ঢাকায় ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ইমাম খোমেইনী (রহ.) এবং নয়া ইসলামী সভ্যতা বিনির্মাণে ক্ষেত্রে প্রস্তুতি ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীরমোহাম্মাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সদস্য সচিব ও কিউরেটর জনাব নজরুল ইসলাম খান এবং আল-মুস্তাফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দিন মাশায়েখি রাদ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নাজির মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো এর ‘সর্বমানবিকতা।’ মানবতা ২ ধরনের। একটি আধ্যাত্মিক, অন্যটি সেক্যুলার। ইমাম খোমেনী ছিলেন আধ্যাত্মিক মানবিকতার শ্রেষ্ঠ রুপকার। তিনি প্রকৃত অর্থেই একটি নতুন ‘ইসলামিক সভ্যতা’র গোড়াপত্তন করেছিলেন। সমগ্র বিশ্বজুড়ে আজ যেই দ্বিধাবিভক্তি আর অপক্ষমতার চর্চা চলছে, তার বিপরীতে ইসলামি সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে আঁকড়ে ধরে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। আর এর ভিত্তি রচিত হয়েছে ইমাম খোমেনীর মত একজন দূরদর্শী, প্রজ্ঞাবান এবং ধার্মিক রাজনীতিবিদের কারণে। শুধু মুসলিম নয়, তিনি সকল নিপীড়িত জাতি ও মানবতার জন্য কাজ করেছেন বলেই ইরানের গন্ডি ছাড়িয়ে আজ তিনি বিশ্বনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার দেখানো আদরর্শের পথ ধরে আজ আমাদেরকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং মানবতাবাদী আধ্যাত্ম দর্শনের চর্চা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল-মুস্তাফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম শাহাবুদ্দিন মাশায়েখি রাদ বলেন, বিশ্বজুড়ে ইমাম খোমেনীর সবচেয়ে বড় পরিচিতি ইসলামি বিপ্লবের নেতা হিসেবে। বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লবের সাথে এই বিপ্লবের মিল হলো অন্যান্য বিপ্লবের মতই এটি একটি জাতিকে জালিম শাসকের হাত থেকে মুক্তি দান করেছে। কিন্তু যেখানে ইরানের ইসলামি বিপ্লব অন্যান্য বিপ্লবের চেয়ে আলাদা ও অনন্য সেটি হলো এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা। রাসূল (স.)-এর হাত ধরে যে ইসলামের শুভ সূচনা ঘটেছিলো, দূর্ভাগ্যজনকভাবে তা তার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো। রাসূল (স.) শুধু মুসলমান নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস কররেতন মানুষের শত্রু শুধু শয়তান, অপর কোন মানুষ নয়- তারা খ্রিষ্টান, ইহুদী বা অন্য যাই হোক না কেনো। ইমাম খোমেনী ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে ইরানের জন্য রসূলের এই মতাদর্শকেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তাই ইরান তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সকল মজলুম জাতির প্রতি, তারা ইসলামের যে মাজহাবেরই হোক বা অন্য যেকোন ধর্মের।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সদস্য সচিব ও কিউরেটর জনাব নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রত্যেকটি মানুষের জন্ম যেখানে হয়, যেখানে সে বেড়ে ওঠে আর যে পরিবারে সে বেড়ে ওঠে, সেই পরিবারের শিক্ষা, পরিবেশের বৈশিষ্ট্য তার ব্যক্তিত্ব গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে। ইমাম খোমেইনীর জন্ম মধ্য ইরানের খোমেইন শহরে। শহরটি এমন স্থানে অবস্থিত, যার আশেপাশের অঞ্চলে সুমেরীয় সভ্যতার মতো প্রাচীন সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিলো। একটি সভ্যতার গোড়াপত্তন করতে এবং বিকাশ ঘটাতে যেই গুণাবলীর প্রয়োজন হয়, আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী সেগুলো জন্মসূত্রেই পেয়েছিলেন। বর্তমান পশ্চিমা বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলোতে আমরা তাঁর সম্পর্কে বা ইরান ও ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে শতভাগ নির্ভুল তথ্য পাই না। তাই ইমাম খোমেনীর মত একজন বিশ্বনন্দিত জননতোর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে এ ধরনের সেমিনার ও আলোচনা সভা আরো বেশি আয়োজন করা উচিত। আর সচেতন বিশ্বনাগরিক হিসেবে আমাদেরকেও ‘লজিক্যাল থিংকিং’ বা যৌক্তিক চিন্তাভাবনার চর্চা আরো বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীরমোহাম্মাদী বলেন, হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ছিলেন একজন নজিরবিহীন ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং তার নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লবটিও একটি নজিরবিহীন ও শ্রেষ্ঠ বিপ্লব। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন তা হলো ইসলামি সভ্যতার বিকাশ, যা ইমাম খোমেইনি তাঁর ‘নিখাদ ইসলাম’-এর চর্চার মধ্য দিয়ে সূচনা করে গিয়েছেন। আর এই চর্চাকে বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে দেয়ার যে কাঙ্খিত লক্ষ্য নিয়ে মুসলিম উম্মাহ কাজ করছে, তার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে আগে দুটি বিষয় অর্জন করতে হবে। এক- ইসলামের পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখা, দুই- একতাবদ্ধ হওয়া। কিছু সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা সত্তেও ইরান সে পথেই অগ্রসর হচ্ছে। কেননা এর আসলে কোন বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা বলেন, ইমাম খোমেইনী (রহ.) ইরানের ইসলামি বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বিশ্বসভ্যতার অন্যতম লালনভূমি ইরানে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী পাহলভী বংশের স্বৈরাচারী শাসনকে উৎখাত করেন। ইমাম খোমেইনি আজীবন সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি ছিলেন একজন আপোসহীন সংগ্রামী পুরুষ, যিনি সকল শোষণ ও অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বক্তারা আরো বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব দুনিয়ার মুসলমানের কাছে, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সমগ্র মানবতার কাছে এক নুতন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
.