কাহভে খানেয়ি পেইন্টিং (কফি ঘরের চিত্রকর্ম)
কাহভে খানেয়ি পেইন্টিং (কফি ঘরের চিত্রকর্ম)
কাহভেহ খানেয়ি পেইন্টিং হলো ইউরোপীয় চিত্রকৌশলগুলোর সাথে সমন্বিত একটি ইরানি চিত্রকর্ম শৈলী (দেওয়াল ও ক্যানভাসে তেল এবং রং)।
প্রায় আশি বছর আগে এই পদ্ধতিটি সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এই শিল্পের বৈশিষ্ট্য হলো এর জনপ্রিয়তা এবং
কোর্ট আর্ট (শিল্পের ফর্ম যা একটি রাজদরবারের মার্জিত স্বাদ বা রীতিনীতিকে চিত্রিত করে) থেকে দূরত্ব।
অজানা শিল্পীরা যাদের টাইলসের উপর আঁকার কিছু অভিজ্ঞতা ছিল, তারা কাহভেহ-খানেয়ির আবহ ও পরিবেশের পাশাপাশি শাহনামে-খানি (শাহনামা থেকে পড়া) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেওয়াল ও
কাপড়ের উপর কাহভে খানেয়ির সহজ এবং সুন্দর দৃশ্য তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন।
যদিও তাদের কোনো অ্যাকাডেমিক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ছিল না,তবুও এই শিল্পীরা ইরানের চিত্রকলার ইতিহাসে একটি স্থান করে নিতে সফল হন। কাহভেহ খানেয়ি পেইন্টিংকে ইরানি চিত্রশিল্পের একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে চিত্রকলার বৈশিষ্ট্যাবলি থেকে দূরত্বের কারণে এটি ভিজ্যুয়াল আর্টের মধ্যে বিবেচিত হতে পারে।
কিন্তু,এই ঐতিহ্যবাহী এবং সত্যিকারের ইরানি শিল্পকলার চিত্রায়নের আগে আমাদেরকে কাভেহ খানেয়ি সম্পর্কে জানা উচিত। এই স্থানগুলো সেগুলোর পুরানো ইতিহাসসহ ইরানিদের পুরানো ঐতিহ্য, চিন্তাভাবনা ও রুচির সংরক্ষক। কাহভে খানে-তে ‘শাহনামা’র বর্ণনাকারীরা (কাহভে খানরা) অনেক উৎসাহের সাথে জাতীয় গল্পগুলো বলেছিলেন। অতএব,দীর্ঘ শতাব্দীর ব্যবধানে,কাহভে খানরা অনেক বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেছেন,যা মানুষের সাথে তাদের ব্যাপক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে পুরানো দিনের কাহভে খানরা আজকের গণমাধ্যমের ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই ভূমিকার যথাযথ নিয়ম-কানুন ও ঐতিহ্য ছিল- যার মধ্যে একটি হলো কাহভে খানেয়ি পেইন্টিং।
চিত্রকলার এই শৈলীতে,কেউ সহজেই ক্ষুদ্র চিত্রকলার (মিনিয়েচার) কিছু উপাদান সনাক্ত করতে পারে। গল্পের বর্ণনার পরমক্ষণে কবিতার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে কাহভেহ খানেয়ির চিত্রগুলো কখনও কখনও মিনিয়েচারের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই জাতীয় শিল্পের ইতিহাস খুব বেশি পুরানো নয়। বর্তমান রূপে এটি আশি বছর আগে থেকে বিদ্যমান। বিদ্যমান পেইন্টিং এবং প্লাস্টার ছাঁচনির্মাণ ইঙ্গিত দেয় যে এই শিল্পের কোনো কোনো রূপ ১৮ এবং ১৯ শতকে বিদ্যমান ছিল। উদাহরণস্বরূপ,ইসফাহানের চেহেল সোতুন প্রাসাদের টাইলসের চিত্রগুলো শাহ আব্বাস দ্বিতীয় এবং নাদেরের অধীনে করা হয়েছে; অবশ্যই বেশিরভাগ বিষয় শাবিহ সাজি (নাটকীয়) এবং তারা ভোজ বা উৎসব দ্বারা অনুপ্রাণিত,অন্যদিকে কাহভেহ খানেয়ির চিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং চিত্রশিল্পীর সামনে কোনো মডেল নেই এবং তিনি যা আঁকেন তা কেবল তার মনে যা উদিত হয় সেটাই।
বর্তমান সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো পর্যবেক্ষণ করে চিত্রকর একটি কাল্পনিক ছবি আঁকেন,উদাহরণস্বরূপ,কারবালার মরুভূমি,আশুরা মহাকাব্য এবং কেয়ামতের দিন এবং কিছু মহাকাব্যিক ছবি যা চিত্রকলার কল্পনা এবং উদ্দীপনাকে নির্দেশ করে।
কাহভে খানেয়ি চিত্রকলা যাকে অনেক লোক কল্পনাপ্রসূত চিত্রকলা বলে,এটি একটি স্বীকৃত নিয়ম-নীতিসহ একটি শিল্প। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিকৃতিগুলোর আসল রূপ ধরে রাখা,এমনভাবে যে এমনকি উৎসব বা মহাকাব্যের দৃশ্যগুলোতেও চিত্রশিল্পী মুখগুলো আঁকতে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। এই ধরনের পেইন্টিংয়ের এই বৈশিষ্ট্যটির কারণে হলো ‘ভাব’ এবং ‘গতি’ সীমাবদ্ধ হওয়া। প্রতিটি পেইন্টিংয়ে মুখগুলো দর্শকদের কাছে চিত্রকরের উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে। এই শৈলীর চিত্রকর একজন আন্তরিক বর্ণনাকারী যিনি সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে নায়ক বা বিরোধীদের প্রতি তার মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। উদাহরণস্বরূপ,রোস্তম ও সোহরাবের ছবিতে রোস্তমের মুখ চিত্রকর্মে একটি বড় স্থান দখল করে এবং এটি রোস্তমের প্রতি চিত্রশিল্পীর ভালোবাসা প্রকাশ করের। একটি ধর্মীয় চিত্রে শত্রু এবং দুষ্ট লোকের মুখ যতটা সম্ভব কুৎসিত করে দেখানো হয়।
কাহভে খানেয়ি পেইন্টিংয়ে বিষয়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই এবং চিত্রকরের হাত তাঁর ইচ্ছামতো আঁকতে স্বাধীন। এ কারণে কোনো চিত্রকর্মকে কখনই অন্য কাজের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা যায়নি। সাধারণভাবে কেউ বিষয়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারে: ধর্মীয়,মহাকাব্য এবং ভোজ ও প্রণয়পূর্ণ চিত্রকর্ম।
কাহভে খানেয়ি পেইন্টিং (কফি ঘরের চিত্রকর্ম) | |
May 23 2022 |