• Oct 26 2023 - 08:44
  • 46
  • : 3 minute(s)

জিয়ারতকারী ও পর্যটকদের কাছে যেকারণে জনপ্রিয় গন্তব্য ইরানের মাশহাদ

ইরানের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর মাশহাদ। শহরটি ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইরানের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর মাশহাদ। শহরটি ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়। মাশহাদ মূলত খোরাসান-ই রাজাভি প্রদেশের রাজধানী। এটি উত্তর-পূর্ব ইরান এবং তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।

মাশহাদ একসময় প্রাচীন সিল্ক রোড বরাবর প্রধান মরূদ্যান শহর ছিল। আফশারিদ রাজবংশের সময় এটি ইরানের রাজধানীও ছিল। মাশহাদ ইরানের সবচেয়ে বিখ্যাত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ এই শহরে বেড়াতে আসেন।

মাশহাদে প্রচুর বিলাসবহুল হোটেল, ঐতিহ্যবাহী হোটেল এবং অপেক্ষাকৃত সস্তা হোটেল গড়ে ওঠায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা খুব সহজেই শহরটিতে অবকাশ যাপন করতে পারেন।

ইমাম রেজার পবিত্র মাজার

মাশহাদ শহরে ইমাম রেজার (আ.) মাজারটি ইরানি-ইসলামিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।  এই মাজারটি আহলে বাইতের অষ্টম ইমামের সমাধি। ইমাম রেজার (আ.) মাজার একটি সুন্দর এবং প্রশান্তির স্থান। বিদেশি এবং ইরানি জিয়ারতকারীরা সবসময়ই এখানে ভিড় জমান।

মাজারটি একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক স্থান ছাড়াও স্থাপত্য শিল্পের দিক থেকেও অত্যন্ত সুবিশাল এবং অনুকরণীয়। এটি বেশ কয়েকটি প্রাঙ্গণ নিয়ে গঠিত এবং এর টাইলিং এবং সাজসজ্জার সৌন্দর্য প্রতিটি জিয়ারতকারীর নজর কাড়ে।

কুহ সাঙ্গি পার্ক

কুহ সাঙ্গি পার্ক মাশহাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্ক (মেল্লাত পার্কের পরে)। এই পার্কটি মাশহাদের দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং কুহ সাঙ্গি স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। উঁচু পাহাড়ের ধারে কুহ সাঙ্গি পার্ক তৈরি করা হয়।

এই জায়গাটি মাশহাদের প্রাচীনতম এবং অন্যতম বিখ্যাত বিনোদন কেন্দ্র। ইরানের সবচেয়ে সুন্দর পার্কগুলির মধ্যেও এটি একটি। এই পার্কটি জল, পাথর, সবুজ এবং আলোর সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয়েছে।

কাঙ গ্রাম

কাঙ গ্রামটি বিনালাউদ পর্বতের পাদদেশে তারকাবে থেকে ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং মাশহাদ থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হাজার বছরেরও প্রাচীন গ্রামটি ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক গ্রামটি এখন ইরানি এবং বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

নাদির শাহ আফসারের সমাধি

একদিকে নাদের শাহের সমাধির দুর্দান্ত স্থাপত্য। অন্যদিকে রয়েছে নাদেরি মিউজিয়াম। এই দুই স্থাপনা মিলে কমপ্লেক্সটিকে মাশহাদের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণে পরিণত করেছে।

জাদুঘর ভবনটিতে আকর্ষণীয় স্থাপত্য, ঐতিহাসিক এবং মূল্যবান বস্তু যেমন বিভিন্ন যুগের অস্ত্র রয়েছে। নাদির শাহ আফসারের সমাধি মাশহাদে অবস্থিত।

সর্বোপরি এই জাদুঘর এবং সমাধিটি অবস্থিত একটি সুন্দর বাগানে। দৃষ্টিনন্দন বাগান এলাকাটির আকর্ষণকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

দারুগে ঐতিহাসিক বাড়ি

মাশহাদের দারুগে ঐতিহাসিক হাউজটি একটি দর্শনীয় বাড়ি এবং এটি ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান। এটির সুন্দর প্রাচ্য স্থাপত্য সহ একটি দুর্দান্ত কাঠামো রয়েছে যা ইরানি এবং রুশ স্থাপত্যের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে।

কাজার আমলের এই বাড়িটির আয়তন ১১শ বর্গ মিটার। আকর্ষণীয় বাড়িটি রাস্তার স্তর থেকে প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থিত। দারুগে বাড়ির উঠানে একটি সুন্দর পুকুর এবং দুটি ছোট বাগান রয়েছে, যা নজর কাড়ে পর্যটকদের।

ওয়াটার ওয়েভস ল্যান্ড

ওয়াটার ওয়েভস ল্যান্ড মাশহাদের দেখার মতো জায়গাগুলির মধ্যে একটি। ২০০৬ সালে এটি চালু করা হয়৷ এই পার্কটি ইরানের প্রথম ওয়াটার পার্ক৷ প্রতিষ্ঠার সময় এটি ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ইনডোর ওয়াটার পার্ক ছিল।

কমপ্লেক্সটির আয়তন আট হাজার ৫০০ বর্গমিটার। এতে নারী ও পুরুষদের জন্য দুটি পৃথক বিভাগ রয়েছে।

ওয়াটার ওয়েভস ল্যান্ড ইরান এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা ওয়াটার পার্ক যেখানে বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।

ফেরদৌসির সমাধি

ইরানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ফেরদৌসির সমাধিস্থল অন্য রকম তাৎপর্য বহন করে। এই মহামূল্যবান কবি তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টায় ফারসি ভাষা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হন।

ফেরদৌসির সমাধি মাস্টার মোহাম্মদ রেজা শাজারিয়ান (মহান ইরানী গায়ক) এবং বিখ্যাত ইরানি কবি আখাওয়ান সেলসের সমাধির কাছে একটি বাগানে অবস্থিত।

স্যুভেনির (স্মৃতিচিহ্ন)

ইরানের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় শহর হিসেবে মাশহাদের নিজস্ব স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভোজ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে সহজ কারুশিল্প। মাশহাদের সেরা স্যুভেনিরগুলি হল: জাফরান, বারবেরি, বাদাম, জেলি বিন, ফিরোজা, মিষ্টি, ক্যান্ডি, নাবাত, সুগন্ধি, সিল এবং প্রার্থনার গালিচা ও জপমালা।

জাফরান

জাফরান একটি সুন্দর, রঙিন, এবং সমৃদ্ধ ভেষজ। ইরানে এটি চাষের ইতিহাস প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।

ইরানের রাজাভি এবং দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহরে, বিশেষ করে গায়েনাতে এই মূল্যবান উদ্ভিদ চাষ হয়। মাশহাদেও প্রচুর পরিমাণে জাফরান চাষ হয়। আপনি মাশহাদে এই লাল সোনা কিনতে পারবেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের জাফরান বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন!

সূত্র: মেহর নিউজ

Dhaka Bangladesh

Dhaka Bangladesh

.

:

:

:

: