রসঙ্গ আসলেই কোনো বিষয় নয়; আমরা সবাই একে অপরের ভাই।”
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ী ইসলামী ঐক্যকে শত্রুর মোকাবিলায় কৌশল হিসেবে না দেখে ইসলামের মূলনীতি হিসেবে গণ্য করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন: “ঐক্যকে কখনো কেবল কৌশল হিসেবে দেখা উচিত নয়; ঐক্য ইসলামের মৌলিক নীতি।”
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সমস্যাগুলোর একমাত্র নিরাময়কারী পথ হলো মুসলিমদের ঐক্য।#
পার্সটুডে
.