ইরানে কি নারী পুরুষের সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা রয়েছে
ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর পশ্চিমা কিছু দেশ এমনভাবে বলার চেষ্টা করেছিল যে ইরানি নারীরা নির্যাতিত।
.jpeg)
ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর পশ্চিমা কিছু দেশ এমনভাবে বলার চেষ্টা করেছিল যে ইরানি নারীরা নির্যাতিত।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইরানি সমাজে নারীর অবস্থান বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিগত মৌলিক পরিবর্তন দেখা দেয়। অনেকের চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থায় কেবল যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতির ক্ষেত্রে বাধা ছিল না তাই নয় বরং ইসলামী শিক্ষা এবং ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর দিক-নির্দেশনাও ওপর জোর দিয়ে বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নারীর বিকাশ ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করা হয়েছিল। পার্সটুডের এই প্রতিবেদনটি সরকারী এবং নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নগুলো পরীক্ষা করে তৈরি করা হয়েছে।
নারীদের সম্পর্কে ইমাম খোমেনী এবং ইমাম খামেনেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি
ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) সবসময় সমাজে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন: "ইসলামী সমাজে নারীরা স্বাধীন এবং তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস এমনকি সংসদে যেতেও কোনওভাবেই বাধা দেওয়া হয় না।"
ইসলামী বিপ্লবের নেতা ইমাম খামেনেয়ী ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ সালে হাজার হাজার নারী ও মেয়েদের সাথে এক সভায় নারী সংক্রান্ত ইসলামী সনদের একটি নীতির কথাও বলেছিলেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী "আধ্যাত্মিক আন্দোলন, মানবিক উৎকর্ষ এবং একটি সুন্দর জীবন অর্জনে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।" তিনি বলেন: ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে, শারীরিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, পুরুষ ও মহিলাদের উভয়েরই বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ব্যবহারিক, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং অসীম প্রতিভা রয়েছে, যা নারীদের পুরুষদের মতোই সক্ষম করে তোলে। এমনকি শৈল্পিক ক্ষেত্রসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে, জ্ঞান ও বিজ্ঞানে নারীদের প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে:
নারীদের সাক্ষরতার হার বিপ্লবের আগে ১৫% ছিল। বিপ্লবের পর তা থেকে বেড়ে ৮০% এরও বেশি হয়েছে।
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে ৬১% মেয়ে।
ইরানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের ৩৩% এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৪৪% নারী।
স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান নারীদের মানোন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে:
ইরানি নারীদের গড় আয়ু ৭৮ বছরে পৌঁছেছে।
প্রসবকালীন মাতৃ-মৃত্যুর হার লাখপ্রতি ২০ জনে নেমে এসেছে।
ইরানের চিকিৎসা কর্মীদের ৭০% এরও বেশি নারী।
গ্রামীণ ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর ৯৯% এবং শহুরে বাসিন্দাদের সর্বজনীন ১০০% স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।
শিশু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুহার হ্রাসে ইরান বিশ্বব্যাপী র্যাঙ্কিং অর্জন করেছে।
কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা
কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে, ইরানি নারীরা সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন:
৪১% কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং ৮০% গৃহ ব্যবসা লাইসেন্স মহিলাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইরানে ৪,০০০ এরও বেশি জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানি নারীদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
ইরানের ২৪% উদ্ভাবক নারী (বিশ্বব্যাপী নারী উদ্ভাবকদের গড় ১৪%)।
ইরানে, নারী পরিবারের প্রধানদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের মতো সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ
রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাপনাগত ক্ষেত্রেও ইরানি নারীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন:
ব্যবস্থাপনামূলক পদে নারীদের নিয়োগ ২০২০ সালে ১৯,০০০ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪০,০০০-এরও বেশি হয়েছে।
ইরানের ১৪তম সরকারে, মন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি এবং সরকারি মুখপাত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ৭০ জনেরও বেশি নারী অধিষ্ঠিত হয়েছে।
ইরানের সংসদে ১৪ জন নারী এবং শহর ও গ্রাম পরিষদে শত শত নারী সক্রিয়।#
পার্সটুডে
.