কোটি কোটি ইরানির অংশগ্রহণে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়-বার্ষিকী পালনের নানা বার্তা
ইসলামী ইরানের কোটি কোটি মানুষ আজ দেশটির ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে।
ইসলামী ইরানের কোটি কোটি মানুষ আজ দেশটির ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে।
রাজধানী তেহরানসহ ইরানের সব ক'টি শহর ও গ্রামের সর্বস্তরের জনগণ এই জাতীয় মহাশোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে। ছোট ও বড় ১৪০০ শহরে ও ৩৮ হাজার গ্রামে সকাল সাড়ে ন'টায় এই গণ-মিছিল শুরু হয় এবং তা শেষ হয় দুপুর ১২টার দিকে।
রাজধানী তেহরানে মিছিলকারীদের মূল সমাবেশ-স্থলটি ছিল আজাদি স্কোয়ার। এখানে সমবেত লাখ লাখ জনতার উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি বলেছেন, ইসলামী বিপ্লবের ৪৫ তম বিজয়-বার্ষিকীর মিছিলে জাতির সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক জনগণের উপস্থিতি এই বার্তা তুলে ধরেছে যে জনগণ কাজে-কর্মে ও মাঠে-ময়দানে সক্রিয় রয়েছে, তাই জাতির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরকেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আগের চেয়েও বেশি সক্রিয় থাকতে হবে। এবারের এই জাতীয় শোভাযাত্রায় তরুণ ও যুব সমাজের অংশগ্রহণ অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
আজ হতে ৪৫ বছর আগে ১৯৭৯ সালের এই দিনে ইরানে ইসলামী বিপ্লব চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র অর্জনের যে লক্ষ্য নিয়ে ইরানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট রায়িসি উল্লেখ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট হুজ্জাতুল ইসলাম ডক্টর রায়িসি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক ইস্যু তথা ফিলিস্তিনি প্রসঙ্গে বলেছেন, আজ যারা পাশ্চাত্য, মার্কিন সরকার ও ইসরাইলি শাসক-চক্রকে চিনতে চান তাদের জন্য গাজার দিকে দৃষ্টি দেয়াই যথেষ্ট, প্রতিরোধের মহাশক্তি ও অতুলনীয় বীরত্বের সাক্ষ্য আজকের গাজায় যেসব যুদ্ধ-অপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও শিশুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চলছে সেদিকে দৃষ্টি দেয়াই যথেষ্ট হবে।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, মার্কিন সরকারসহ পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরাইলের এইসব অপরাধের সহযোগী, এরা যদি স্রস্টায় বিশ্বাসী হয় তবে স্রস্টার কাছে, যদি বিবেকে বিশ্বাসী হয় তবে বিবেকের কাছে এবং যদি ইতিহাসের প্রতি বিশ্বাসী হয় তবে ইতিহাসের কাছে কি জবাব দেবে?
তিনি অবিলম্বে গাজার মজলুম জনগণের ওপর বোমা বর্ষণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ইসরাইলের ধ্বংস অনিবার্য, ইসরাইল তার ধ্বংসকে কিছুদিনের জন্য ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু এর মৃত্যু সন্নিকটে।
প্রেসিডেন্ট রায়িসি গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বর্ণবাদী ইসরাইল এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চারশ' ইশতেহার, প্রস্তাব ও ঘোষণা লঙ্ঘন করেছে। তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব ও নীতিমালা মানে না। তাই অবৈধ দখলদার ইসরাইলের সদস্যপদ বাতিল করতে তিনি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
আজকের ইসলামী ইরানের এই জাতীয় উৎসব একযোগে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশের ১৪০টি স্থানে উদযাপন করা হচ্ছে এবং ৭ হাজার ৩০০'রও বেশি দেশি বিদেশী সাংবাদিক এবং চিত্রগ্রাহক ও প্রামাণ্য চিত্র নির্মাতা এই উৎসবের সংবাদ ও নানা দিক তুলে ধরার কাজ করছেন।
ইরানের আজকের গণ-মিছিলের প্রধান শ্লোগান ছিল মার্গবর অমরিকা ও মার্গবর ইসরাইল তথা আমেরিকা ও ইসরাইল ধ্বংস হোক।
ইরানের আজকের জাতীয় গণ-মিছিলে সর্বস্তরের কোটি কোটি জনতার উপস্থিতি ইসলামী বিপ্লব এবং এই ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য ও অঙ্গীকারের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করল।
ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান যে নানা ক্ষেত্রে চোখ-ধাঁধানো নানা সাফল্য অর্জন করেছে তাও বিশ্বের পর্যবেক্ষক মহলের কাছে মহা-বিস্ময় হয়ে আছে। পরমাণু ও মহাকাশ প্রযুক্তিসহ সামরিক ও বেসামরিক নানা ক্ষেত্রে এইসব সাফল্য ইরানের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতিরই অন্যতম প্রধান সুফল। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবে গোটা পশ্চিম এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিকামী জাতিগুলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মোকাবেলায় প্রতিরোধের সংস্কৃতির অনুরাগী হয়ে পড়ছে। মানব-উন্নয়নের দিক থেকেও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সাফল্য বেশ লক্ষণীয়। ১৯৭৯ সালে মানব-উন্নয়নে ইরানের অবস্থান ছিল বিশ্বে ১৮২ টি দেশের মধ্যে ১১০ নম্বরে, বর্তমানে বিশ্বের ১৯১টি দেশের মধ্যে এক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান ৭৬ এ উন্নীত হয়েছে। বিপ্লবের আগে ইরানে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৭ শতাংশ বর্তমানে তা ৯৭ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় বর্তমানে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ১৬ তম।
ইসলামী ইরানের ওপর আট বছরের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও পাশ্চাত্যের সবচেয়ে কঠোরতম অজস্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি এইসব সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। #
পার্সটুডে