এক বছরে ইরানের ৭ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ; তৈরি হচ্ছে আরও ২০ স্যাটেলাইট
ইরানের মহাকাশ শিল্পের জন্য গত ফার্সি বছর ১৪০২ ছিল সাফল্যে ভরপুর।
ইরানের মহাকাশ শিল্পের জন্য গত ফার্সি বছর ১৪০২ ছিল সাফল্যে ভরপুর। গত ফার্সি বছরটি ২১ মার্চ ২০২৩-এ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ১৯ মার্চ ২০২৪ এ। এই এক বছরে মহাকাশে ৭টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে ইরান। সদ্য শুরু হওয়া নয়া ফার্সি বছরে ২০টি উপগ্রহের পাশাপাশি কয়েকটি মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ফার্সি বছরে ইরানের সর্বোচ্চ মহাকাশ পরিষদে মহাকাশ শিল্পের ১০ সালা পরিকল্পনা পাস হয়েছে। এছাড়া, মহাকাশ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা বেড়েছে গত বছর। চাবাহার এলাকায় ইরানের সর্ববৃহৎ মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। শহীদ সোলাইমানি স্যাটেলাইট সিস্টেমের নির্মাণ কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। ইরানের মহাকাশ শিল্পের বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা এক বছরে এসব বড় বড় কাজে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। এ কারণে গত ফার্সি বছরকে এ ক্ষেত্রে বড় ধরণের অগ্রগতির বছর বলা যেতেই পারে।
গত সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর কক্ষপথে নুর-৩ ইমেজিং স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। কাসেদ নামক রকেটের মাধ্যমে এই উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয় এবং তা ভূপৃষ্ঠের ৪৫০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করে এই স্যাটেলাইট পরিমাপ ও নজরদারি মিশন পরিচালনা করছে। নূর-থ্রি স্যাটেলাইট প্রতি সেকেন্ডে ৭.৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় এবং মাত্র ৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে তা পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়।
ইরান সফলভাবে নতুন বায়ো-স্পেস ক্যাপসুল মহাকাশে পাঠিয়েছে। নিজেদের তৈরি লঞ্চার 'সালমান' এর সাহায্যে এটি পাঠানো হয়েছে। ইরানের বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অ্যারোস্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই ক্যাপসুলটি নির্মাণ করেছে। এটিকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় পাঠাতে ব্যবহার করা হয়েছে 'সালমান' লঞ্চার। ক্যাপসুল ও লঞ্চার উভয়ই তৈরি করেছে ইরানি বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্যে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে বায়ো-স্পেস ক্যাপসুল উৎক্ষেপণ করা হয়। মহাকাশে মানুষ বা জীবন্ত প্রাণী আনা-নেয়ার কাজে বায়ো-স্পেস ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে ২০১০ সালে ইরান একটি 'কাভেশগার' বা এক্সপ্লোরার নামক ক্যারিয়ার ব্যবহার করে মহাকাশে জীবন্ত প্রাণীসহ প্রথম বায়ো-ক্যাপসুল পাঠায়। এরপর এ সংক্রান্ত তৎপরতায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। বায়ো-ক্যাপসুল পাঠানোর মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তেহরান শিগগিরই নতুন প্রজন্মের বায়ো-ক্যাপসুলগুলোর সাব-অরবিটাল পরীক্ষা চালাবে। ইরান যে বায়ো ক্যাপসুলটি পাঠিয়েছে তা একজন মানুষকে বহন করার ক্ষমতা রাখে।
গত জানুয়ারিতে ইরান স্যাটেলাইট বহনকারী রকেট কায়েম-১০০ এর সাহায্যে সুরাইয়া নামক একটি স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করতে সক্ষম হয়। এই স্যাটেলাইটটি এখন পর্যন্ত ইরানের উৎক্ষেপণ করা স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে । ইরানের স্যাটেলাইট বহনকারী রকেট কায়েম-১০০ হচ্ছে তিন ধাপের সলিড ফুয়েল পরিচালিত রকেট, যা ১০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে এবং তৃতীয় পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে কক্ষপথে আনুমানিক ৫০ কেজি ওজনের সুরাইয়া স্যাটেলাইটকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার ওপরে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সফল উৎক্ষেপণকে মহাকাশে আরও বেশি উচ্চতায় ইরানের স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় ধরণের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুরাইয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কয়েক দিন পরই আরও এক বড় সাফল্য পায় ইরানের মহাকাশ শিল্প খাত। প্রথম বারের মতো ইরান একযোগে তিনটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়। স্যাটেলাইটগুলো দুই ধাপে সিমোর্গ স্যাটেলাইট ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বহন করা হয় এবং সেগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে ৪৫০ কিলোমিটার উপরে কক্ষপথে স্থাপিত হয়। এই তিনটি স্যাটেলাইটের একটি হচ্ছে মাহদা। এটি তুলনামূলক ভাবে বড়। অন্য দু'টি স্যাটেলাইটের নাম কেইহান-২ এবং হাতেফ-১। এগুলো ন্যানো স্যাটেলাইট।
ইরান সর্বশেষ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে এক মাসেরও কম সময় আগে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে পার্স-১ নামের গবেষণা স্যাটেলাইট রাশিয়ার ভোস্টোচনি কসমোড্রোম মহাকাশ কেন্দ্র থেকে সয়ুজ রকেটের সাহায্যে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ১৩৪ কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে।#
পার্সটুডে