ঢাকায় হযরত আলী (আ)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন
আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানী ঢাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার রাজধানী ঢাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।আঞ্জুমানে মুমিনীন বাংলাদেশ- এর উদ্যোগে রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীর মোহাম্মদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দিন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. আব্দুল কুদ্দুস বাদশা এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন তালুকদার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীর মোহাম্মদী বলেন, ‘হযরত আলী (আ.)হলেন ইসলামের ভারসাম্যকারী। আলী সত্যের সাথে ও সত্য আলীর সাথে- এটি স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস। এ হাদীস থেকেই বোঝা যায় দ্বীনে ইসলামে হযরত আলী (আ)-এর মর্যাদা ও স্থান কতটা উঁচুতে। একজন মানুষের মধ্যে যতগুলো ভালো গুণের সমাবেশ ঘটা সম্ভব, তার প্রত্যেকটিরই সমাবেশ ঘটেছিলো হযরত আলী আলাইহিস সালামের মধ্যে।’ তিনি আরো বলেন- ‘আজকের এই দিনে যদি হযরত আলী (আ) বেঁচে থাকতেন, তাহলে সবার আগে ফিলিস্তিন ও ইয়ামেনের নির্যাতিত মুসলিম জাতিসহ সারা বিশ্বের মজলুম জনতার স্বার্থে সবার আগে এগিয়ে যেতেন। সুতরাং, আমরা যারা নিজেদেরকে মওলা আলীর আশেক দাবি করি, আমাদেরও উচিত হবে তার আদর্শকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করে নিপীড়িত মজলুম জাতির সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া।’ তিনি হযরত আলীর জ্ঞানের যোগ্যতা ও তার চরিত্রের ন্যায়পরায়ণতার দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং সকলকে তা থেকে শিক্ষা নেয়ার এবং নিজ জীবনে সেগুলো চর্চা করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দিন তার বক্তব্যে আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত আলী (আ)-এর রাসুলপ্রেমের অনন্য নিদর্শনের দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন- ‘স্বয়ং আল্লাহর রাসূল ঘোষণা করেছেন যে তিনি জ্ঞানের শহর এবং হযরত আলী হচ্ছেন তার প্রবেশ পথ। এই হাদীসটি নিয়ে মাযহাব ও ফির্কাভেদে কোন মতভেদ নেই । মুসলিম মাত্রই এই হাদীসটি পূর্ণরূপে স্বীকার করে। আজকে আমরা যারা এই সভায় উপস্থিত আছি, তারা প্রত্যেকেই এক একজন মুবাল্লিগ। আমরা নিজেরা মওলা আলীর রাসূলপ্রেম ও দ্বীনদারিতার সেই সর্বশ্রেষ্ঠ চেতনায় নিজেরা সমৃদ্ধ হবো এবং তাঁর জীবনের সত্যকথনগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, বংশ-বংশান্তরে ছড়িয়ে দিবো, ইনশাআল্লাহ।’
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. আব্দুল কুদ্দুস বাদশা তার বক্তব্যে হযরত আলী (আ)-এর জন্মের ঘটনাটিকে প্রথম নবী হযরত আদম (আ) এবং মুসলিম জাহানের অন্যতম নবী হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মের ঘটনার মতো বিশেষ ও নজির সৃষ্টিকারী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন- ’পরিপূর্ণভাবে বস্তুবাদ ও ভোগবাদে ডুবে যাওয়া তৎকালীন মুসলিম সমাজকে নাড়া দিতেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মাওলা আলীর জন্মের ঘটনাটিকে তার অশেষ কুদরতের মাধ্যমে এমন বিশেষ রূপ দিয়েছিলেন।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন তালুকদার। তিনি অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় মওলা আলী-র প্রতি মুসলিমদের ভালোবাসার বিষয়গুলো প্রকাশ করেন। ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বলেন, ‘হযরত আলী (আ) হলেন মওলুদে কাবা ও শহীদে মেহরাব। অর্থাৎ, তাঁর জন্ম ও মৃত্যু উভয়ই মসজিদে। তিনি পৃথিবীর একমাত্র সৌভাগ্যবান মানুষ যার জন্ম আল্লাহর ঘর নামে খ্যাত পবিত্র কাবা শরীফে।’ তিনি তার বক্তব্যে হযরত আলী আলাইহিস সালামের চরিত্রের বিভিন্ন আকর্ষণীয় মানবিক গুণাবলির দিকগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. আশিফুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী আলমগীর হোসেন। এতে আগত দর্শক-শ্রোতাদের জন্য আয়োজন ছিলো মওলা আলী-কে নিয়ে রচিত মনোমুগ্ধকর ক্বাসীদার। অতিথিদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে মেহরাজ মিঠু, লিটন হাফিজ, নুরুল মুনীরের মতো দরাজ কণ্ঠের শিল্পীর মনোমুগ্ধকর ক্বাসীদা পরিবেশনা দর্শকদের হৃদয়কে আলী প্রেমে বিভোর করে তুলেছিলো।
.